জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জামায়াত ইসলামী নিজে থেকে কোনো সংঘাত, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় না। জামায়াত সন্ত্রাস, নাশকতা, হামলা, বিশৃঙ্খলা, সংঘর্ষে বিশ্বাস করে না। জামায়াত ইসলামী শান্তিতে বিশ্বাসী। সেভাবে তারা দল গঠন করেছে। বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ অন্য দলের লোকদের জামায়াত সম্পর্কে পড়া ও জানার অনুরোধ করবো, মেহেরবানী করে আপনারা জামায়াত সম্পর্কে জানুন। বাংরাদেশ জামায়াত ইসলামী দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তৃতীয় দল।
শনিবার (১০ শনিবার) এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিন দফা দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, অনেকে দেশকে সোনার দেশ গড়তে চেয়েছিল। কিন্তু সেই লোকের অভাব ছিল। এ জন্য আমরা দেশের মধ্যে একটি ছাত্র সংগঠন গড়েছি। আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন? আমাদের ছেলেরা কি কোনো মেয়ের ওড়না ধরে টান দিয়েছিল কখনো? বলতে পারবেন কি? তাদের হাতে কোনো গাজা, মদ দেখেছেন? তারা দেশের স্মার্ট তরুণ। এটি আকাশ থেকে বা জন্ম থেকে হয়েছে? না, এটি স্মার্ট তরুণ তৈরির কারখানা, সেই কারখানা বা দলের নাম বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। অথচ যারা ক্ষমতায় তাদের ছেলেদের কথা তো আপনারাই জানেন! তাদের ধর্ষনের কথা, সেঞ্চুরি কথা।
ডিএমপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এটা আপনারা করতে চান না। এটা আপনাদের বাধ্য করা হয় জুলুম করতে। তাহলে আমাদের সহযোগিতা করুন। এদেরকে বিদায় করে দেশের এ অবস্থা পরিবর্তন হোক। তাহলে তো আর কিছু লাগে না।
তিনি বলেন, নির্বাচন হচ্ছে সবার জন্য লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। এভাবে নির্বাচন হয়। গণতন্ত্র মানে নির্বাচন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না, হয় না। আওয়ামী লীগের লজ্জা থাকা উচিৎ। লজ্জা হলো ঈমানের অঙ্গ। যেটা তাদের নেই।
কেয়ারটেকার সরকার আমরা কেন চাই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বেশি বলতে চাই না। এটাই বলবো, আগামী নির্বাচনে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হবে ইনশাল্লাহ। অবিলম্বে আমাদের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিন। নইলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন না আপনারা। উতপ্ত হবে আরো। এই মাসের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনার আহ্বান করেন তিনি।
সাবেক এমপি ও জামায়াত ইসলামীর সেক্রটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, শাপলা চত্বরের বক্তব্যের পর আমাদের মুখে তালা মেরে দিয়েছিল, কিন্তু এখন তালা খুলে গেছে। আর মুখ বন্ধ হবে না। এক বক্তব্যে জেরে তিন মাসের জেল খেটেছি। হামলা দিয়ে, জুলুম করে এদেশের মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করতে পারবেন না। সভা সমাবেশ করতে যদি অনুমতি লাগে এ আইন আমরা মানি না। সংবিধান আইনের উর্ধ্বে নয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের স্থপতি শেখ মজিবুর রহমান তার তিন বছরের মধ্যে দেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছিলেন। আওয়ামী লীগের হাতে কখনো গণতন্ত্র ঠিক থাকে না। এ আওয়ামী লীগ কুত্তার মাথায় টুপি পরিধান করিয়েছিল। এই আওয়ামী লীগ সেই আওয়ামী লীগ। এরা মানুষের ওপর জুলুম করে, অধিকার কেড়ে নেয়। ১৩ সালে সমাবেশ করেছিলাম, আবার ১০ বছর পর আবার অনুমতি দিয়েছেন, কিন্তু প্রাচীর মধ্যে আটকে রেখেছেন। আমরা চেয়ে ছিলাম রাজপথে সমাবেশ করবো। তা আপনারা করতে দেননি।
তিনি বলেন, বিশৃঙ্খলা, নাশকতা, অরাজকতা জামায়াত ইসলামীর মধ্যে নেই। এর সাথে কখনো মিলতে পারে না এ দল। কথায় বলেন গণতন্ত্র, আর ক্ষমতায় গেলে করেন জুলুম তন্ত্র। এটা আর এদেশের মানুষ মেনে নিবে না। আওয়ামী লীগের সময় শেষ, আর কয়েকদিন ক্ষমতায় আছে। এবার নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা ২টি নির্বাচন করেছেন। সব প্রতারণা করে ক্ষমতায় বসে আছেন। লজ্জা থাকলে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন দিতেন। এই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, বলেছিলেন ৬৫ বছর হলে তিনি আর নির্বাচন করবেন না। কথা কি রেখেছেন? না, তিনি কোনো কথা দিয়ে কথা রাখেন না। এই আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করতে নেই। এরা প্রতারণা করে মানুষের সাথে বারবার।
অবিলম্বে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নইলে গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করে এ দেশের মানুষ আপনাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন জামায়াতের এই নেতা।
এর পর জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমানের পাঠানো লিখিত বক্তব্য শোনানো হয়।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, জামায়াত ইসলামীকে সব সময় সন্ত্রাসী দল হিসেবে প্রচার করে সরকার। আজ কি দেখলেন, জামায়াত ইসলামী একটি সুশৃঙ্খল দল। কোনো কর্মসূচিতে জামায়াত ইসলামী কোনো কর্মী একটি ঢিল পর্যন্ত ছুঁড়ে মারেনি। এগুলো হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাদের কাজ। তারাই করে থাকে।
জামায়াত ইসলামী জাতীয় সংসদ প্রতিনিধিত্ব করেছে, অথচ সেই দলের নেতাকর্মীদের আপনারা সন্ত্রাসী বলে থাকেন। আপনারা আমাদের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দিবেন, অথচ আমরা এর প্রতিবাদ করতে পারবো না। এ অধিকার টুকু আপনরা কেড়ে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের ১৯৯৫ সালে একটি সভায় বলেছিলেন, আজীবনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই, স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কি সে কথা রেখেছেন। তিনি কোনো কথা রাখেননি। ১৪ ও ১৮ সালে আপনারা বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। কোনো ভোট পড়েনি। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল কায়েম করবো। তারপর রাজপথ ছাড়বো। আমরা আমাদের নেতা আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তি চাই। আপনারা মনে করেছিলেন, আটক, ফাঁসি, গুম করে আমাদের স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পেরেছেন কি? পারবেন না।
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। কোনো অজু হাতে অনিবন্ধিত দল বলা হয়? আদালতের রায় শেষ না হওয়ায় পর্যন্ত জামায়াতের নিবন্ধন আছে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট সংশোধন করতে হবে। সেখানে জামায়াতের নাম রাখতে হবে। আর কোনো নাটক করবেন না। ভিসানীতি জন্য জামায়াত বেরিয়ে আসেনি। এটা তো প্রধানমন্ত্রী জন্য, এটা সরকারের জন্য। এই ভিসানীতি পেয়ে তারাই আতঙ্কে আছে।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মজিবুর রহমান ও জামায়াতের ইসলামীর আমির মওদুদ এক টেবিলে বসেছিলেন। ১৯৯১ সালে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে ২০২৪ সালে সেইভাবে নির্বাচন হবে ইনশাল্লাহ। দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার কারণে আমাদের নেতাকর্মীদের প্রতি যে অন্যায়, জুলুম, অবিচার করেছে। তা ইসলামের রাজপথ কায়েমের মধ্যে দিয়ে প্রতিশোধ নেয়া হবে। ইনশাল্লাহ।
বক্তব্যকালে ফাঁসি হওয়া নেতাদের স্মরণ করে বক্তব্যে জামায়াত ইসলামীর নেতারা বলেন, দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রাঙ্গণে তাদের প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সকল রাজবন্দী নেতাসহ আলেম ওলামাদের মুক্তি দিতে হবে। আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে দিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে দিতে হবে। আমাদের প্রতীক, মানুষের ইনসাফের প্রতীক দাড়িপাল্লা ফিরে দিতে হবে।
সরকারের প্রতি অভিযোগ তুলে ধরে নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে তারা বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। কিন্তু তারা কি সে কথা রেখেছে? না, সে কথা তারা রাখেননি। ৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এই আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। এ কথা তারা ভুলে গেছে।
৫০০ বেশি কর্মী শহীদ হয়েছে উল্লেখ করে নেতারা বলেন, এ সরকারের প্রথম কাজ করেছিল আমাদের ওপর হামলা ও গ্রেফতার করে গুম, খুন করা। তারা আমাদের ১ লাখের বেশি নেতাকর্মী জেলে আছে। আমাদের থামাতে চেয়েছিল। আগামীতে যৌথ আন্দোলন শুরু হবে। এতে আমাদের এই সরকারকে পতন ঘটানোর জন্য রাজপথে নামতে হবে। অবিলম্বে আমাদের গুম হওয়া নেতাদের তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
সমাবেশ শেষ ছাত্র শিবিরেরর পক্ষ থেকে দায়িত্বরত পুলিশ ও সাংবাদিকদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।