দেশ স্বাধীনের পর অর্থাৎ ১৯৭৩ সাল থেকে যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে, সে দল কখনো নির্বাচনে হারে নাই। সুতরাং এটা প্রমাণিত সত্য- দলীয় সরকারের অধীনে ক্ষমতা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। এটি আর কোনো বিতর্কের বিষয় নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকেই একমাত্র সাংবিধানিক উপায় হিসেবে বিবেচনা করছে। তাহলে এই রাষ্ট্রের আয়ুষ্কাল এবং এই সরকারের আয়ুষ্কাল সমকক্ষ হবে, এসব সরকারের দুঃস্বপ্ন। নৈতিকতার নিরিখে কোনোক্রমেই তা গ্রহণীয় নয়।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে- ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক সুবিচার’ নিশ্চিত করার জন্য- কারও ইচ্ছামাফিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র কল্পনাও করা যায় না। এক দেশ, এক সরকার, এক দল- বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য বা প্রজাতন্ত্রের চরিত্রের সঙ্গে কোনোক্রমেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান সংবিধান ও আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করতে ব্যর্থ হচ্ছে। নির্বাচনবিহীন রাষ্ট্রে কোনো প্রতিষ্ঠান সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথ পালন করছে না, এমনকি সাংবিধানিক দায়বদ্ধতাও বহন করছে না।
ভোটাধিকার ছাড়া আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা, রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে।
রাষ্ট্রকে পরাশক্তির দাবার ঘুঁটিতে পরিণত করবে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বা রাতের আঁধারে নির্বাচন- সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর গণতান্ত্রিকতাকে বিনষ্ট করেছে এবং নির্বাচনের নামে গণতন্ত্র বিনাশের বীজ বপন করে জনগণ থেকে রাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এটা আত্মঘাতী এবং রাষ্ট্রের কলঙ্কময় এক অধ্যায়।
ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় আদালতকে সহযোগিতা করার জন্য Amicus Curiae হিসেবে সর্ব জনাব টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, রফিক-উল হক, ড. এম জহীর, মাহমুদুল ইসলাম, এম আমীর উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ এবং আজমালুল হোসেনকে আহ্বান করা হয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠ Amicus Curiae গণ তাদের সুগভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে কোনো না কোনো আকারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বজায় রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে দেশে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তারা, যা সত্য পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত Safty of the state is the supreme law প্রয়োগকরতঃ দুটি সাধারণ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে হতে পারে বলে অভিমত প্রদান করেছিল। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রশ্নটিই সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ।
উচ্চতর আদালতের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি Observation বা অভিমত পঞ্চদশ সংশোধনীতে বিবেচনায় নেয়া হয়নি-
(১) জাতীয় সংসদ আরও দুটি সাধারণ নির্বাচনের জন্য নতুন ভাবে ও আঙ্গিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে। বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিগণকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আইন প্রণয়ন করতে পারে;
২) জাতীয় সংসদের বিবেচনা অনুসারে যুক্তিসঙ্গত কাল-পূর্ব, অর্থাৎ ৪২ দিন পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া বাঞ্ছনীয় হবে; এবং
৩) বিদ্যমান সংবিধানের ৫৬ (২) অনুচ্ছেদের শর্ত (proviso)-এর পরিবর্তে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ৫৬ (৪) গণতন্ত্রের স্বার্থে আনয়ন করা প্রয়োজন;
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের অজুহাতে সরকার সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী আনয়ন করেছে অথচ তা আদালতের রায়ের আলোকে নয়। আরও দুটি সাধারণ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া, ৪২ দিন পূর্বে সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ৫৬ (৪) অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপন করার অভিমত কোনোটাই ১৫তম সংশোধনীতে প্রতিফলিত হয়নি। সুতরাং ১৫তম সংশোধনী আইনগত ও নৈতিকভাবে গ্রহণীয় নয়। বরং ১৫তম সংশোধনী বাতিলযোগ্য। সুপ্রিম কোর্ট Judicial review এর ক্ষমতা বলে যেকোনো অসাংবিধানিক আইনকে অবৈধ ঘোষণা করতে পারে।
ঐতিহ্যবাহী একটি দল আওয়ামী লীগের শাসনতন্ত্র বা গণতন্ত্রের প্রশ্নে কোনো নৈতিক অবস্থান নেই। বিরোধী দলে থাকলে যে
দাবিতে রাজপথ প্রকম্পিত করে, মৃত্যুকে বরণ করে, জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে- ক্ষমতায় যাবার পর সেই দাবিকেই তারা দ্রুত পরিত্যাগ করে। পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের পর থেকে শুধুমাত্র সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে কতো মানুষের প্রাণ ঝরে গেল, কতো প্রতিবাদ সমাবেশ হলো কিন্তু সরকার এখনো নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রয়োজন- এই ধ্রুব সত্যটি মেনে নিতে পারছে না। অতীতে নির্বাচনবিহীন ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে স্বীকার করার যোগ্যতাও সরকারের নেই। বরং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে বারবার এ কথা উচ্চারণের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ তার নৈতিক দেউলিয়াত্বকেই প্রকাশ করছে। দলীয় সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও প্রজাতন্ত্রের চরিত্র ও সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্য এবং কাঠামো ধ্বংস করেছে। এই সংবিধান বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে একটি সামাজিক চুক্তি, যা বর্তমান সরকার নির্বাচনহীনতা দিয়ে ছিন্ন করেছে। এই সরকার সংবিধানের মৌলিক কাঠামো (Basic structure) ধ্বংস করে প্রজাতন্ত্রের চরিত্রই খর্ব করে নাই বরং সংবিধানকে অকার্যকর করেছে।
নৈতিকভাবে দেউলিয়া, প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারে আস্থাশীল নয় এমন একটি দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সহযোগী হতে পারে না। কোন স্রোতে নৌকা ভাসালে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে এটাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য।
অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি মূলত: আওয়ামী লীগের। এই আন্দোলনে রাজপথে রক্ত ঝরেছে, ১৭৩ দিন হরতাল-অবরোধে চরম দুর্দশা ও দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে এবং স্বাধীনতার পর এই একটি ইস্যুতেই ‘জাতীয় ঐকমত্য’ স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশে নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিত এমন কোনো রাজনৈতিক দল নেই যারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্নে আনুগত্যশীল নয়। এমন কোনো রাজনৈতিক দল নেই যারা নির্বাচনবিহীন ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে। সুতরাং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্নে এখনো জাতীয় ঐকমত্য বিরাজমান। এর পূর্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংবিধান বিশেষজ্ঞসহ সুশীল সমাজ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বহাল এবং আরও নিখুঁত করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু উচ্চ আদালত জাতীয় ঐকমত্যকে গুরুত্ব না দিয়ে, প্রজাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য ও গণতন্ত্র সুরক্ষার প্রশ্নটিকে উপেক্ষা করে, সম্মানিত এমিকাস কিউরিদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে একটি বাস্তবতাবিহীন বিভ্রান্তিমূলক রায় প্রদান করায়, রাষ্ট্র এখন নির্বাচনবিহীন ব্যবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে। যা মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগ জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, দেশবাসীর নিকট যে অঙ্গীকার করেছিল তা থেকে বিচ্যুত হওয়ার সুযোগ নেই। গত দুই যুগ ধরে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত জনগণের ওপর বুলেট নিক্ষেপ করা হয়েছে, রাজপথে প্রাণ কেড়ে নেয়া হয়েছে বা হচ্ছে সর্বোপরি প্রতিনিয়ত মামলা দিয়ে আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে চেয়েছে। কিন্তু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবি জনগণ পরিত্যাগ করে নাই।
একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া, জনগণের সম্মতিভিত্তিক প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন ছাড়া- রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ ও ভূরাজনীতিতে বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। যত জটিলতাই থাকুক না কেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাড়া আর কোনো গ্রহণযোগ্য সমাধান নেই। প্রজাতন্ত্রের প্রশাসনের নৈতিক মান বা পরিপক্বতা, দলীয় সরকারের ক্ষমতা ধরে রাখার অনৈতিক উগ্র বাসনা এবং সংবিধানের গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাড়া ভোটাধিকার বা নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। সংবিধানের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র হত্যা করার কলঙ্কিত আয়োজন জাতি আর গ্রহণ করবে না।
রাষ্ট্রীয় সংকট নিরসনে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে পুনরায় প্রধান বিচারপতি পদে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন, এতে সংবিধানের কোনো সমস্যা হয়নি। আওয়ামী লীগ ’৯০ সালে সাহাবুদ্দীন সরকার, ’৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং ১/১১ সরকারকে তাদের রাজনৈতিক বিজয় হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। সুতরাং সংবিধানে নেই বলে নতুন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, সংবিধান থেকে এক চুল বিচ্যুত হওয়ার উপায় নেই- এসব বক্তব্য আওয়ামী লীগের অতীত ইতিহাসের সঙ্গে চরম সাংঘর্ষিক। আওয়ামী লীগ অদূর ভবিষ্যতে ক্ষমতাচ্যুত হলে, আবার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবি উত্থাপন করবে, এটা নিশ্চিত।
বহুদলীয় ব্যবস্থায় নির্বাচিত হয়ে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা, সংসদীয় ব্যবস্থার অঙ্গীকার করে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির প্রবর্তন করা এবং সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা কোনো ক্রমেই সংবিধানের প্রতি আওয়ামী লীগের আনুগত্য প্রকাশ পায় না। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ বিনির্মাণের সকল সম্ভাবনা আওয়ামী লীগ বিনষ্ট করেছে শুধুমাত্র ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্যদিয়ে। এসব মৌলিক সত্য অনুধাবন করার যোগ্যতা আওয়ামী লীগের কোনো কালেই ছিল না, এখনো নেই, ভবিষ্যতে আশা করাও দুরাশা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখার পরিণতিতে কী ভয়াবহ বিপর্যয় আসন্ন- তাও আওয়ামী লীগ বুঝতে অক্ষম। ক্ষমতার উন্মাদনা ছাড়া সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্ব পরিস্থিতি সর্বোপরি বাস্তবতা কোনোটাই বিবেচনায় নেয়ার সক্ষমতা সরকারের নেই।
রাষ্ট্রের বিদ্যমান গভীর সংকট উত্তরণে একমাত্র বিকল্প হচ্ছে ভোটাধিকার তথা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গণ-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করা।
সংসদের ‘উচ্চকক্ষ’ গঠন করে উচ্চকক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হবে স্থায়ী সমাধান। কিন্তু আশু সংকট নিরসনে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
বিদ্যমান সংকট নিরসনে রাষ্ট্রের জনগণের অভিপ্রায় রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রবর্তনে সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুসারে সরকার সংবিধানের ১৮তম সংশোধনী আনয়ন করতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা প্রণয়নে সংবিধানের সংক্ষিপ্ত প্রস্তাবনা:
১) সংক্ষিপ্ত শিরোনাম: এই আইন সাংবিধানিক (অষ্টাদশ সংশোধন) আইন, ২০২৩ নামে অবহিত হবে।
ক) সংবিধানে নতুন করে ৫৮-খ অনুচ্ছেদ সন্নিবেশ করা।
খ) সংবিধানের চতুর্থ ভাগের শেষে দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন পরিচ্ছেদ যুক্ত হবে।
২) রাষ্ট্রপতি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সুশীল সমাজ বা বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্য থেকে একজন ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ প্রধান নিয়োগ দান করবেন।
৩) অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী-সামাজিক শক্তিসমূহের সঙ্গে আলোচনাক্রমে অন্যান্য সদস্য বা উপদেষ্টা নিয়োগে রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ করবেন।
৪) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বর্তমানে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বা অঙ্গীভূত কোনো সংগঠনের সদস্য নয়, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নন, ৭২ বছরের অধিক বয়স্ক হবেন না এমন ব্যক্তিগণের মধ্য হতে অন্যান্য শর্ত মোতাবেক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত
হবে।
৫) নতুন সংসদ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যেদিন কার্যভার গ্রহণ করবেন সেদিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিলুপ্ত হবে।
৬) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যাবলী নির্দিষ্টকরণ।
৭) সংবিধানের কতিপয় বিধানের অকার্যকরতা ঘোষণা বা সীমিত সময়ের জন্য স্থগিত করা।
৮) সংবিধানের ৬১ অনুচ্ছেদ, ৯১ অনুচ্ছেদ, ১২৩ অনুচ্ছেদ, ১৪৭ অনুচ্ছেদসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ পাঠসহ প্রয়োজনীয় সংশোধন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৯) আগামী দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা সীমাবদ্ধকরণ।
এটি রাষ্ট্রের গভীর সংকট নিরসনে আপদকালীন সমাধান। পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই যা সর্ব সময়ের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ ও নিশ্ছিদ্র ( Full profe) ব্যবস্থা বলে নিশ্চিত করতে পারে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সর্বস্থানে, সর্বকালে, সর্বপ্রকার রাজনৈতিক সমস্যা নিরসনের স্থায়ী সমাধান নেই। সংবিধান ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতিতে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা কোনোক্রমেই রাজনৈতিক কর্তব্য হতে পারে না।
লেখক: গীতিকবি
faraizees@gmail.com