আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংলাপের কথা শুনে বিএনপির নেতাদের আবারো জিহ্বায় পানি এসেছে। গতবারের নির্বাচনের আগের কথা আমাদের মনে আছে, একবার নয়, দুইবার তাদের সঙ্গে সংলাপে বসেছি। রেজাল্ট কী? কোনো লাভ হয়নি। নিরপেক্ষ সরকারের শর্ত নিয়ে দলটির সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমদ মান্নাফির সভাপতিত্বে এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রমুখ।
কাদের বলেন, ফখরুল সাহেবের জিহ্বায় পানি আসছে। মনে করছে আওয়ামী লীগ তাদেরকে সংলাপে ডাকবে। এই সংলাপের কথা আমরা ভাবছি না। নিরপেক্ষ কে? আপনার নেত্রী বলেছে শিশু এবং পাগল। শিশু এবং পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়।
বিজ্ঞাপন
কাজেই আপনি শিশু এবং পাগলের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরপেক্ষ ব্যক্তি খুঁজে বের করুন। তারপর বোঝা যাবে কী হবে। আর এটা নিয়ে মাথা খারাপ করে কাজ নেই, এই তত্ত্বাবধায়ক আর আসবে না, তত্ত্বাবধায়ক মরে গেছে। এই মরা জিনিসকে আর জীবিত করার চেষ্টা করবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করেনি, এটা নিষিদ্ধ করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার জন্য নালিশ করতে করতে বিএনপি এখন নিজেরাই ফাঁদে পড়েছে। তারা নিজেরাই ‘ফাঁন্দে পড়ে কান্দে’। এখন তারা নালিশ করে নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে পেয়েছে ভিসা নীতি। এই ভিসা নীতি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কাকে ভিসা দেবে, কাকে দেবে না, এটা সেই দেশের ব্যাপার। আমরাও আমাদের দেশে কাকে ভিসা দেবো, কাকে দেবো না, সেটাও আমাদের ব্যাপার। এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কী আছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নমিনেশন লন্ডন থেকে দেয়, ঢাকা থেকে দেয়, নয়াপল্টন থেকে দেয়, গুলশান থেকে দেয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে নমিনেশন বিক্রি করে। এটাই হচ্ছে বিএনপি।
মনে আছে ওই নমিনেশন বাণিজ্য, অনেকের পকেট খালি করেছে। একেক জায়গায় ৩ জন ৪ জন করে নমিনেশন পেয়েছে, এটা হচ্ছে বিএনপি। সেতুমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ছিল না। খালেদা জিয়ার ইচ্ছায় নির্বাচন কমিশন ছিল আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন। সেটা আর হবে না। সেইদিন চলে গেছে। আমাদের নেত্রী পার্লামেন্টে আইন করে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। নির্বাচন কমিশন নিয়ে আপনাদের চিৎকার করার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, আজকে বিদেশি বন্ধুরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা চায় ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন। আমাদের নেত্রী দেশি বিদেশিদের আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচন করবো। বিএনপি চায় তত্ত্বাবধায়ক। বিএনপি চায় শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। এটা মামা বাড়ির আবদার। এ সময় নিজ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিয়মের মধ্যে থাকুন। আপনারা আমাদের শপথে থাকুন।আমাদের আবারো ৬ই জুন, ৭ই মার্চের শপথ নিতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র গিলে খেয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা গিলে খেয়েছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ গিলে খেয়েছে। এদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। এরা যদি ক্ষমতা ফিরে পায়, বিএনপি নামের বিষধর সাপ গোটা দেশ গিলে খাবে। এ সময় বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা জনগণকে বলেছি, আপনারা সময় দিন। ১০-১৫টা দিন সময় দিন। সব ঠিক হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যার ওপর ভরসা রাখুন।
এদিকে আলোচনা সভা শুরুর আগে দলটির নেতাকর্মীরা কয়েক দফায় চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়। এতে জাহাঙ্গীর আলম (৪০) নামে একজন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি কেরানীগঞ্জ থানার ৫৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল পৌনে ৪টার দিকে সমাবেশের চেয়ারে বসা নিয়ে নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা শুরু করেন। মঞ্চ থেকে মাইকে বার বার বলার পরও শান্ত না হয়ে বেশ কয়েক দফায় চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটান তারা। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য নেতাকর্মীদের মাঝে। তারা যে যার মতো ছোটাছুটি শুরু করেন। এতে সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।