জ্বালানি সংকট ও আমদানি নিয়ন্ত্রণে চাপে বাংলাদেশ: বিশ্বব্যাংক

বিশ্বব্যাংক তাদের সর্বশেষ ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার জ্বালানি সংকটে রয়েছে এবং কয়েক মাস ধরে আমদানির ওপর বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে। এসব কারণে দেশের শিল্প উৎপাদন এবং পরিষেবা খাতে বড় ধরনের চাপে রয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

এ বছরের শুরুতে বাংলাদেশের জন্য একটি ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিশ্বব্যাংক বলছে, আইএমএফের এই ঋণ নেওয়ার পেছনে বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্য রক্ষা করা এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া। তবে মঙ্গলবার রাতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নিয়ে আগের পূর্বাভাসই বহাল রয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বছরের শুরুর মাসে আরেকটি ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে ৫ দশমিক ২ শতাংশের কথা বলা হয়। এ ছাড়া আগামী ২০২৩–২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। মঙ্গলবার প্রকাশ হওয়া প্রতিবেদনেও একই পূর্বাভাস রেখেছে বিশ্বব্যাংক। যদিও সরকার চলতি ও আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য ব্যাহত হওয়া ও বিনিময় হারের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশ আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল। নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাও এমনটি করেছিল। ফলে এসব দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। তবে এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আমদানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বেশ কিছু খাদ্যপণ্য রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান। বিশ্বব্যাংক বলছে, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম কমে এসেছে। তা সত্ত্বেও এসব দেশ বিদ্যমান খাদ্য রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ২০২৩ সাল পর্যন্ত বহাল রাখতে পারে। এ ছাড়া দেশে কর্মসংস্থানের উন্নতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগেরটি বহাল রাখলেও প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে পূর্বাভাস আগের চেয়ে বাড়িয়েছে। জানুয়ারির প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে ২ দশমিক ১ শতাংশে গিয়ে ঠেকতে পারে। যদিও এটি ২০২২ সালের ৩ দশমিক ১ শতাংশ ও ২০২১ সালের ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম। তবে ২০২৫ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি আবার ৩ শতাংশে প্রত্যাবর্তন করবে বলে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হয়।

মহামারি করোনা, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ও দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কঠোর মূল্যস্ফীতিবিরোধী পদক্ষেপের সম্মিলিত প্রভাবে দরিদ্র দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক।

Check Also

ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

আবুল হোসেন সদর প্রতিনিধি : ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।