জ্বলেমিন হোসেন,আশাশুনি: বৃষ্টি ও ঘেরের লোনা পানিতে আশাশুনির খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নের ৫ গ্রামের নিন্মাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ার পর ১০ম দিনে গজুয়াকাটি, ফটিকখালী, রাউতাড়া, পাঁচপোতা ও বাইনতলা গ্রামের আংশিক পানিবন্দি কয়েক শত পরিবারের মানুষেরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। গজুয়াকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় ও স্কুল চত্বরে পানি জমে থাকায় শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। বাড়ির রান্না ঘরে এবং গোয়াল ঘরে পানি উঠে গবাদিপশু ও মানুষের কষ্টের সীমা নেই। আগে থেকেই এসব গ্রামে সুপেয় পানির সমস্যা ছিল এরপর চারদিকে লোনা পানি জমায় সুপেয় পানির সমস্যা আরও তীব্রতর হচ্ছে। চুলকানি সহ পানি বাহিত নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক পরিবারের সদস্যরা।
গজুয়াকাটি গ্রামের সত্য চন্দ্র বৈদ্য ও চন্দন সরকার জানান, গত ২৮ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত টানা বর্ষণে পার্শ্ববর্তী লোনা জলের চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে লোনা পানিতে খাজরা ইউনিয়নের গজুয়াকাটি, ফটিকখালী, রাউতাড়া এবং বড়দল ইউনিয়নের পাঁচপোতা ও বাইনতলা গ্রামের আংশিক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ১০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও পানি অপসারণ না হওয়ায় আমরা চরম মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছি। সাপ পোকার ভয়ে রাতে বের হত ভয় হয়। আমাদের এলাকার অধিকাংশ মাটির ঘর। দীর্ঘদিন জল জমে থাকলে এক এক করে ভেঙে পড়বে। রান্না খাওয়ার যেমন সমস্যা হচ্ছে তেমন চারদিকে লোনা জলে ডুবে থাকায় গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে আছি। তাদের গোখাদ্য ও মিষ্টি জলের অভাব দেখা দিয়েছে।
সহকারী অধ্যাপক শিবপ্রসাদ মণ্ডল জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের কালকির স্লুইসগেট অবমুক্ত করা প্রয়োজন। কিন্তু স্লুইসগেট এর সামনে পলি পড়ে থাকায় জল অপসারণ করা যাচ্ছেনা। বিকল্প পথ হিসাবে যদি বামনডাঙ্গা ও তুয়ারডাঙ্গা স্লুইসগেট অবমুক্ত করা যায় তবে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হতে পারে। তিনি আরও বলেন- আমাদের এলাকাটি এক ফসলি আমন ধানের এলাকা। অন্যান্য এলাকায় আমন চাষের চাষাবাদ শুরু হয়েছে আর আমাদের এলাকায় লোনা পানিতে জলাবদ্ধতার কারণে পানিবন্দি পাঁচ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার বিঘায় আমন ধানের চাষাবাদে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।
খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম কালকি স্লুইসগেট গেইটের পলিমাটি অপসারণ করার চেষ্টা করছেন গত ৩ দিন ধরে। এরমধ্যে নতুন করে জোয়ার তোলা হবে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ায় পানিবন্দি মানুষের মধ্যে নতুন করে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বিকল্প পথে পানি নিষ্কাশিত না হলে ভোগান্তি চরমে পৌঁছে যাবে।তারা বলেন এমনিতেই খাল, বিল ও পুকুরে কানায় কানায় পানি জমে আছে। এখনো উঁচু এলাকায় কয়েকটি পুকুরে মিষ্টি পানি আছে। নতুন করে জোয়ার তুললে ঘরবাড়ি আর থাকবে না।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ ডালিম বলেন, সকাল থেকে এক শ্রেণীর মানুষ কালকির স্লুইসগেট দিয়ে জোয়ার তোলা হবে এমন গুজব ছড়িয়ে এলাকায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে গিয়ে আমি জনসাধারণের ভোগান্তি লাঘবে আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছি। পলি জমে যাওয়ায় গেইটের পাট তোলা যাচ্ছে না। ভাটা সরাতে পারছিনা তাই নিয়ে চিন্তিত আছি এরমধ্যে জোয়ার তোলার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত সংশ্লিষ্ট এলাকার সবাইকে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানান।
কালকীর স্লুইজ গেইটের পলি অপসারন, অবৈধভাবে লোনা পানি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, খালে অবৈধ নেটাপাটা অপসারণ করে এলাকার পানি সরবরাহ নিশ্চিত করে আমন ধান চাষীদের পাশে দাঁড়াতে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী।