রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে রমজানের দ্বিতীয় জুমা শেষে একটি ইসলামি দলের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার পল্টন, বিজয়নগর ও নয়াপল্টন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে তিনজনকে।
ধর্মীয় কাজে বাধাদান, আটক ও রিমান্ডের প্রতিবাদে ‘ইসলামি কানুন বাস্তবায়ন কমিটি’ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত।
জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ‘ইসলামি কানুন বাস্তবায়ন কমিটি’ নামের একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হন। পুলিশ এতে বাধা দেয়। বিক্ষোভকারীরা তা উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যান। এ সময় পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিক্ষোভকারীরাও পুলিশকে উদ্দেশ করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন।
বিক্ষোভকারীরা জানান, গত ২৭ মার্চ রাতে তারাবিহর নামাজ আদায় করার সময় গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারসংলগ্ন একটি ইসলামি সেন্টারে পুলিশ অভিযান চালায়। সেখান থেকে পুলিশ ৩ জন হাফেজ, দুজন নারী ও একজন শিশুসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে। মূলত সেই ঘটনার প্রতিবাদেই বিক্ষোভ করেন তারা। কর্মসূচি থেকে অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সব নাগরিকের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিতেরও দাবি জানানো হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, জুমার দিন বায়তুল মোকাররমে কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো কর্মসূচি ছিল না। তারপরও স্বাভাবিক নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের কিছু পুলিশ সদস্য সেখানে মোতায়েন ছিল। হঠাৎ করে ইসলামি কানুন বাস্তবায়ন কমিটি নামে একটি সংগঠন বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে নামাজ-পরবর্তী অবস্থান নেয় এবং স্লোগান দিয়ে ঝটিকা মিছিল বের করে। তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তা না মেনে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অ্যাকশনে গিয়েছি। তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছি। তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ইসলামি কানুন বাস্তবায়ন কমিটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। তবে নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সংগঠনের পদ উল্লেখ করে বেশ কয়েকজনকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।
সেখান থেকে জানা যায়, ইসলামি কানুন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পির মাওলানা আবু তাহের জিহাদি আল কাসেম। তার সভাপতিত্বে ও জনসেবা আন্দোলনের আমির মুফতি ফখরুল ইসলামের পরিচালনায় সমাবেশ হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ইসলামি কানুন বাস্তবায়ন কমিটির মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ আশরাফী, মুসলিম জনতা ঐক্য পরিষদের আমির মাওলানা আজিজুর রহমান আজিজ, মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানি, ইমাম-খতিব ঐক্য পরিষদের আমির মুফতি মাসুদুর রহমান, পিরে কামেল মাওলানা সালেহ সিদ্দিকী, মুফতি আব্দুল কুদ্দুস প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মীয়, সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার। কিছু অতি উৎসাহী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এই কাজে বাধা দিচ্ছে। গত ২৭ মার্চ গুলশানের যে ইসলামিক সেন্টারটি থেকে নারী, শিশু ও ইমামসহ যাদের আটক করা হয়েছে, সেটি দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ স্থানীয় বাসিন্দারা পরিচালনা করে আসছেন। তারাবিহর নামাজ আদায়ের সময় এই ১৭ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডের নামে সরকার গণমানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের মারাÍক লঙ্ঘন করেছে। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার করে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। না হলে জনতা রাজপথে নেমে আসবে।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় ডিএমপির মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার গোলাম রুহানী বলেন, বায়তুল মোকাররমের ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অন্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।