স্বাধীনতা দিবসে দ্রব্যমূল্য নিয়ে করা একটি সংবাদের জের ধরে প্রথম আলো পত্রিকার এক সাংবাদিককে মধ্যরাতে সাদা পোশাকের একদল ব্যক্তি দিয়ে ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস দৈনিক প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।
প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ এ ঘটনা নিশ্চিত করে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আমাদের সাভার প্রতিনিধিকে গতকাল মধ্যরাতে সিআইডি পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে এখনো আমরা তার কোনো খোঁজ পাইনি। এ বিষয়ে আমরা আইনানুগভাবে যেসব পদক্ষেপ নেয়ার সেভাবেই পদক্ষেপ নেব।’
তবে সিআইডি বা স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, এ আটকের বিষয়টি তাদের জানা নেই।
ওই সময় জাহাঙ্গীরনগরের আমবাগান এলাকায় শামসের বাসায় ছিলেন ঢাকার আরেকটি পত্রিকার আরেকজন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম সাব্বির।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, রাত ৪টার দিকে তিনটি মাইক্রোবাস নিয়ে সাদা পোশাকের একদল লোক বাসা থেকে শামসুজ্জামান শামসকে ধরে নিয়ে যায়। তারা তার ল্যাপটপ, দুটি মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ, কম্পিউটারের হার্ডডিস্কও নিয়ে যায়। সেই সময় সাব্বিরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা নিজেদের সিআইডির টিম বলে পরিচয় দিয়ে জানিয়েছে যে তারা ঢাকা থেকে এসেছে।
প্রথম দফায় তাকে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে ওই দলটি আবার বাসায় ফিরে আসে। এরপর তারা বাসায় এসে একটি জব্দ তালিকায় সাব্বির ও বাড়িওয়ালার স্বাক্ষর নিয়ে যায়। এরপর থেকে শামসুজ্জামান শামসের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।
তবে দ্বিতীয়বার বাসায় যাওয়ার সময় আশুলিয়া থানার একজন উপ-পরিদর্শক ওই টিমের সাথে ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোন করে পাওয়া যায়নি।
সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম সাব্বির বলেন, ‘আটকের সময় সাদা পোশাকের ব্যক্তিরা বলেছেন, রাষ্ট্রবিরোধী মাছ-ভাতের সংবাদের কারণে তাকে আটক করা হয়েছে।’
২৬ মার্চ দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি সংবাদে একজন দিনমজুরের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছিল, সেখানে উদ্বৃত করা হয়, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’
ওই সংবাদের সাথে একটি শিশুর ছবি ছিল, যে গ্রিলের ফাঁকা দিয়ে স্মৃতিসৌধের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হলে প্রথম আলো ওই খবরটি সংশোধন করে।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে বলা হয়, প্রথমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ও ব্যবহার করা ছবির মধ্যে অসঙ্গতি থাকায় ছবিটি তুলে নেয়া হয়েছে এবং শিরোনাম সংশোধন করা হয়েছে।
ঢাকায় সিআইডি সদর দফতরে যোগাযোগ করা হলে এই গ্রেফতার বা আটকের বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেননি কর্মকর্তারা।
সূত্র : বিবিসি