শর্তের বেড়াজালে হেফাজত, নানা গুঞ্জন

এক দশক আগে হেফাজতের উত্থান ছিল নাটকীয়। ‘অপারেশন শাপলা’র পর দৃশ্যপট বারবার পরিবর্তন হয়েছে। কখনো সমঝোতা, কখনো আন্দোলনের চেষ্টা এভাবে এগিয়েছে হেফাজত। সর্বশেষ সংগঠনটি বিপর্যয়ে পড়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘিরে। সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতাকেই সে সময় গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে সরকার-হেফাজত সম্পর্ক নানা মোড় নিয়েছে। বৈঠক হয়েছে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে। বেরিয়েছে সমঝোতার নানা খবর। এর আলোকেই দলটির বেশির ভাগ নেতা ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছেন। পাঁচটি শর্তের ভিত্তিতে হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।

 

হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস নদভী শুক্রবার মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন, ৮-৯ জন ছাড়া সংগঠনটির প্রায় সব নেতাকর্মীই মুক্তি পেয়েছেন। তবে শর্তভিত্তিক সমঝোতার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি। যদিও এটা উল্লেখ করেছেন যে, নির্বাচন ও রাজনীতিতে হেফাজতের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
নানা সূত্রে হেফাজতকে পাঁচটি শর্ত দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।

১. কোনো রাজনীতির সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না।

২. নির্বাচনে কোনো দলকে সমর্থন করা যাবে না।

৩. ধর্মীয় ইস্যুতে আন্দোলন করার পূর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

৪. সাবেক ২০দলীয় জোটভুক্ত ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।

৫. সংগঠনের যেসব বক্তা উগ্র বক্তব্য দেন তাদের বহিষ্কার করতে হবে।

মাওলানা মীর ইদ্রিস নদভী বলেন, নেতাকর্মীদের মুক্তি নিয়ে সরকারের সঙ্গে নানা সময়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এটা আমাদের পুরনো অবস্থান যে, হেফাজত কখনো রাজনীতি করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না। হেফাজত রাজনৈতিক সংগঠন নয়। নির্বাচনেও আমাদের কোনো ভূমিকা নেই, কারও প্রতি সমর্থন থাকবে না। তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে আমাদের ইস্যুভিত্তিক কোনো সমঝোতা হয়নি। হেফাজতে যারা যুক্ত তারা ব্যক্তিগতভাবে অন্য যেকোনো দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন। এতে বাধা নেই।

হেফাজতের নেতাদের মধ্যে এখনো কারাগারে রয়েছেন সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, সহকারী মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, সাবেক অর্থ সম্পাদক মুফতি মুনির হুসাইন কাসেমী, রফিকুল ইসলাম মাদানী প্রমুখ। মামুনুল হক সম্প্রতি বেশ কয়েকটি মামলায় হাইকোর্টে জামিন পান। তবে তার জামিন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে স্থগিত হয়েছে। শিশু বক্তা হিসেবে পরিচিত মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীও সব মামলায় জামিন পান। পরে জামিন স্থগিত হওয়ায় তিনিও মুক্তি পাননি।

হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২৫০টির মতো মামলা তদন্ত বা বিচার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৩৪টি মামলা হয়। আর ২০১৩ সালের ৫ই মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মোট মামলা হয় ৮৩টি। এর বাইরে আরও মামলা রয়েছে।

Check Also

আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।