প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবতা বিবর্জিত ও লোক দেখানো: মির্জা ফখরুল

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘বাস্তবতা বিবর্জিত, প্রতারণামূলক ও লোক দেখানো’ বলে অভিহিত করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন ছাড়া এ বাজেট আর কিছুই নয়।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ঘোষিত বাজেট বর্তমান ফ্যাসিস্ট লুটেরা সরকারের অর্থনৈতিক দুর্নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার এক বার্ষিক ঘোষণাপত্র মাত্র। এ বাজেট কল্পনাবিলাসী বাস্তবায়ন অযোগ্য ও উচ্চাভিলাষী। এটা সরকারের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুটের লক্ষ্যে প্রণীত অর্থ লুটেরাদের বাজেট। এতে চলমান অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান আয়-বৈষম্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে যাওয়া, বেপরোয়া অর্থপাচার, জনগণের কাঁধে রাষ্ট্রীয় ঋণের বোঝা স্বীকার করা হয়নি। পরিত্রাণের উপায়ও বলা হয়নি। তেমনিভাবে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সুশাসন ও ন্যায়বিচারের ধারণাকে।

বাজেটের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার শিক্ষার কথা বলে অথচ দাম বাড়ায় কলমের, ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলে দাম বাড়ায় ল্যাপটপ-মোবাইল ফোনের। গরিবের কথা বলে অথচ পরোক্ষ কর আরোপ করে নিত্যপ্রয়োজনী জিনিসের ওপর। এটি স্পষ্টতই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। এ বাজেটে সাধারণ ও দরিদ্র জনগণের জন্য কোনো সুখবর নেই। চরম অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণের কোনো দিক নির্দেশনা নেই ।

গত ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের চরম অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে প্রয়োজন ছিল দল-মত ও ব্যক্তির স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে সাহসী ও বাস্তবসম্মত বাজেট প্রণয়ন। কিন্তু মোটা দাগে এ বাজেট আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) শর্ত বাস্তবায়ন এবং বিগত অর্থবছরের বাজেটের ১৪-১৫% বর্ধিত অবস্থা ছাড়া কিছুই না।

বাজেট প্রস্তাবনার বিভিন্ন দিক বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি, বাজেট ঘাটতি, রাজস্ব প্রাপ্তি, আয়-বৈষম্য,  করারোপে বৈষম্য, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের বোঝা, বাজেট বাস্তবায়নের অসম্ভাব্যতা, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে বরাদ্দের সঙ্গে বাস্তবতার বিশ্লেষণ তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ। এই চাপ মোকাবেলায় প্রস্তাবিত বাজেটে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। বিদ্যুত, জ্বালানি, পরিবহণ, খাদ্যসহ তেল, চাল, আদা, চিনি, ডিম, মুরগিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য অনেক আগেই মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। অর্থমন্ত্রী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কোনো পথরেখা না দিয়েই কিভাবে মূল্যস্ফীতির টার্গেট ৬% ঘোষণা করেছেন তা বোধগম্য নয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাজেটে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অর্থপাচার প্রতিরোধে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। ক্ষমতার বলয়ের বাইরে সাধারণ মানুষের অনুকূলে এই বাজেট কোনো ভূমিকা রাখবে না। এটা গণবিরোধী বাজেট। স্মার্ট বাংলাদেশে এবার তারা স্মার্ট লুটপাটের বাজেট দিয়েছে। তারা চুরিতে স্মার্ট। ভোট চুরি, ব্যাংক চুরি, অর্থ পাচার এসব কিছুতেই স্মার্টলি লাখ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি করার, ব্যাংক লুটপাট, সিন্ডিকেট পরিচালনা, জনগণের সম্পদ লুটের পাকা বন্দোবস্ত করা হয়েছে বাজেটে। এ দেশটাকে লুটপাটের অংশীদার বানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে বাজেটে বরাদ্দ কমানোর কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। সামাজিক, নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজেট ও জিডিপির অনুপাতে এই খাতে বরাদ্দ কমেছে। বরাদ্দ বেশি দেখানোর কৌশল হিসেবে এই খাতে এমন কিছু কর্মসূচি দেখানো হয়েছে, যা বাস্তবে সামাজিক নিরাপত্তা সুরক্ষা কর্মসূচি নয়। এছাড়া কৃষি খাতে ভর্তুকি, সঞ্চয়পত্রের সুদ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের দেওয়া প্রণোদনার টাকাকেও সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বয়স্ক নারী-পুরুষ, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ও প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা মাত্র ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। অথচ ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ঢাকায় প্রতিবন্ধীরা বিক্ষোভ করেছে, পুলিশের পিটুনি খেয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক সরকার না থাকলে জবাবদিহিতা থাকে না। দেশের অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। জাতীয় সংকট থেকে মুক্তি পেতে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধমূলক নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা অবশ্যই করতে হবে। এটার একমাত্র পথ নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান।

বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের প্রশ্ন টাকা গেল কোথায়? সাধারণ মানুষ তো তাদের বিদ্যুতের বিল দিয়েই যাচ্ছে। কারও বিল বাকি নেই এবং উচ্চমূল্যে দিচ্ছে। তাহলে কেন কয়লার জন্য এলসি খুলতে পারছে না। কেন গ্যাসের এলসি খুলতে পারছে না। কেন তেলের জন্য এলসি খুলতে পারছে না। এই টাকা কোথায় গেছে আমরা সবাই জানি। বিদেশে সম্পদ কেনা হচ্ছে, সুইস ব্যাংকের টাকা রাখা হচ্ছে। কারা এই টাকার মালিক তাও দেশের মানুষের কমবেশি জানা হয়ে গেছে।

বিদ্যুতের সংকট সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারা দেশে বিদ্যুতর লোডশেডিংয়ে সবার ক্রাহি অবস্থা। অথচ উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের ফেরি করে বিক্রি করতে হবে পার্লামেন্টে অহমিকা করেছে সরকার। বিদ্যুতের এই সংকটের মূল কারণটাই হচ্ছে দুর্নীতি ও লুটপাট। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে শুরু করে আদানি পর্যন্ত পুরোটাই লুটপাট। সেমিনার করে বলেছিলাম, মাত্র ১০টি কোম্পানি যারা ক্যাপাসিটি ট্যাক্সের সবচেয়ে বেশি সুবিধা উপভোগ করছে। এরা সবাই সরকারের সঙ্গে জড়িত। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে এই খাতকে পুরোপুরি প্রাইভেট সেক্টরে প্রায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রফিট ছাড়া আর কিছু কাজ করছে না; যার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউল্লাহ।

Check Also

ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

আবুল হোসেন সদর প্রতিনিধি : ঘোনা ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।