১৫ বছরে দুই শতাধিক চুরি যাদের টার্গেট শুধু স্বর্ণ

গত ১৫ বছরে দুই শতাধিক  চুরি করেছে জুলহাস এবং বিল্লাল হোসেন নামে দুই ভাই। তারা টাকা এবং স্বর্ণালংকার ছাড়া অন্যকিছু চুরি করে না। চুরির কাজে তারা এতটাই দক্ষ যে সম্প্রতি মিরপুরের একটি বাসায় ৩০ মিনিটের মধ্যে ২৪ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার চুরি করে পালিয়েছে। মিরপুর থানায় হওয়া মামলার তদন্ত করতে গিয়ে গ্রেপ্তার শেষে জিজ্ঞাসাবাদে দুই ভাইয়ের দুর্ধর্ষ চুরির বিষয়টি সামনে চলে আসে। তদন্ত সূত্র জানায়, চুরির অভিযোগে জুলহাস ও বিল্লাল হোসেন নামে দুই ভাইকে সম্প্রতি সাভার ও চাঁদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে স্বর্ণের এক জোড়া হাতের চুরি, এক জোড়া কানের দুল, একটি চেইন এবং গলিত স্বর্ণসহ মোট ৮ ভরি ১০ আনা স্বর্ণ ও চুরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি মিরপুর মডেল থানাধীন আহাম্মেদনগরে সিরাজুম মুনীরা নামে এক ভুক্তভোগীর বাসার তালা ভেঙে আনুমানিক ২৪ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরি হয়। সিসিটিভি’র ভিডিও ফুটেজ দেখে জুলহাস বিল্লাল ও তার ভাইকে শনাক্ত করে পুলিশ। পরে তথ্য-প্রযুক্তির সহযোগিতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাভার গেণ্ডা বাসস্ট্যান্ড থেকে বিল্লাল হোসেন এবং তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদপুরের মতলব থেকে জুলহাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া চোরাই স্বর্ণ রাখার অভিযোগে লিটন বর্মণ নামে এক স্বর্ণের দোকানদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সূত্র জানায়, ভোলার লালমোহন উপজেলার আবু কালামের ছেলে জুলহাস ও বিল্লাল। ২০০৮ সাল অর্থাৎ ছোটবেলা থেকেই তারা চুরি শুরু করে। টানা ১৫ বছর ধরে চুরি করছে তারা। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, এই ১৫ বছরে তারা প্রায় দুই শতাধিক চুরি করেছে। চুরি করার পরপরই তারা অন্য জেলায় আত্মগোপনে চলে যায়। ফলে অধিকাংশ ঘটনায় তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। এতগুলো চুরি করলেও তারা ধরা পড়ে মাত্র ১০ বার। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩টি মামলা হয়েছে। জুলহাস ও বিল্লাল অন্য চোরদের থেকে অনেকটাই আলাদা। সহজেই বহনযোগ্য হওয়ায় তারা শুধু স্বর্ণ ও নগদ টাকা চুরি করে। রাতের বেলা চুরি করলেও ব্যতিক্রম এই দুই ভাই। চুরির উপযুক্ত সময় হিসেবে দিনের আলোকে বেছে নেয়। দিনের বেলা সাধারণত যে সময়টাতে বাচ্চারা স্কুলে থাকে সেই সময়টাকেই তারা চুরির জন্য বেছে নেয়। এ সময় ঘরের পুরুষ সদস্যরা অফিসে থাকে। আর মহিলারা বাচ্চাকে আনতে স্কুলে যান। ফলে বাসা পুরো ফাঁকা থাকে। গাড়ি চালানোর সুবাদে আগে থেকেই নির্ধারিত বাসা টার্গেট করে বিল্লাল। পরে জুলহাস ও তার ভাই এসে সেই বাসায় চুরি করে। দুই ভাইয়ের মধ্যে জুলহাস বড়, বিল্লাল ছোট। বয়সে ছোট হলেও চুরিতে বড় বিল্লাল! মাত্র ১১ বছর বয়স থেকেই চুরি শুরু করে বিল্লাল। তখনও শুধু স্বর্ণ আর টাকা চুরি করতো। পরে তার কাছ থেকেই চুরি শেখে জুলহাস। দুই ভাই মিলে চুরি করলে বিল্লাল সবসময়ই বাসা টার্গেট করে এবং পাহারায় থাকে। আর চুরি করে জুলহাস। সম্প্রতি মিরপুরের বাসায় চুরির ঘটনায় প্রথমে তারা দুই ভাই বাসার তৃতীয় তলায় উঠে। এরপর প্রথমে ঘরের দরজার তালা ভেঙে ভেতরে থাকা আলমারির তালা ভাঙে। ওয়্যারড্রোবের লক খোলার পর ২৪ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরি করে পালায় তারা। এই চাঞ্চল্যকর চুরি করতে জুলহাসের সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট! জুলহাসের শ্বশুর মো. আলাউদ্দিন থাকেন চাঁদপুরের মতলবে। প্রতিবার চুরি করার পরপরই শ্বশুর বাড়ি চলে যায় জুলহাস। জামাইয়ের চুরির কথা শ্বশুর জানলেও এতে বাধা না দিয়ে উল্টো সহযোগিতা করেন! জামাই জুলহাস স্বর্ণ চুরি করে শ্বশুরের হাতেই তুলে দেয় এসব চোরাই মালামাল। আর শ্বশুর সেই স্বর্ণ বিক্রি করেন! মিরপুর থেকে চুরি করা স্বর্ণও জুলহাস তার শ্বশুরের হাতেই তুলে দেয়। শ্বশুর সেই স্বর্ণ চাঁদপুর উত্তর মতলবের ছেঙ্গারচর বাজারের একটি স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করেন। এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন মানবজমিনকে বলেন, জুলহাস এবং বিল্লাল হোসেন গত ১৫ বছরে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ২ শতাধিক চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। সম্প্রতি মিরপুরের এক বাসিন্দার বাসা থেকে ২৪ ভরি স্বর্ণ ও নগদ টাকা চুরি করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা হলে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার শেষে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানায়।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।