স্পোর্টস রিপোর্টার: গত ম্যাচেই সিরিজ জয়টা নিশ্চিত করতে পারতো বাংলাদেশ, সেই সম্ভাবনার প্রায় সিংহভাগ কাজই সেরে ফেলেছিলেন ব্যাটাররা। তবে বোলারদের সামনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি। সেদিন রেকর্ড রান করেও ফলাফল ভাগাভাগি করে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল টাইগারদের। সেই সঙ্গে সিরিজ জয়ের অপেক্ষাটাও খানিকটা বেড়েছিল। একটু দীর্ঘই হয়েছে বৈকি! বৃষ্টি একটা বাড়তি সুযোগ তৈরি করে দিলেও সেটা কাজে লাগাতে পারেনি আইরিশরা। ডান-হাতি পেসার হাসান মাহমুদের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতলো স্বাগতিক বাংলাদেশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ডকে। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এই প্রথম ১০ উইকেটে ম্যাচ জেেয়র রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ। এর আগে পাঁচবার ৯ উইকেটে ম্যাচ জয়ের কীর্তি আছে টাইগারদের।
হাসানের বোলিং তোপে প্রথমে ব্যাট করে ২৮ দশমিক ১ ওভারে ১০১ রানে গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। ৩২ রানে ৫ উইকেট নেন হাসান। জবাবে ১৩ দশমিক ১ ওভারে বিনা উইকেটে ১০২ রান তুলে ২২১ বল বাকী রেখে বাংলাদেশের ম্যাচ ও সিরিজ জয় নিশ্চিত করেন দুই ওপেনার অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। লিটন ৫০ ও তামিম ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন।
বৃষ্টির কারণে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নির্ধারিত সময়ের আধা ঘন্টা পর শুরু হওয়া ম্যাচে টস হেরে প্রথমে বোলিংয়ে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে সাবধানী শুরু ছিলো সফরকারী আয়ারল্যান্ডের। ইনিংসের পঞ্চম ও নিজের তৃতীয় ওভারে আয়ারল্যান্ড শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন পেসার হাসান। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে ৮ রানে আউট হন স্টেফেন ডোহেনি।
আয়ারল্যান্ডের আরেক ওপেনার পল স্টার্লিংকেও শিকার করেন হাসান। ইনিংসের নবম ও নিজের পঞ্চম ওভারে স্টার্লিংকে ৭ রানে লেগ বিফোর আউট করেন তিনি। একই ওভারের চতুর্থ বলে রিভিউর সহায়তায় লেগ বিফোরে হ্যারি টেক্টরকে খালি হাতে বিদায় করেন হাসান।
হাসানের পেস তোপে ২২ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে আইরিশরা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবির্নিকে ৬ রানে থামান পেসার তাসকিন আহমেদ। স্লিপে বলবির্নির ক্যাচ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। হাসান-তাসকিনের তোপে ১০ ওভার শেষে আইরিশদের রান ৪ উইকেটে ২৭।
এ অবস্থায় জুটি গড়ার চেষ্টা করেন লরকান টাকার-কার্টিস ক্যাম্পার। তাতে সফলও হন তারা। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৫৭ বলে ৪২ রান যোগ করেন তারা। ১৯তম ওভারে চতুর্থবারের মত আক্রমণে এসে জোড়া আঘাতে হানেন পেসার এবাদত হোসেন। ওভারের শেষ দুই বলে টাকারকে ২৮ রানে ও নতুন ব্যাটার জর্জ ডকরেলকে খালি হাতে শিকার করেন এবাদত। এতে ৬৮ রানে ৬ উইকেটে পরিণত হয় আয়ারল্যান্ড।
এবাদতের পর ইনিংসের ২২ ও নিজের সপ্তম ওভারে আয়ারল্যান্ড শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন তাসকিন। প্রথম বলে অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনকে ১ ও তৃতীয় ডেলিভারিতে মার্ক অ্যাডায়ারকে শূন্যতে বিদায় করেন তাসকিন। এমন অবস্থায় ৭৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ১শ’র নীচে গুটিয়ে যাবার শংকায় পড়ে আইরিশরা। তবে শেষ ২ উইকেটে ২২ রান তুলে কোন মতে ১শ’ রান পার করতে সক্ষম হয় সফরকারীরা।
আয়ারল্যান্ডের নবম ব্যাটার হিসেবে ক্যাম্পারকে শিকার করেন হাসান। ৪টি চারে ৪৮ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন ক্যাম্পার। আর শেষ ব্যাটার গ্রাহাম হুমকে ৩ রানে লেগ বিফোর আউট করে আয়ারল্যান্ডকে ১০১ রানে গুটিয়ে দেন হাসান। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বনি¤œ দলীয় রান আইরিশদের।
বল হাতে ইনিংসে ৮ দশমিক ১ ওভার বল করে ৩২ রানে ৫ উইকেট নেন হাসান। ৮ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিলেন ২৩ বছর বয়সী হাসান। তাসকিন ২৬ রানে ৩টি এবাদত ২৯ রানে ২ উইকেট নেন।
সিরিজ জিততে ১০১ রানের সহজ টার্গেটে মারমুখী মেজাজে ব্যাটিং শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ও লিটন। তৃতীয় ওভারে তামিমের তিনটি চারে ১৩ রান পায় বাংলাদেশ। সপ্তম ওভারের তামিমের প্রথম ছক্কায় ১১ রান পায় টাইগাররা। অষ্টম ওভারে লিটনের দু’টি চারে ১৫ রান আসে। পরের ওভারে লিটন আরও দু’টি চার মারেন। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান বিনা উইকেটে ৮১।
১৩তম ওভারে পরপর দু’টি চার মেরে ৩৭ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নবম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে ১ রান নিয়ে ২২১ বল বাকী রেখে বাংলাদেশের ম্যাচ ও সিরিজ জয়ের স্বাদ পাইয়ে দেন তামিম। সবচেয়ে বেশি বল হাতে রেখে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় দ্রুততম জয়। এর আগে ২২৯ বল বাকী রেখে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড আছে টাইগারদের।
৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪১ বলে অপরাজিত ৪১ রান করেন তামিম। ৩৮ বলে অনবদ্য ৫০ রান করেন লিটন। তার ইনিংসে ১০টি চার ছিলো।
ওয়ানডে শেষে আগামী ২৭ মার্চ থেকে চট্টগ্রামের মাটিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করবে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড।
আয়ারল্যান্ড ইনিংস:
ডোহেনি ক মুশফিক ব হাসান ৮
স্টার্লিং এলবিডব্লু ব হাসান ৭
বলবির্নি ক শান্ত ব তাসকিন ৬
টেক্টর এলবিডব্লু ব হাসান ০
টাকার এলবিডব্লু ব এবাদত ২৮
ক্যাম্পার ক তাসকিন ব হাসান ৩৬
ডকরেল বোল্ড ব এবাদত ০
ম্যাকব্রিন ক নাসুম ব তাসকিন ১
অ্যাডায়ার বোল্ড ব তাসকিন ০
হুম এলবিডব্লু ব হাসান ৩
হামফ্রেস অপরাজিত ৪
অতিরিক্ত (ও-৮) ৮
মোট (অলআউট, ২৮.১ ওভার) ১০১
উইকেট পতন : ১/১২ (ডোহেনি), ২/২২ (স্টার্লিং), ৩/২২ (টেক্টর), ৪/২৬ (বলবির্নি), ৫/৬৮ (টাকার), ৬/৬৮ (ডকরেল), ৭/৭৯ (ম্যাকব্রিন), ৮/৭৯ (অ্যাডায়ার), ৯/৯৬ (ক্যাম্পার), ১০/১০১ (হুম)।
বাংলাদেশ বোলিং :
হাসান : ৮.১-১-৩২-৫ (ও-১),
তাসকিন : ১০-১-২৬-৩ (ও-১),
এবাদত : ৬-০-২৯-২ (ও-২),
নাসুম : ৩-০-১১-০,
মিরাজ : ১-০-৩-০।
বাংলাদেশ ব্যাটিং ইনিংস :
তামিম অপরাজিত ৪১
লিটন অপরাজিত ৫০
অতিরিক্ত (লে বা-১ ও-১০) ১১
মোট (বিনা উইকেট, ১৩.১ ওভার) ১০২
আয়ারল্যান্ড বোলিং :
অ্যাডায়ার : ৩-০-২৯-০ (ও-৩),
হুম : ৩-০-১৫-০,
হামফ্রেস : ৪-০-৩৬-০ (ও-১),
ক্যাম্পার : ৩.১-১-২১-০ (ও-২)।
ফল : বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতলো বাংলাদেশ।