বিলাল হোসেন মাহিনী:
‘আহমেদীয়া মুসলিম জামাত’ তথা কাদিয়ানীরা ‘কদিয়ানী’ ধর্ম-দর্শন প্রচার করে করুক, কিন্তু সেখানে আল্লাহ, নবী-রাসূল, কিতাবুল্লাহ তথা ইসলামকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকলে আর বিরোধ থাকবে না। সমস্যা হলো- তারা (কাদিয়ানী) ‘আহমাদিয়া মুসলিম জামাত’ নামে মুসলিমদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পায়তারা করছে। এবং এই নিয়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারের উচিত ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতময় এই সমস্যার আশু সুরাহা করে জাতিকে মহাসংকট থেকে রক্ষা করা।
আহলে সুন্নাহ ও জামায়াতের দাবি, মির্যা গোলাম আহমদ (কাদিয়ানী) একসময় নিজেকে অন্য নবীদের মতই নবী দাবি করেছিলেন, যা সূরা আহযাবের ৪০নং আয়াতের পরীপন্থী। সূরা আন-নিসার ১৫৭-১৫৮ আয়াত অনুসারে, ইসলামের নবী হযরত ঈসা (আ.)-কে হত্যা করা হয়নি বরং আল্লাহ্ তাকে তার কাছে তুলে নিয়েছেন। সূরা আন-নিসার সেই আয়াত দু’টি হল : ‘আর তাদের একথা বলার কারণে যে, আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি যিনি ছিলেন আল্লাহর রসূল। অথচ তারা না তাঁকে হত্যা করেছে, আর না শুলে চড়িয়েছে, বরং তারা এরূপ ধাঁধায় পতিত হয়েছিল। বস্তুতঃ তারা এ ব্যাপারে নানা রকম কথা বলে, তারা এক্ষেত্রে সন্দেহের মাঝে পড়ে আছে, শুধুমাত্র অনুমান করা ছাড়া তারা এ বিষয়ে কোনো খবরই রাখে না। আর নিশ্চয়ই তাঁকে তারা হত্যা করেনি।’ এছাড়া ১৫৮নং আয়াতে ‘বরং তাঁকে উঠিয়ে নিয়েছেন আল্লাহ তা’আলা নিজের কাছে। আর আল্লাহ হচ্ছেন মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’।
কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের পরিচিতি :
‘আহমদীয়া মুসলিম জামাত’ একটি মুসলিম ধর্মীয় পুনর্জাগরণ অথবা মসিহবাদী আন্দোলন যার উদ্ভব হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ব্রিটিশ ভারতের কাদিয়ান এলাকার মির্যা গোলাম আহমদের জীবন ও শিক্ষার ভিত্তিতে। মির্যা গোলাম আহমদ (১৮৩৫-১৯০৮) দাবী করেছিলেন যে আল্লাহ তাকে আখেরী জামানা প্রতিশ্রুত ও মুসলমানদের প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী ও প্রতিশ্রুত মসীহ (যীশু বা ঈসা) উভয় হিসেবেই প্রেরণ করেছেন ইসলামের চূড়ান্ত বিজয় শান্তিপূর্ণভাবে সংঘটিত করতে এবং অন্যান্য ধর্মীয় মতবাদের প্রতীক্ষিত পরকালতাত্ত্বিক ব্যক্তিত্বদের মূর্ত করতে। নবী মুহাম্মদের বিকল্প নাম ‘আহমদ’ থেকে এই আন্দোলন ও সদস্যগণ (‘আহমদী মুসলিম’ বা সংক্ষেপে ‘আহমদী’) নিজেদের নামকরণ করলেও সাধারণভাবে মুসলিম বিশ্বে তাদের প্রতিষ্ঠাতার জন্মগ্রহণকারী অঞ্চলের নাম কাদিয়ান এর নামে কাদিয়ানী হিসেবেই আখ্যায়িত করা হয়। সবপ্রথম ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আহমাদীয়দের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। সৌদি আরবে পুরো দেশে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
১৮৮৯ সালে পাঞ্জাব অঞ্চলে আহমদীয়া আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা হলেও ‘আহমদীয়া’ নামটি রাখা হয় আরও এক দশক পর। ১৯০০ সালের ৪ নভেম্বরের একটি ইস্তেহারে গোলাম আহমদের ভাষ্যে নামটি নিজের নাম ‘আহমদ’-কে ইঙ্গিত করছে। ২৩ মার্চ ১৮৮৯ তারিখে পঞ্জাবের লুধিয়ানায় তার বাড়িতে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার সহচারী অনুসারীদের কাছ থেকে (মুসলমানদের নেতা মাহদী হিসেবে) ইমামত বা খেলাফতের বায়াত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করেন।
কাদিয়ানীদের বর্তমান অবস্থা :
মুসলমানদের প্রচলিত বিশ্বাসের সাথে আহমদীদের মতবাদের ভিন্নতা থাকায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মূলধারার মুসলমানগণ প্রথম থেকেই আহমদীয়ার বিরোধিতা করে আসছে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান সরকার আহমদীদের অমুসলিম ঘোষণা করে। পাকিস্তানের মত বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোর পক্ষ থেকে আহমদীদের অমুসলিম ঘোষণা করার জন্য আন্দোলন হতে থাকে। বিভিন্ন সময়ে আহমদী মুসলমানরা বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে। আবার কখনো কখনো মূলধারার মুসলিমরাও ত্রিমূখী (কাদিয়ানী-মুসলিম-পুলিশ) সংঘর্ষে হতাহত হয়।
আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট : কাদিয়ানীরা কাদিয়ানী ধর্মের নামে যা মন চায় করুক। কিন্তু মুসলমান নাম নিয়ে, নবী রসুলদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। অন্তত ততদিন; যতদিন পৃথিবীতে একজন মুসলমানের শরীরে এক ফোঁটা রক্তও অবশিষ্ট আছে। এদের ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে এদেরকে কাফির ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি।
বিলাল হোসেন মাহিনী
পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কমিল মাদরাস, যশোর। ০১৮৪৩-৯০৪৭৯০