স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় নবজাতক মারা যাওয়ার সাত দিনের মাথায় মারা গেলেন মা মাহবুবা রহমান আঁখি। গতকাল রোববার দুপুর পৌনে ২টার দিকে ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান তিনি। দুপুরে এ তথ্য জানান তার স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন। তিনি বলেন, চিকিৎসকরা বলছেন মারা গেছে। আমার সবকিছুই শেষ।
সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে গত বুধবার সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলার শিকার মাহবুবা রহমান আঁিখর নবজাতক সন্তান মারা যায় বলে জানায় পুলিশ। মাহবুবার অবস্থাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তার স্বামী ইয়াকুব আলী দাবি করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা গেছে তাদের নবজাতক সন্তান। এ ঘটনায় ওই দিনই ধানমন্ডি থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখসহ পাঁচ-ছয়জনকে অজ্ঞাত আসামী করে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে মামলা করেন ইয়াকুব আলী। এরপরই ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে গ্রেফতার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর পাশাপাশি গত শুক্রবার থেকে সেন্ট্রাল হাসপাতালের সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও অস্ত্রোপচারের কক্ষ মানসম্পন্ন নয় বলে অধিদপ্তর এ নির্দেশ দিয়েছে।
জানা যায়, ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী অন্তঃসত্ত্বা মাহবুবা রহমান আঁখিকে (২৫) নরমাল ডেলিভারির আশায় কুমিল্লার তিতাস উপজেলা থেকে গত শুক্রবার রাজধানীতে এনে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে মাহবুবাকে যে চিকিৎসকের অধীন ভর্তি করা হয়, তিনি তখন দেশের বাইরে। এ বিষয়ে রোগী বা স্বজনদের জানানো হয়নি। অন্য চিকিৎসকেরা তার স্বাভাবিক প্রসব করাতে ব্যর্থ হন। পরে অস্ত্রোপচার করা হয়। গত রোববার নবজাতকের মৃত্যু হয়। আর মাহবুবার অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। আর গতকাল এখানেই তার মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন পরিচালক জানান, সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে জরুরি রোগী অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। এর অর্থ, ওই হাসপাতালে আইসিইউ বা অস্ত্রোপচারের কক্ষগুলো মানসম্পন্ন নয়। তাই বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে ল্যাবএইড হাসপাতালের পক্ষ থেকে জনসংযোগ কর্মকর্তা চৌধুরী মেহের-এ-খোদা গতকাল জানিয়েছেন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়া মাহবুবা রহমান আঁখিকে প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ ও হার্ট অ্যাটাকের পর ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নেওয়ার সময় তিনি অচেতন অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তিনি বলেন, গত ১০ জুন বিকেল ৩টা ৩৯ মিনিটে মাহবুবা রহমান আঁখিকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে অচেতন অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে অ্যাম্বুলেন্সে আনা হয়েছিল। তার প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ ও হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। রোগীর শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে চৌধুরী মেহের-এ-খোদা জানান, ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ছয় সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর চিকিৎসা চলছিল। ইউরিন আউটপুট বন্ধ থাকায় রোগীকে ডায়ালাইসিস দেওয়া হচ্ছিল। সব প্রচেষ্টার পরও রোগীর কোনো উন্নতি পরিলক্ষিত হয়নি।