মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ২০০৮ সালে তালা উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের আবদুস সবুরের মেয়ে শিউলি খাতুনের সঙ্গে একই উপজেলার চাঁদকাটি গ্রামের আমজাদ বিশ্বাসের ছেলে মোস্তফা বিশ্বাসের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মোস্তফা বিশ্বাসকে যৌতুক হিসেবে ২০ হাজার টাকার মালামাল দেওয়া হয়। বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই মোস্তাফা ও তাঁর বাবা আমজাদ বিশ্বাস বাপের বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা ও তিন ভরি সোনার গয়না আনার জন্য শিউলিকে চাপ সৃষ্টি করেন। শিউলি বিষয়টি তাঁর বাবাকে জানান। বাপের বাড়ি থেকে টাকা ও সোনার গয়না আনতে না পারায় শিউলিকে নির্যাতন করতেন স্বামী ও শ্বশুর। একপর্যায়ে শিউলি অসুস্থ পড়লে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যান আবদুস সবুর।
মামলার বিবরণে আরও জানা যায়, ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই ভোরে মোস্তফা তাঁর বাবা আমজাদ বিশ্বাসকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যান। এরপর আবদুস সবুর জামাতা, বেয়াই ও মেয়েকে বাড়িতে রেখে একজনের কাছ থেকে টাকা আনতে যান। ওই দিন সকাল আটটার দিকে ভাই আবদুল গফুর মুঠোফোনে আবদুস সবুরকে জানান শিউলিকে ঘরের মধ্যে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় মোস্তফাকে আটক করেছেন স্থানীয় লোকজন। পুলিশ মোস্তফাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়।
তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে শিউলিকে শ্বাস রোধ করে হত্যার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় আবদুস সবুর বাদী হয়ে জামাতা মোস্তফা বিশ্বাস ও বেয়াই আমজাদ বিশ্বাসের নাম উল্লেখ করে ২০০৯ সালের ৪ আগস্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। মোস্তফা বিশ্বাসকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তালা থানার সে সময়ের উপপরিদর্শক লুৎফর রহমান ২০০৯ সালের ১৬ অক্টোবর এজাহারভুক্ত বাবা ও ছেলের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার নথি ও ১০ জন সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে আসামি মোস্তফা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে স্ত্রী শিউলি খাতুনকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তাঁকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আমজাদ বিশ্বাসকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার পর আসামি মোস্তফা বিশ্বাস চিৎকার করে বলেন, তিনি ন্যায়বিচার পাননি। ন্যায়বিচার পেতে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন মোস্তফা বিশ্বাসের চাচি হাসিনা বেগম ও বোন আসমা খাতুন।
আসামিপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন বশির আহম্মেদ। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি এস এম জহুরুল হায়দার।