ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। নিজেও কেন্দ্রে ভোট দিতে যাননি। নির্বাচন কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টও নিয়োগ দেননি। নির্বাচনের ৫ দিন আগে থেকে প্রচারে বের হননি। তবুও প্রায় ৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হলেন গাজীপুর মেট্রো সদর থানা বিএনপি’র বহিষ্কৃত সভাপতি হাসান আজমল ভূঁইয়া। তিনি সাবেক গাজীপুর পৌরসভা ও বর্তমানে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে টানা ২০ বছর ধরে ওয়ার্ড কমিশনার/কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
অন্যদিকে, নগরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে শ্রমিক দলের সভাপতি ফয়সাল আহম্মেদ সরকার এবার বিজয়ী হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। তিনিও এর আগে দুবার ওই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাকেও বিএনপির সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। গাজীপুর নগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ২৮ নম্বর ওয়ার্ড। নগর ভবন, গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, গাজীপুর আদালত, জেলার অভিজাত আবাসিক এলাকা দক্ষিণ ও উত্তর ছায়াবীথি, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ-বিএনপি কার্যালয়সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ ওয়ার্ডেই অবস্থিত।
হাসান আজমল ভূঁইয়া জানান, বিপুল ভোটে নিশ্চিত বিজয় জেনেও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনায় দলের আদর্শের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে গত ১৯শে মে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
বিজ্ঞাপন
প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময়ের পর নির্বাচনীবিধি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের তালিকায় থাকা প্রার্থিতা থেকে কাগজে-কলমে প্রত্যাহার করার সুযোগ না থাকায় তার নাম ও প্রতীক ইভিএম মেশিনে থেকে যায়। সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর তিনি নিজে কোনো ধরনের প্রচারে না নামলেও তার কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীগণ ঠিকই নিজেদের মতো করে আজমল ভূঁইয়ার পক্ষে প্রচার চালিয়ে যান।
সাধারণ ভোটাররাও তাকে ভোট দেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি। ভোটারগণ লাটিম প্রতীকে ৬ হাজার ১৬ ভোট দিয়ে হাসান আজমল ভূঁইয়াকে বিজয়ী করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহিদ হোসেন ঘুড়ি প্রতীকে পান ৩ হাজার ২১ ভোট। স্থানীয় যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেন টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীকে ভোট পেয়েছেন আড়াই হাজার। হাসান আজমল ভূঁইয়া নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও সাধারণ ভোটাররা তাকে ছেড়ে যাননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই ওয়ার্ডে জাহিদ হোসেনসহ আওয়ামী লীগের ২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী হলেও ভুদারগঞ্জে তাদের কাউকেই বিকল্প ভাবতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, বিপদে-আপদে তাকে সব সময় কাছে পাওয়া যায়। তিনি ছাত্রদল, যুবদল হয়ে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত হলেও ওয়ার্ডের ভোটারদের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন নিবিড় সম্পর্ক। গড়ে তুলেছেন উন্নয়ন আর সেবার বিশেষ বন্ধন। একটানা ২০ বছর ধরে ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
হাসান আজমল ভূঁইয়া জানান, তবুও একটি মহলের প্ররোচনায় দু’একটি পত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে অপপ্রচার হয়েছে, আমি নাকি প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে আবারো নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছি। তবে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিএনপি’র স্থানীয় পর্যায়ের ২৯ জন নেতাকর্মী গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রার্থী হওয়ার পরই তাদের সবাইকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ভোটের লড়াইয়ে বিএনপির ১৩ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন ১২ জন। আর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হয়েছেন একজন।