মহসিন রশিদ। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী। বাংলাদেশ পুনর্গঠন আন্দোলনের চেয়ারম্যান। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাধারণ আইনজীবীদের এক তলবি সভায় মহসিন রশিদকে সুপ্রিম কোর্ট বার এসাসিয়েশনের এডহক কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। তার সঙ্গে কথা হয় জাতীয় ও সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন নিয়ে। তিনি জাতীয় ও সুপ্রিম কোর্ট বারের চলমান নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে তিনি মনে করেন। একইভাবে সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে দলীয় প্যানেল পদ্ধতির নির্বাচন পরিহার করা গেলে চলমান সংকটের সমাধান সম্ভব বলেও তিনি মনে করেন।
সিনিয়র আইনজীবী মহসিন রশিদ সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন নিয়ে বলেন, গত কয়েকটি নির্বাচন বাদ দিলে বারের সব নির্বাচন ছিলো উৎসব মুখর। এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীর চেম্বারে গিয়ে ভোট চাইতেন। গল্প করতেন।
বিজ্ঞাপন
খাওয়া দাওয়া হতো। কেউ হেরে গেলেও একজন আরেকজনের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করতেন। এমন কি পরাজিত প্রার্থী জয়ী প্রার্থীকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিতেন। আবার জয়ী প্রার্থী পরাজিত প্রার্থীর চেম্বারে মিষ্টি নিয়ে যেতেন। মাসব্যাপী সুপ্রিম কোর্ট বারে উৎসব বিরাজ করতো।
১৯৯৬ সালের দিকে বারের নির্বাচনে শুরু হয় দলীয় প্যানেল ভিত্তিক নির্বাচন। তবে দলীয় প্যানেলের নির্বাচনও উৎসব মুখর ছিলো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে সংঘাত, সংঘর্ষ । যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। রাজনৈতিক দলগুলো এটাকে জাতীয় নির্বাচনের মতো গুলিয়ে ফেলছেন। দুই দলই বারের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। পেশাজীবী একটি সংগঠনে কেনো এমন প্রতিযোগিতা থাকবে? এই নির্বাচনে হারলে কি সরকার পড়ে যাবে? এই নির্বাচনে জিতলেই কি, না জিতলেই কি? এটা কোনো বিষয়ই না।
বারের সদ্য নির্বাচন নিয়ে মহসিন রশিদ বলেন, এবার যে নির্বাচন হলো, তাতে কোনো সাধারণ আইনজীবী অংশগ্রহণ করেনি। শুধু মাত্র একটি দলের সমর্থক আইনজীবীরা অংশ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থক অনেক প্রবীণ আইনজীবীও এমন নির্বাচন চান নি। যে কারণে সাধারণ আইনজীবীরা এক তলবি সভার মাধ্যমে নতুন করে বারের ভোট করার জন্য এডহক কমিটি করেছেন। আর ওই তলবি সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম। আমাদের এই এডহক কমিটিকে সবাই সমর্থন করছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের অনেকেই আমাদেরকে সমর্থন করছেন। কিন্তু তারা কৌশলগত কারণে আমাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে মহসিন রশিদ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বলেন, সরকার চাইলে তত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিতেও ফিরে যাওয়া সম্ভব। পার্লামেন্ট বিষয়টি ফেরাতে পারে। তারা তো সংসদে টু থার্ড মেজরিটি আছেনই। খালি আপনার গুডউইল থাকতে হবে। খোলা মন নিয়ে কাজ করলে সবই সম্ভব। সব কিছুর সমাধান আছে। যেখানেই সমস্যা, সেখানেই সমাধান। এমন কোনো জিনিস নাই যেখানে এর সমাধান নেই। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের জন্যই ভালো। তবে তা তিন মাসের জন্য নয়, এক দুই বছরের জন্য হতে হবে। আর এই সরকারটা যদি এক দুই বছরের জন্য আসে তাহলে শাসক দলের জন্য খুবই ভালো হবে। এক্ষেত্রে তারা প্রটেকশনটা পেয়ে যাবে। এই যে কিছু লোকজন চুরিচামারি…যেসব কথা শোনা যাচ্ছে এইগুলি মানুষের মনে থাকবে না। কেননা হিউম্যান মেমরি অনেকটা শর্ট। এটা অনেকটা মুছে যাবে। এতে করে তারা (আওয়ামী লীগ) প্রটেকশনটা পেয়ে যাবে। আর যদি যে কোনো সিস্টেমে একটা ইলেকশন করেন, আর তখন যদি হেরে যান….। তবে এইবার কিন্তু সহজ হবে না। যেভাবে এর আগে নির্বাচন হয়েছে, এবার সেভাবে সম্ভব হবে না।