সম্প্রতি ঘোষিত বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন ভিসা নীতি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যারা এখন বলছেন এই ভিসা নীতি সমস্যা না তারা আসলে না বুঝে বলছেন। আর সমস্যা না হলেই বরং জাতি উপকৃত হবে। কারণ সামনে জাতীয় নির্বাচনে মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে ভিসা নীতি কোনো প্রভাব ফেলবে না। আর এর অর্থ হলো ভিসা নীতির প্রভাবেই ভোটটা সুষ্ঠু হতে পারে।
আজ ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, আমার মনে হয় মার্কিন ভিসা নীতি ওয়ার্নিং হিসেবে নেয়া হয়েছে। আমার অনুমান নির্বাচনের আগে আরও পদক্ষেপ আসবে। তিনি বলেন, এখন যারা যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসতে চায়, কিন্তু যারা সরকার বা সরকার বিরোধী ছাত্র সংগঠনে যুক্ত তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে। গত বছরগুলোতে ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশকে ঠেলে দেয়া হয়েছে এমন এক জায়গায় যেখানে বাংলাদেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র। এটা হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পর থেকে মূলত কোনো ম্যান্ডেট ছাড়া একটা সরকার ক্ষমতায় আছে।
বিজ্ঞাপন
সেহেতু তারা ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার মাধ্যমে দেশকে এই পরিস্থিতিতে ফেলেছে।
তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করে ভিসা পলিসি বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করবে তাহলে আপনাদের সাথে আমি একমত না। একটা ভিসা পলিসি না সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে, না গণতন্ত্র আনতে পারে। এটা ম্যাসেজ হতে পারে, এটা সতর্ক বার্তা হতে পারে।
ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কাছে আমদানির চেয়ে রপ্তানির জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেশটি থেকে কতই বা জিনিস কিনি বা কেনার সামর্থ্য রাখি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রেমিট্যান্স এর একটা বড় সোর্স এই দেশটি। এছাড়া আমাদের রপ্তানির জন্য বড় একটি জায়গা। তিনি বলেন, সবাই বলছে কোনো সমস্যা না। সমস্যা না হলে তো সমস্যা না। যদি সুষ্ঠু ভোট হয়, তাহলে তো আসলেই কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবে না। মূল জিনিসটা হলো মানুষ ভোট দিতে পারবে এবং যাকে ভোট দিবে তাকেই বিজয়ী হিসেবে দেখা যাবে। তবে এটা ঘটার জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম. শাহীদুজ্জামান বলেন, পশ্চিমাদের কাছে এই সরকারের সবচেয়ে শক্তিশালী আর্গুমেন্ট ছিল মৌলবাদের বিরুদ্ধে তারাই হচ্ছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সরকার। আমরা দেখেছি বাংলাদেশের যেসকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটেছে সেগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রতিহত করতে পেরেছে। কিন্তু এই সরকারের একমাত্র ব্যবস্থা যারা মৌলবাদকে ঠেকাবে। সেটি যুক্তরাষ্ট্রের সরকার আর গ্রহণ করছে না।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষক ডা. জাহেদ উর রহমান। তিনি বলেন, ভিসা নীতির সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা না। বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমেরিকা প্রশাসন যেই ধরনের পলিসিগুলো নেয়ার চেষ্টা করছে তারই একটা এক্সটেন্ডেড অবস্থা এখানে আমরা বলতে পারি। মূল কারণ হলো, চীনের প্রভাব বিস্তার রোধ করা। চীনের বৈশ্বিক প্রভাব কমাতে হলে সারাবিশ্বে গণতন্ত্র ছড়িয়ে দিতে হবে সেটি যুক্তরাষ্ট্র করছে। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন তা করেনি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাইমুম পারভেজ।