ক্রাইমবাতা ডেস্করিপোট: ট্রলারটি থেকে উদ্ধার ১০টি লাশ পচে বিকৃত হয়ে গেছে। এর মধ্যে ছয়টি লাশের হাত-পা বাঁধা ছিল। লাশগুলো পচে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় গণনা করতে সমস্যা হচ্ছিল বলে জানান কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, কক্সবাজারের স্থানীয় জেলেরা বঙ্গোপসাগরের গভীর এলাকায় ওই ফিশিং বোটটি দেখতে পায়। তারা শনিবার ঈদের দিন রাতে ফিশিং ট্রলারটি টেনে নাজিরা টেক পয়েন্টে নিয়ে আসে। সেখানে এনে ট্রলারের ভেতর তারা গলিত বেশ কয়েকটি মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
তবে স্থানীয় স্থানীয় লোকজন জানান, গভীর সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া ট্রলারটি আরেকটি মাছ ধরার ট্রলারে আটকে পড়েছিল। ওই ট্রলারের জেলেরা রশি দিয়ে ডুবন্ত ট্রলারটি টেনে মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেলে নিয়ে আসেন। রোববার দুপুর দেড়টার দিকে ডুবন্ত ট্রলারটি কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক (বিমানবন্দরের পশ্চিমে) চ্যানেলে পৌঁছালে মৃত ব্যক্তির হাত-পা ভেসে উঠতে দেখা যায়। তাতে ভয় পেয়ে টেনে আনা ট্রলারের জেলেরা সটকে পড়েন। পরে পুলিশকে জানান স্থানীয় লোকজন।
ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলেদের থেকে খবর পেয়ে শনিবার রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে বোটটি দেখেন এবং সেখানে কয়েকটি মরদেহ শনাক্ত করেন। রবিবার সকালের দিকে ফায়ার সার্ভিসের দলকে সঙ্গে নিয়ে এসব মরদেহ উদ্ধারে যায় পুলিশ। সকাল থেকে চেষ্টা করে মরদেহবাহী ফিশিং ট্রলারটি উপকূলের কাছে এনে দুপুরের পর থেকে মৃতদেহগুলো উদ্ধার শুরু করে।
তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া লাশগুলোর সবকটি বিকৃত হয়ে গেছে ও পচে গেছে। এ জন্য গণনা করতে সমস্যা হচ্ছিল। প্রথমে ১১ জনের মরদেহ মনে হলেও উদ্ধারের পরে ১০ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ছয়টি মরদেহ হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে। মরদেহগুলো থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
ওসি আরও জানান, মাছ ধরার ট্রলারের কোল্ডস্টোরেজের ভিতরে থাকা মৃতদেহগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিগুলো উদ্ধারে কাজ করছে পুলিশ উপায় সার্ভিস।
কী কারণে এ ঘটনা, তা বিস্তারিত জানাতে পারেনি ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের এই কর্মকর্তা। তবে তিনি বলছেন, মৃতদেহগুলো উদ্ধার করার পর বিস্তারিত জানানো হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ১৫-১৬ দিন আগে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া পয়েন্টে ডাকাতি করতে গিয়ে একদল জলদস্যু জেলেদের হামলার শিকার হয়েছিল বলে জানা গিয়েছিল। হামলায় জলদস্যুরা মারা পড়েছিল বলে খবর বেরিয়েছিল। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত ওই দস্যুবাহিনীর ট্রলারটির হদিস পাওয়া যায়নি। সেসব জলদস্যুবাহিনীর সদস্যরা মহেশখালী চকরিয়া ও বাঁশখালীর বলেও জানা গিয়েছিল।
ধারণা করা হচ্ছে, নাজিরটেক পয়েন্টে ভেসে আসা ট্রলারটি সেই বোট হতে পারে। তাই নাজিরটেক ট্রলার আসার খবর পেয়ে নিখোঁজদের স্বজনরা সকাল থেকে নাজিরটেক এসে ভিড় করছে। ওই ট্রলারের ভেতর ১৪-১৫টি পর্যন্ত মরদেহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কেউ আবার বলছে, কমপক্ষে ১৫ দিন আগে গভীর সমুদ্রে জলদস্যুরা ট্রলারটির মাছ–জাল লুট করে জেলেদের হাত–পা বেঁধে কুটিরে (ট্রলারে মাছ ও বরফ সংরক্ষণের কক্ষ) আটকে রেখে ট্রলারটি সাগরে ডুবিয়ে দিতে পারে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, গভীর সাগরে ডুবিয়ে দেওয়া ট্রলারটি আরেকটি মাছ ধরার ট্রলারে আটকে পড়েছিল। ওই ট্রলারের জেলেরা রশি দিয়ে ডুবন্ত ট্রলারটি টেনে মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেলে নিয়ে আসেন। আজ বেলা দেড়টার দিকে ডুবন্ত ট্রলারটি কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক (বিমানবন্দরের পশ্চিমে) চ্যানেলে পৌঁছালে মৃত ব্যক্তির হাত-পা ভেসে উঠতে দেখা যায়। তাতে ভয় পেয়ে টেনে আনা ট্রলারের জেলেরা সটকে পড়েন। স্থানীয় লোকজন লাশবোঝাই ট্রলার ভেসে আসার খবর জানালে বেলা দুইটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাঁরা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন।
উদ্ধারকাজে নিয়োজিত পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, লাশের অবস্থা (হাত-পা বাঁধা) দেখে মনে হচ্ছে, ঘটনাটি জলদস্যুরা ঘটিয়েছে। ট্রলার ও নিহত জেলেরা কক্সবাজারের বাইরের জেলার হতে পারে। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
স্থানীয় নুনিয়াছটার ট্রলারমালিক গিয়াস উদ্দিন জানান, এ ধরনের একটি ট্রলারে কমপক্ষে ২০ জন জেলে থাকেন। ট্রলারের কুটির থেকে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করলেও ভেতরে আরও লাশ আটকে থাকতে পারে। ট্রলারটির অর্ধেক অংশ এখনো পানির নিচে ডুবে আছে। সেখানে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানোও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম জানান, উদ্ধার তৎপরতা শেষ হলে লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। ডুবে যাওয়া ট্রলার ও নিহত জেলেদের পরিচয় শনাক্ত করার কাজ চলছে।