আবু সাইদ বিশ্বাস, ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় আনন্দের ঈদ যাত্রা যেন মৃত্যুর মিছিলে রূপ নিয়েছে। তিন দিনে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে, বাবা-ছেলে, সহদর ভাইসহ ৮ জনের। রোববার রাত ৮টার দিকে বাইপাস সড়কের কফি এন্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনে সাতক্ষীরা বকচরা বাইপাস সড়কে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা ও ছেলেসহ তিনজন নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরো ছয়জন। এ ঘটনা ঘটে। আহতদের সাতক্ষীরা ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতরা হলেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার নারায়নপুর গ্রামের আজিজুর রহমান সরদারের ছেলে আব্দুল বারি (৫৫), তার ছেলে রেজোয়ান আহমদে (২৫), সাতক্ষীরা সদরের খানপুর গ্রামের ওমর ফারুকের ছেলে মাহমুদুর রহমান (৩৬। নারায়নপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান জানান, আব্দুল বারি ও তার ছেলে রেজওয়ান আহমেদ বকচরা এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে বাইপাস সড়কে বাইকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় লাবসার দিক থেকে আসা মাহমুদ হেসেনের একটি মোটরবাইক আব্দুল বারির বাইকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে আব্দুল বারি ঘটনাস্থলে মারা যান। গুরুতর আহত রেজওয়ান আহমেদকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাতক্ষীরা সদরের খানপুর গ্রামের আনিসুর রহমান জানান,গুরুতর আহত মাহমুদ হোসেনকে প্রথমে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে চুকনগর এলাকায় মারা যান। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার রাতে সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিশখালীর হাজরাপাড়া নামক স্থানে মটরাসাইকেল ও ম্যাইক্রোবাসের সাথে সংঘর্ষে দুই ভাইয়ের সাথে মৃত্যু হয়েছে।নিহত দুই ভাইয়ের নাম ইমরান হোসেন (১৯) ও রিফাত হোসেন (১৬)। তাঁরা সাতক্ষীরার তালা উপজেলা মাগুরা গ্রামের আসাদ মোড়লের ছেলে। হাজরাপাড়া এলাকায় দুর্ঘটনায় দুজনের নিহতের বিষয়টি জানিয়েছেন মাগুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গণেশ চন্দ্র দেবনাথ। প্রত্যক্ষ দর্শী সুজন জানান, সাতক্ষীরা থেকে ঈদের কেনাকাটা শেষে শুক্রুবার রাত ৯টার দিকে তিনি আরও দুজনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন। হাজরাপাড়ায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মাইক্রোবাস তাঁদের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এ ঘটনায় তিনিসহ ইমরান হোসেন ও রিফাত হোসেন গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিবাগত রাত ১২টার দিকে ইমরানে মৃত্যু হয়। তাঁর ভাই রিফাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত তিনটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। একই দিনে একই উপজেলার নোয়াপাড়া নামক স্থানে অপর দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় শেখ শাহিনের। ঢাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন তিনি। মাস চারেক আগে বিয়ে করেন শাহিন। প্রতিবেশী শেখ আলামিন জানান, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন শাহিন। শুক্রুবার সন্ধ্যায় স্থানীয় মির্জাপুর বাজারে ঈদের কেনাকাটা শেষে মোটরভ্যানে করে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে নোয়াপাড়া বাজারে এলে দ্রুতগামী একটি মোটরসাইকেল ভ্যানটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে শাহিন ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয় কয়েকজন শাহিনকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। দুটি দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী রেজাউল করিম।
এদিকে শুক্রবার সকালে একই উপজেলার কুটিঘাটা এলাকার কপোতাক্ষ নদের চর থেকে নাহিদ হাসান (৩) নামে একটি শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে ধানখেতে ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ হয় শিশুটি। সে তালা উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সারসা গ্রামের নিছার গাজীর ছেলে। স্থানীয় সুমন সরদার বলেন, কপোতাক্ষ নদের পাড়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ধানখেতে ঘুরতে গিয়েছিল নাহিদ। সন্ধ্যার আগ থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাঁরা ও এলাকার লোকজনসহ অনেকে বিভিন্নভাবে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছেন, কিন্তু নাহিদকে পাওয়া যায়নি। শুক্রুবার সকালে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তালার পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাঞ্চন কুমার রায় বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটি নদীতে মৃত্যু হয়।
এদিকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ প্রভাষক সোহেল উদ্দিনের(৩৮) মৃত্যুদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকাল ৪টায় শহরের রাজারবাগান এলাকায় সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সামনে তার কোচিং সেন্টার থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনরা। নিহত সোহেল উদ্দিন শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের মোঃ এমদাদ আলী মাস্টারের ছেলে। তিনি বিসিএস ৩৪ ব্যাচের ক্যাডার ছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি যে বিল্ডিংয়ে মারাগেছেন সেখানে তিনি ছাত্রছাত্রীদের কোচিং করাতেন। মরদেহ উদ্ধারের সময় তার পরনে শুধু একটি আন্ডারওয়্যার ছিলো। নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে সদর থানার উপপরিদর্শক তন্ময় মোহন্ত বলেন, সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় সোহেল উদ্দিনের মরদেহ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে সোহেল উদ্দিনের স্ত্রী ইসরাত জাহান সহ পরিবারের কোন সদস্যই সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজী হননি। উল্টো ছবি তুলতে গেলে তারা সাংবাদিকদের বাধা দিয়েছেন। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আবু জিহাদ মোঃ ফকরুল আলম খান জানান, তদন্ত করে সোহেল উদ্দিনের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করা হবে।
Check Also
সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। …