খুলনায় খালেক ও বরিশালে আব্দুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত

ডেস্ক : খুলনা ও বরিশাল সিটি কপোরেশন নির্বাচনের বেসরকারিভাবে ফল ঘোষণা করা হয়েছে। খুলনায় তালুকদার আব্দুল খালেক এবং বরিশালে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। খুলনায়  আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক পেয়েছেন ১,৫৪,৮২৫ ভোট। তার নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী আব্দুল আউয়াল পেয়েছেন ৬০,০৬৪ ভোট। অপরদিকে বরিশাল সিটি নির্বাচনে ১২৬টি কেন্দ্রের বেসরকারি ফলে নৌকা প্রতীকে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৭৫২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীম পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৩৪৫ ভোট।

গতকাল সোমবার সকাল ৮টায় দুই নগরীর ৬১টি ওয়ার্ডের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোট শেষ হয় বিকেল ৪টায়।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, খুলনা সিটিতে ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন।

খুলনায় সিটি নির্বাচনে এবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট পাঁচজন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল আউয়াল (হাতপাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক (দেয়াল ঘড়ি) ও জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন (গোলাপ ফুল)। এ ছাড়া ৩১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৩৬ জন ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন। এদিকে বরিশালে সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোট চলছিল। এর মধ্যে সকাল ১০টার দিকে বরিশাল নগরীর কাউনিয়া মেইন রোডের একটি কেন্দ্রে প্রবেশ করা নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীম ও তার কর্মী সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে।

এছাড়া বরিশালের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের গোরস্থান রোড মাদ্রাসা কেন্দ্রের ভেতরেই ভোট দিতে আসা লাটিম মার্কার প্রার্থী মু. শাহরিয়ার সাচিব (রাজিব) এবং টিফিন বক্স মার্কার প্রার্থী শেখ সাঈদ আহমেদের (মান্না) সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।

বরিশালে মেয়র পদে ৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে দলীয়ভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছে চারজন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. ইকবাল হোসেন (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীম (হাতপাখা) ও জাকের পার্টির প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু (গোলাপ ফুল)।

বিসিসির ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯। ১২৬টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।

কেসিসিতে ভোটার উপস্থিতি কম

খুলনা ব্যুরো : খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মহড়া। মোড়ে মোড়ে অবস্থান। ভোটারদের উপস্থিত ছিল কম। ভোটারদের জন্য যে লাইনগুলো করা হয়েছে তাও ছিল ফাঁকা। দুই-একজন ভোটার যারা কেন্দ্রে এসেছে, তারা ইভিএমএর জটিলতায় নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারেনি। তারপর আবার কিছু কিছু কেন্দ্রের গোপন বুথে বসানো হয় সিসি ক্যামেরা। এতে করে ভোটাররা ছিল ক্ষুব্ধ। এদিকে নৌকার প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট চোখে পড়েনি। বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকা ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট থাকলেও অন্য মেয়র প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ছিল না বললেই চলে। জানা গেছে, ভোট শুরুর পর কোনও কোনও কেন্দ্রে প্রথম ঘণ্টায় ৫ শতাংশ, ২য় ঘণ্টায় ৭ শতাংশ আবার কোথাও ১৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। ৩য় ঘণ্টায় বেলা ১১টায় ২১ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান ভূঁঞা বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৮ হাজার ৩০০ সদস্য মোতায়েন করা হয়। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্নের লক্ষ্যে সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, ভোটার সংখ্যা, প্রার্থীর বাড়িসংলগ্ন কেন্দ্র, প্রভাব বিস্তার, যাতায়াতসহ বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এই তালিকা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি কেন্দ্রে ৭ পুলিশ ও ১৭ আনসার সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। সাধারণ কেন্দ্রে ৭ পুলিশ ও ১৫ আনসার সদস্য মোতায়েন ছিল।

র‌্যাব-৬ খুলনার অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর বলেন, শহরের প্রবেশ ও বাহিরের পথসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে র‌্যাবের চেকপোষ্ট স্থাপন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে আমাদের গোয়েন্দারা বিভিন্ন স্থানে তথ্য সংগ্রহে নিয়োজিত রয়েছে।

ভোটকেন্দ্র ও আশেপাশে যাতায়াত পথের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ইতোমধ্যে র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা কাজ করছে। আমাদের ১৬টি পেট্রোল নির্বাচন চলাকালীন সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় মোবাইল পেট্রোলিং এবং স্ট্যাটিক পজিশনিং এর মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। যেকোন বিপর্যয় মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সংখক রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন জানান, নির্বাচনে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয় খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে।

কেসিসির নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধ এবং নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য ৪৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন করতে দায়িত্ব পালন করছেন ১০ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনী বিরোধ সংক্রান্ত দরখাস্ত/আপিল গ্রহণ, শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। ৪ জুন কমিশন সচিবালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালন করেন খুলনা সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ এবং নির্বাচনী আপিল ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালন করেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত এবং খুলনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।