আঁতাত আষাঢ়ে গল্প : এক দফার আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী

॥ হারুন ইবনে শাহাদাত ॥
‘যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা’- অর্থাৎ যাকে আমি দু’চোখে দেখতে পারি না, সে যত সুন্দরই হোক না কেন, তার সবকিছুই খারাপ- এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করাই মানুষের স্বভাব। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ গোষ্ঠীর এ মানবিক দুর্বলতার প্রকাশ ১০ জুনের পর থেকে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। এতদিন সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অন্যায়ভাবে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে শুধু বঞ্চিতই নয়, তাদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর জামায়াতে ইসলামী বিধিসম্মতভাবে কর্মসূচি বাস্তবায়নে পুলিশের সহযোগিতা নিয়েছে। এ স্বাভাবিক ঘটনার মধ্যে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী আঁতাতের গন্ধ খুঁজে ফিরছে এবং অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে। জামায়াতে ইসলামীর একাধিক নেতা বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সরকারের তিন মন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়নি, আদালতে বিচারাধীন আছে। চূড়ান্ত রায়ের আগে তাদের রাজনৈক কর্মসূচি পালনে কোনো বাধা নেই। তারপরও কেন এ অপপ্রচার?
এ প্রশ্নের সহজ উত্তর অপপ্রচারকারীরা আসলে চাচ্ছে না, জামায়াতে ইসলামীর কারাবন্দি সকল নেতা-কর্মী মুক্তি পান, কেন্দ্রীয় ও মহানগরী অফিসসহ সব কার্যালয় খুলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালানা করুক। তারা বিশ্বাস করে না, সরকার এতদিন জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে যা যা করছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক রাজনীতির সংজ্ঞায় পড়ে না। দেশ-বিদেশের চাপে সরকার এখন বুঝতে পারছে, তারা এতদিন যা করেছে- এতে জনগণ নির্যাতিত হয়েছে সত্য, কিন্তু সরকার ও আওয়ামী লীগের কোনো লাভ হয়নি। বরং ক্ষতি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও সমর্থন বেড়েছে। এমন উপলব্ধি বা শুভবুদ্ধির কারণে সরকার ও পুলিশের স্বাভাবিক আচরণের মধ্যে আঁতাত না খুঁজে বরং তাদের উচিত পেছন ফিরে দেখা।
পেছন ফিরে দেখা
২০০৬-এর ২৮ অক্টোবরের নির্মম ট্র্যাজেডি এবং ২০০৮ সালের ১/১১-এর প্রেক্ষাপট থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনে প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলই নিপীড়নের শিকার। তবে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর নিপীড়নের যে স্টিমরোলার চালানো হয়েছে, তা ইতিহাসে এযাবৎকালের সবচেয়ে নির্মম মানবতাবিরোধী অপরাধÑ এ কথা দেশ-বিদেশের সব মানবাধিকার সংগঠনই স্বীকার করে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে বিচারে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে অন্যায়ভাবে হরণ করা নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের নামে তাঁকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে আটকে রেখে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। দেশ-বিদেশে বিশিষ্ট আলেম হিসেবে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা একেএম ইউসুফ, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান মাওলানা আবদুস সুবহানও বন্দি অবস্থায় আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অপারের সুন্দর জীবনে চলে গেছেন। সরকার নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর ও মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করেছে। তারা সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। কারো সাথে আপস করেননি। উল্লেখিত নেতাদের মতো একই অভিযোগে এখনো কারাগারে আছেন ইসলামী আন্দোলনের বরেণ্য নেতা প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, এটিএম আজহারুল ইসলাম। আধিপত্যবাদী শক্তি জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্বশূন্য করে রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় করতেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে কীর্তিমান বিশ^ব্যাপী সুপরিচিত বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের নির্মূল করতেই এমন কূটকৌশল করেছে বলে মনে করেন অভিজ্ঞমহল। কিন্তু প্রবীণ নেতাদের আত্মত্যাগে আরো বেগবান হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
তারপরও কূটিল রাজনীতি থেকে সরে আসেনি সরকার। দলের নিবন্ধন স্থগিত ও প্রতীক বাতিল করেছে। নতুন প্রজন্মের নেতা বর্তমান আমীর ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবকে এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ শাহজাহানসহ অসংখ্য নেতাকে ভিত্তিহীন অভিযোগে জেলহাজতে আটকে নির্যাতন করছে বলে আইনজীবীদের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আদালত জামিন দেয়ার পর মুক্তির আগে নতুন মামলা দিয়ে জেলগেট থেকে তাদের আবারও গ্রেফতার করা হচ্ছে, যা আলাদত অবমাননার শামিল। কিন্তু পুলিশ সরকারের নির্দেশে বার বার এ অপকর্ম করছে। দেশের নাগরিকদের ন্যূনতম মানবাধিকার নেই সরকারের আজ্ঞাবহ কতিপয় পুলিশের কাছে। বিরোধীদল, ভিন্নমতালম্বী এবং সাধারণ নিরীহ নাগরিকরা বার বার তাদের হাতে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। পুলিশের এমন আচরণে অন্য একটি মামলার শুনানিকালে আদালত পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, একের পর এক উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করবেন। আর আমরা মাফ করে দেব, এটা হতে পারে না। সংবিধান ও আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত রোববার (১৮ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ কথা বলেন। আদালতে দুই পুলিশ সদস্যের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহবাজ হোসেন, অ্যাডভোকেট শারমিনা হক। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এর আগে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকার পরও কলেজছাত্রকে গ্রেফতারের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে উপস্থিত হন তারা। এরপর শুনানির শুরুতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ সময় হাইকোর্ট বলেন, আর কত উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করবেন। আদেশ মানবেন না, আবার এসে মাফ চাইবেনÑ এটা তো হতে পারে না। শুধু মাফ করার জন্য হাইকোর্ট বসে নেই। সবাইকে মাফ করা হাইকোর্টের কাজ নয়। শত শত বছর এ কোর্ট থাকবে। আদালতের মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে।’ উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকার পরও কলেজছাত্র মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেফতারের ঘটনায় পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমানের নিঃশর্তে ক্ষমা চেয়ে করা আবেদন গ্রহণ না করে উল্লেখিত মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ক্ষেত্রেও ঘটা এমন ঘটনা প্রসঙ্গে এক শুনানিতে এডভোকেট শিশির মনির বলেন, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারকে গ্রেফতার করার পর হাইকোর্ট থেকে তার জামিন মঞ্জুর হলে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পর আপিল বিভাগ থেকে জামিন দেয়া হয়। পরবর্তীতে আরো একটি মামলায় গ্রেফতার করা হলে সে মামলায়ও হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে আরো একাধিক মামলায় পুনরায় গ্রেফতার করা হলে সেসব মামলায়ও তিনি জামিন লাভ করেন। এভাবে বার বার নাম না থাকা সত্ত্বেও সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখানোর কারণে বিনা পরোয়ানায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে তাকে গ্রেফতার না করার জন্য হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ অফিসারগণ এ মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেফতারের আবেদন করা আদালত অবমাননার শামিল। অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নামে কোনো মামলা থাকলে তাকে গ্রেফতার দেখাতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করে গ্রেফতার দেখানো হলে পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার অভিযোগ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।’ আইন ও বিধিমতোভাবে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা মুক্তি পেলেও কি চিহ্নিত ঐ গোষ্ঠী অপপ্রচার বন্ধ করবে? অবশ্যই করবে না বলে বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। এ নিন্দুকদের জন্য কি জামায়াতে ইসলামী আইনসম্মত অধিকার পাওয়ার চেষ্টা বন্ধ রাখবে, অবশ্যই না।
 এক দফার আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ‘সরকার বলছে, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করবে। আমাদের দাবি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার। ১০ জুনের সমাবেশ থেকেও জোরালোভাবে এ দাবি জানানো হয়েছে। এক দফায় সরকার পতনের কথাও বলা হয়েছে। তারপরও যারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন, তারা আসলে জ্ঞানপাপী।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। বিশে^র গণতান্ত্রিক সকল দেশ অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। তাই আমরাও মনে করি, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে অবিলম্বে দলনিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই চলমান সঙ্কট নিরসন হতে পারে। আমরা জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকল রাজনৈতিক দল, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ও আপামর জনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে জুলুম-নিপীড়ন বন্ধ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘দশ দফার ভেতরেই লেখা আছে সরকারের পদত্যাগ ও কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন। এটাই এক দফা। যেহেতু সময় বেশি নেই। মূল দাবি আদায়ে সামনে কর্মসূচি ধীরে ধীরে আরও বাড়বে। আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব কার্যালয় খুলে দিতে হবে। কারণ সরকার অন্যায়ভাবে কার্যালয়গুলো বন্ধ করে রেখেছে। নেতাকর্মীরা গেলেই গ্রেফতার করছে। এটা বড় ধরনের জুলুম।’
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, ‘খুব শিগগিরই সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা আসবে। বর্তমানে দেশে কোনো মানবাধিকার, আইনের শাসন, নাগরিক অধিকার ও ন্যায়বিচার বলতে কিছু নেই। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার এ আন্দোলন বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য এক দফা সরকার পতন আন্দোলন শুরু হবে। সর্বস্তরের জনশক্তিকে আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।’
কারাগারের বাইরে রাজনীতির মাঠে আছেন- জামায়াতে ইসলামীর এমন তিন শীর্ষনেতার বক্তব্যের একই সুর, তারা এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না। জামায়াত জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনের মাঠে আছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত থাকবে। তারা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এরপর আর কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, জামায়াতে ইসলামীর চলমান আন্দোলন এবং বৈশি^ক চাপের কারণেই সরকার দলটির প্রতি কিছুটা সংযত আচরণ করছে, অনেকটা বাধ্য হয়ে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ‘দ্যা ওয়ার’ এর সংবাদ বিশ্লেষণেও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে মার্কিন ভিসানীতি কাজ করতে শুরু করেছে।’
‘দ্যা ওয়ার’র প্রতিবেদনে কী আছে
‘দ্যা ওয়ার’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ভারতকে দুর্বল খেলোয়াড় হিসেবেই দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন, জবাবদিহি এবং মানবাধিকারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচণ্ড চাপ থাকা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে ভারত। এতে দেশটির মর্যাদা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এ ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক, থার্ডপোল দক্ষিণ এশিয়ার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাংবাদিক ওমায়ের আহমদ তার প্রতিবেদনে বলেছেন, বাংলাদেশে নতুন মার্কিন ভিসানীতির প্রাথমিক টার্গেট আওয়ামী লীগ। এটি শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগতভাবে বিপত্তিতে ফেলেছে। বিশেষ করে যখন তিনি ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত বাংলাদেশি এলিট ফোর্স র‌্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
নতুন ভিসানীতি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করা ও নির্বাচনে বাধা দেয়ার জন্য দায়ী বা জড়িত যেকোনো বাংলাদেশি ব্যক্তিকে ভিসা প্রদান করবে না। ভিসানীতি ঘোষণার ১১ দিন আগে শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে জোরালো ভাষায় বলেন, স্যাংশন আরোপকারী দেশগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ কিছুই কিনবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে সংলাপ ও সমঝোতার বিষয়টি লক্ষ করা যায়। এ থেকে স্পষ্ট হয় বাংলাদেশে মার্কিন ভিসানীতি কাজ করতে শুরু করেছে।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, মূলতঃ বাংলাদেশে মার্কিন ভিসানীতি কাজ করতে শুরু করেছে। আঁতাতের কথা আষাঢ়ের গল্প। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চিহ্নিতমহল এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী দেশ ও জাতির স্বার্থকে সবার ওপরে স্থান দিয়েই যেকোনো সিদ্ধান্ত অতীতে নিয়েছে, ভবিষ্যতেও নেবে।’

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।