হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে এক গৃহবধূকে (৩০) বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপ করে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার রাতে একটি গ্রাম্য সালিসে এ ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার সকালে নির্যাতনের শিকার ওই নারী স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- হাফেজ নুরুল ইসলাম (৩০), স্থানীয় বাসিন্দা বায়েজিদ হোসেন (৭০), আকবর আলী (৬৯) ও আতিক উল্লাহ (৫০)। ভুক্তভোগী নারী ও গ্রেফতার ব্যক্তিরা সবাই একই গ্রামের বাসিন্দা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই চারজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে রাতে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুল হক।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভুক্তভোগী নারীর স্বামী ওমান প্রবাসী। সালিশ থেকে ওই নারীকে এক মাস ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয় এবং বলা হয়, ঘর থেকে বের হলে শাস্তি আরও ভয়াবহ হবে। ভুক্তভোগী নারী ভয়ে ঘরে আবদ্ধ থেকে চিকিৎসা নেন।
এদিকে স্ত্রীর নির্যাতনের খবর পেয়ে ওমান প্রবাসী স্বামী বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে আসেন। নির্যাতনের বিষয়ে বিচারের জন্য তিনি আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে গ্রামবাসী ওই প্রবাসীকে বাধা দেন।
ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বলেন, অপরাধ যদি হয়, নারী-পুরুষ উভয়ই করেছেন। গ্রামবাসী শুধু নারীর বিচার করেছেন। অথচ যিনি ভিডিও ছড়িয়ে আমার স্ত্রীকে হেয় করেছেন, তার বিচার কে করবে?
নির্যাতনের শিকার নারী বলেন, পূর্বপরিচিত হওয়ার সুবাদে বিভিন্ন সময় তাদের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন ওই অটোরিকশাচালক। তিনি বিভিন্ন সময় তাকে (ভুক্তভোগী) প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করতেন। গোপনে ওই ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত মুহূর্তের কয়েকটি ভিডিও করেন কোনো এক সময়। সেই ভিডিও দেখিয়ে প্রচার করেছেন, তার সঙ্গে ওই ব্যক্তির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার কারণেই তিনি সমাজে অভিযুক্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে লজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। ঘটনার খবর পেয়ে তার স্বামী দ্রুত বাড়িতে আসেন। গ্রামবাসী তাকেও ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওই নারী পরকীয়ায় জড়িয়ে অপরাধ করেছেন মর্মে শাস্তি হিসেবে ৮২টি বেত্রাঘাত ও ৮০টি পাথর নিক্ষেপের
ওসি মো. রাশেদুল হক জানান জানান, ওই নারীর শরীরে বেত্রাঘাত করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছে কি না এবং কয়টি বেত্রাঘাত করা হয় তা জানা যায়নি। গ্রেফতার চারজনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া ওই অটোরিকশাচালক এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।