নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাম্প্রতি সাতক্ষীরায় কর্মরত পাঁচ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার স্বাক্ষী হয়েছেন ইমরান হোসেন রিপন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাকার বিনিময়ে যে কোন মামলার মিথ্যা স্বাক্ষী হয়ে থাকেন তিনি। ইতোমধ্য গণমাধ্যমের হাতে এসেছে তার মিথ্যা স্বাক্ষী হওয়ার একাধিক মামলার নথি।
সাম্প্রতি সংবাদ প্রকাশের জেরে সাতক্ষীরার পাঁচ সাংবাদিকের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা করেছে তালা শপিং ভ্যালী কোম্পানির ম্যানেজার জহর আলী সরদার।
মামলার আসামীরা হলেন, ঢাকা পোস্টের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি সোহাগ হোসেন, ঢাকা মেইলের প্রতিনিধি গাজী ফারহাদ, স্থানীয় দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার প্রতিবেদক হোসেন আলী, দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার প্রতিনিধি শাহীন বিশ্বাস ও দৈনিক মুক্ত খবরের প্রতিনিধি হাবিবুর রহমান সোহাগ।
মামলার বাদী সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের হাজরাকাটি গ্রামের মৃত. জব্বার সরদারের ছেলে জহুর আলী সরদার।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় উল্লেখ করা হয়, বাদী তালার আটারই গ্রামে বাদীর শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানির ম্যানেজার। মামলার আসামীরা বাদীর কাছে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। গত ২৭ মার্চ কোম্পানীর সামনে আসামীরা পুনঃরায় চাঁদা দাবি করে ও কাছে থাকা ৬০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। তারপরে স্বাক্ষীরা বাদীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এ মামলাটি কাল্পনিক। মামলার বিররণীতে যাহা উল্লেখ্য করা হয়েছে তার কোনটা সত্য নয়। মামলায় ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধি সোহাগ হোসেন কে ১ নম্বর আসামি করা হলেও তিনি কখনো এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করিনি কিংবা কখনো ওই কারখানার কারও সাথে কথা হয়নি। এই কাল্পনিক মামলার স্বাক্ষীর তালিকায় নাম রয়েছে ইমরান হোসেন রিপনের নাম। টাকার বিনিময় মামলার মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে থাকেন এই ইমরান হোসেন রিপন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ইমরান হোসেন রিপন সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার আটারই গ্রামের মৃত. আব্দুর রহমানের ছেলে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রিপন গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের ২৭ তারিখে আটারই গ্রামের শিমুল মোড়ল বাদী হয়ে একটি মিথ্যা ও কাল্পনিক ছিনতাই মামলা দায়ের করেন বিজ্ঞ আমলী আদালতে। এই মামলায় নির্দোষ সাতজন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলার বিবরণীতে উল্লেখিত ঘটনার সাথে বাস্তবতার বিন্দু পরিমাণ কোন সত্যতা না থাকায় তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার পর মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। মামলার কপিতে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এই মিথ্যা ছিনতাই মামলার সাক্ষীর তালিকায় নাম ছিল এই ইমরান হোসেন রিপনের।
তালা সদরের আটারই গ্রামের বাসিন্দা কামরুজ্জামান মুকুল জানান, তাদের বিরুদ্ধে আদালতে ও তালা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে পৃথক মামলা হয়। জোরপূর্বক জমি দখল ও মারামারির অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন ওই এলাকার মিজানুর রহমান মোড়ল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করে কোন সত্যতা পায়না। এই হয়রানি মূলক মামলার সাক্ষী ছিলেন ইমরান হোসেন রিপন। এমন অসংখ্য মানুষকে মামলার সাক্ষী হয়ে হয়রানি করেন তিনি।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে দোষী আসামীকে পর্দার আড়ালে নিয়ে নির্দোষ একটি মানুষকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে মামলার আসামি হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন এই ইমরান হোসেন রিপন। শুধু চাপ প্রয়োগ নয় নানান ধরনের মামলার ভয় দেখিয়ে মিথ্যা ভিডিও জবানবন্দী নেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তালা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার আটারই গ্রামের আকবর সরদারের মেয়েকে উত্তাক্ত করার ঘটনায় মামলা হয়। এই মামলার আসামি ওই গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল মোড়ল। প্রকৃত দোষী নাজমুল মোড়লকে মামলার নথি থেকে নাম বাদ দিয়ে আটারই গ্রামের আবুল কাশেম গাজীর ছেলে নাজমুল গাজীকে মামলা আসামি করতে নানা ধরনের ভয় ভীতি প্রদর্শন করেন।
তালা থানার সাধারণ ডায়েরী নাম্বর ৭৫/২২ সুত্রে জানা যায়, ২ নভেম্বর ২০২২ সালের সাতক্ষীরার তালা সদরের আটারই গ্রামের আবুল কাশেম তালা থানাতে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। লিখিত ডায়েরিতে উল্লেখ্য করা হয়, আবুল কাশেমের ছেলে নাজমুল গাজী (১৪) আটারই গ্রামের জে,এন,এ মাদ্রসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এই নাজমুল গাজী কে অভিযুক্ত রিপন রাস্তায় দাঁড় করিয়ে ভয় দেখিয়ে ভিডিও ধারন করে।
অভিযোগকারী আবুল কাশেমের বক্তব্যনুযায়ী, তার ছেলে নাজমুলকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিডিও স্বীকারোক্তি নিয়েছে, তার সহপাঠী মিমের সাথে নাজমুলের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। ওই মামলার প্রকৃত আসামি সে এই মর্মে জোর পূর্বক ভিডিও ধারন করে ইমরান হোসেন রিপন। বিষয়টি নিয়ে ভীতিসন্ত্রাস্ত হয়ে তালা থানাতে সাধারণ ডায়েরি করেন আবুল কাশেম। তাছাড়া ছেলের নামের ঠিকানা আদালতে গিয়ে এফিডেভিট করেন নাজমুলের বাবা আবুল কাশেম গাজী।
এ বিষয়ে একাধিক বার ইমরান হোসেন রিপনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তালা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত (ওসি) রেজাউল করিম জানান, চাপ প্রয়োগ করে নিরিহ মানুষকে মামলা আসামি করার ঘটনায় যে জিডি হয়েছে সেটার আইনগত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া যদি কোন ব্যক্তি একাধিক মামলার স্বাক্ষী হয়ে থাকেন সেটার তদন্ত পূূবক আদালত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।