বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সারাদেশের মানুষ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। সরকারের কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র, দমন, প্রলোভন এই আন্দোলনকে বিভ্রান্ত, বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। তাই সময় থাকতেই জনগণের মনোভাব বুঝে বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা মেনে নিয়ে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় রাজপথে জনগণের দাবির ফয়সালা করা হবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার তথা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং ভোটের অধিকার প্রয়োগসহ মুক্ত মত প্রকাশের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। আজকে সেই দেশে, মানুষের সকল অধিকার হরণ করা হচ্ছে, হয়েছে। চলছে দুর্নীতি আর মিথ্যাচারের এক মহোৎসব।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে। বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং চলছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের ওপর বিভিন্ন কৌশলে নির্যাতন শুরু করেছে। বিএনপিসহ বিরোধী মতের দলগুলো এবং দেশবাসী এই সরকারের অধীনে নির্বাচন না করা এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, ঠিক সে সময় অবৈধ সরকারের মন্ত্রী এবং শাসকগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যাচার করছে।
তিনি আরও বলেন, এই অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। সংসদ ভেঙে দিয়ে এই অবৈধ সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি আজ গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, এই অবৈধ সরকার দেশের মানুষের ওপরে অত্যাচার-নির্যাতন চালানোর জন্য এবং অধিকার হরণের জন্য আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগকে দখল করেছে। ইচ্ছামত বিরোধী মতের মানুষসহ এ দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর অন্যায় অত্যাচার, নির্যাতন, জুলুমের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
মহাসচিব বলেন, সর্বশেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করা হয়েছে। সরকারপ্রধানের ইচ্ছামত মানুষকে কারাগারে বন্দি রাখা, নির্যাতন করা বিচার বিভাগের অবৈধ সরকারের নির্দেশে ফরমায়েশি রায় প্রদান করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে মামলা-হামলায় কারাগারে প্রেরণ ও সাজা প্রদান করছে। তারই ধারাবাহিকতায় উচ্চ আদালতের জামিন থাকার পরেও জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুসহ প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীকে নিম্ন আদালত কারাগারে প্রেরণ করেছেন, যা আইনের শাসনের পরিপন্থী বলে জনগণ মনে করেন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী, যুবদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, নাটর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব, বিএনপি নেতা মিয়া নূরুদ্দিন অপু, যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহিন, ঢাকা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান মুসাব্বিরকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে দীর্ঘ দিন বন্দি করে রেখেছে। এছাড়াও যুবদলের সহ-সভাপতি ইউসুফ বিন কালু, সাবেক সহ-সভাপতি আলী আকবর চুন্নু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি রফিক হাওলাদার, সাবেক কমিশনার হারুন অর রশিদসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে সাবেক বিচারপতি আওয়ামী নেতা শামসুদ্দিন মনিকের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় মাসের পর মাস কারাগারে আটক রেখেছে। বারবার জামিন চেয়ে আবেদন করলেও এই মামলায় তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ইতোমধ্যে সারা দেশে বিএনপিসহ বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের নামে ১ লক্ষ ১১ হাজার ৫৪৩টির বেশি মামলা এই অবৈধ সরকার দায়ের করেছে। আসামির সংখ্যা প্রায় ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮১-র বেশি।