‘অনেক দেশের চেয়ে কূটনীতিকদের ভালোমানের নিরাপত্তা দিচ্ছে বাংলাদেশ’

ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের অতিরিক্ত পুলিশি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনার মুখে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা অনেক ভালোভাবে এবং দক্ষতার সঙ্গে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিদেশি কূটনীতিকদের পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে বেশ ভালোমানের নিরাপত্তা দেওয়া হয় বাংলাদেশে।

তিনি বলেন, ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের দক্ষতার সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী, সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অব্যাহতভাবে দিয়ে যাচ্ছে, ভবিষ্যতেও দিয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থার (আইএমও) মহাসচিব পদে বাংলাদেশের প্রার্থিতার পক্ষে প্রচারণার অংশ হিসেবে ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাতিলের প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা- সে বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। আমাদের হাতে প্রচুর কাজ আছে। আমরা এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা এনগেজমেন্টে যেতে চাচ্ছি না। ইটস নট এ ইস্যু। এটা আমাদের নিয়মিত কার্যপরিধির একটা অংশ এবং সবাইকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

কূটনীতিকদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাতিল নিয়ে আর কথা বলতে চান না বলেও সাফ জানিয়ে দেন শাহরিয়ার। তিনি বলেন, এ রিলেটেড ভুল তথ্যের ভিত্তিতে যে প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে, সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছি। আমরা এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না।

গত ১৪ মে থে‌কে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সৌদি আরবসহ মোট ছয়টি দে‌শের কূটনী‌তিক‌দের অতিরিক্ত প্রটোকল (পুলিশ নিরাপত্তা) সু‌বিধা‌ বা‌তি‌ল ক‌রে‌ছে সরকার। কেন এটি প্রত্যাহার করা হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

পরদিন (১৫ মে) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন যুগান্তরকে বলেন, কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতকেই আমরা পুলিশের এসকর্ট সুবিধা দেব না। কারণ ওইসব দেশে আমাদের রাষ্ট্রদূতকে এই ধরনের সুবিধা দেওয়া হয় না। এই প্রটোকল নির্ধারিত হয় আদান-প্রদানের ভিত্তিতে। কোনো দেশকেই আমরা অতিরিক্ত নিরাপত্তা সুবিধা দেব না। আমরা কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতকে এসকর্ট সুবিধা দিতাম। এখন অন্যান্য দেশগুলোও আমাদের কাছে বাড়তি এসকর্ট সুবিধা চাওয়া শুরু করেছে। তাছাড়া আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা অনেক ভালো আছে। ফলে এসকর্ট সুবিধা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এরপরও যদি কোনো রাষ্ট্রদূত মনে করেন, তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বেশি দরকার, তাহলে তারা নিরাপত্তা সুবিধা ভাড়া করে নিতে পারবেন।

মন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের বলেছি- অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের নানা কৃচ্ছ্রসাধন করতে হচ্ছে। তাই রাষ্ট্রদূতদের যে বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা দেওয়া হয়, সেটি আর অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, এখন পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো। তাই কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা দিলে বিদেশিদের কাছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা নিয়ে ভুল বার্তা যায়। আমরা ভুল বার্তা দিতে চাই না।

মন্ত্রীর এসব বক্তব্যের বিষয়ে আজ (মঙ্গলবার) পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। ঢাকায় থাকা বিদেশি কয়টি মিশনকে বাড়তি পুলিশ এসকর্ট দেওয়া হতো জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমার জানামতে, নিয়মিতভাবে চারটি দেশকে দেওয়া হতো। এ ছাড়া আরও এক–দুইটা দেশ যখন চাইত, তখন তাদের তা দেওয়া হতো।’পররাষ্ট্রসচিব জানান, গত সোমবার (১৫ মে) থেকে বাড়তি পুলিশ এসকর্ট প্রত্যাহারের বিষয়টি কার্যকর হয়ে গেছে।

বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের বিষয়টি ওই দূতাবাসগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে নোটিফিকেশনের ওই রকম ব্যাপার ছিল না। যখন হলি আর্টিজানের ঘটনা ঘটল, তারপর…। এখানে যে রেকর্ডস আমরা দেখেছি, তাতে তাদের কাছ থেকে কোনো অনুরোধ আমরা খুঁজে পাইনি। তাদের দিক থেকে কোনো নোটিফিকেশনও করা হয়নি।’

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘জঙ্গিবাদের উত্থানের যে আশঙ্কা ছিল, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে বা নিরাপত্তার বিবেচনায় তখন তাদের এটা (বাড়তি নিরাপত্তা) দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে যে মূলত ট্রাফিক ক্লিয়ারেন্সের কাজটাই (বাড়তি পুলিশ পাহারা) করত। সুতরাং আসল নিরাপত্তার যে বিষয়, তা অপরিবর্তিত আছে। নিরাপত্তার দিক থেকে কোনো ঘাটতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। যে কারণগুলো বিচার করে দেখেছি, তখন যে বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন ছিল, এখন আমরা ঢাকা শহরে কিংবা বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বা যা–ই বলি না কেন, সেটা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে আছে। সুতরাং সেটা একটা কারণ। দ্বিতীয়ত, নিজেদের সিস্টেমে (পুলিশের জনবল) বলা হচ্ছে, কিভাবে স্ট্রিম লাইন করা যায়। কারণ এখানে ঘাটতিও আছে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ সময় পররাষ্ট্রসচিব আরও বলেন, ‘আপনারা সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। কোনো না কোনো সময় তো করতে হতো। এই সময় নিয়ে আপনারা নানাভাবে জল্পনা করছেন। এটা এমনিতেই করা হতো। আরেকটা জিনিস বলতে পারি। রাষ্ট্র হিসেবে বিভিন্ন দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূতদের মৌলিক নিরাপত্তা দেওয়ার যে যে মৌলিক বাধ্যবাধকতা আছে, সেটা কখনোই আমরা আপস করব না, এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’ তিনি রাষ্ট্রদূতদের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য বিকল্প প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থাও আমরা রেখেছি। স্পেশাল ব্যাটালিয়ন অব আনসার আছে। তাদের অনেক দিন ধরেই তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য সামান্য পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকতে পারে।

পরের দিন (বুধবার) বিকালে মাসুদ বিন মোমেন জানান, বিদেশি কূটনীতিকদের আনসার বাহিনী কীভাবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা (এসকর্ট) দেবে, সেটি চূড়ান্ত হয়েছে।  বৃহস্পতিবার বা রোববারের মধ্যে নোট ভার্বালের (কূটনৈতিক পত্র) মাধ্যমে দূতাবাসগুলোকে বিষয়টি জানানো হবে।

জানা গেছে- বিদেশি রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক, মন্ত্রী, এমপি এবং ভিভিআইপিদের নিরাপত্তায় প্রস্তুত হচ্ছে প্রটেকশন গার্ড রেজিমেন্ট। আনসার ব্যাটালিয়নে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল দিয়েই সাজানো হবে এই নিরাপত্তা ব্যাটালিয়ন। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাটালিয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।