পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বাংলাদেশ পরিচালনায় অন্য কোনো দেশের ‘মাতব্বরির’ দরকার নেই বলে সাফ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে যতটুকু দিয়েছেন ততটুকুতেই আমরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে চাই। মাতব্বরির আমাদের কোনো প্রয়োজন নাই। মাতব্বর অনেক আছে পৃথিবীতে, ঘুরে বেড়ায়, মানুষকে নসিহত দেয়। কারণ তাদের ঘরে পাহাড় সমান অর্থ আছে। সেই অর্থের উৎস কোথায় এটাও আমরা কিছু সামান্য বুঝি।’
‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’ উপলক্ষ্যে রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সম্মেলন কক্ষে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) আয়োজিত এক সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এনএসডিএ নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসির আফরোজের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
মন্ত্রী বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে বসে চা খাব, কথা শুনব, এটা ঠিকই আছে। কিন্তু বন্ধুরা আমাদের পরিচালনা করবে? আমি জানি আমার কোথায় ক্ষুধা আছে। আমাদের পায়ের কোথায় আঘাত লাগছে, এটা আমি টের পাই। আমরা আমাদের পথ নিজেরাই ঠিক করব। আমাদের ভালো-মন্দ আমরা নিজেরাই বুঝি। আমাদের নেতৃত্ব আছে, আমাদের বিশ্বাস আছে।’
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা বক্তব্য রাখা পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের প্রতি ইঙ্গিত করে মন্ত্রী মান্নান বলেন, ‘আমাদেরকে আমাদের কাজটা করতে দেন। এই হলো আমাদের দেশের মানুষের কাছে আমাদের আবেদন। বিশ্বে যারা আসছে আমাদের বন্ধু… বন্ধু বলেই আসছে, অবশ্যই বন্ধু, আমি বিশ্বাস করি। আমার মনে কোনো ভীতি নাই। তাদের কাছেও আমাদের আবেদন, আপনারা আমাদেরকে কাজ করতে দিন।’
তিনি ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ কোনো ক্ষেত্রে কি অর্জন নেই- এমন প্রশ্ন রেখে বলেন, অবাক হয়ে থাকে মানুষ। এগুলো কীভাবে হলো? এই বাংলাদেশ দুদিন আগে একটি বুভুক্ষু জাতি ছিল। এটা কীভাবে অর্জন করল।
মান্নান উন্নয়নের অনেক সূচকে এগিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, আমরা আমাদের বিশাল প্রতিবেশীর তুলায় স্বাক্ষরতায়, বিদ্যুৎ বিতরণে এগিয়ে গেছি। সমাজে নারীর অংশগ্রহণ, ব্যবসা বাণিজ্যসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে।
এই মুহূর্তে উন্নয়নই প্রধান কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের অনেক সমস্যা আছে। দারিদ্র্য আমাদের প্রধান সমস্যা। মানসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে চিন্তা চেতনায় পশ্চাদমুখিতা আছে। শুধু দৈহিক দক্ষতা নয়, মানসিক দক্ষতাও আমাদের অর্জন করতে হবে। মাত্র ৫০ বছর ধরে আমরা আমাদের দেশের মালিক হয়েছি। তাই আমরা আমাদের দেশ নিয়ে চিন্তা করতে পারিনি।
এ সময় আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৫ আমাদের মাথাপিছু আয় পাঁচগুণ বেড়েছে, পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে জাতীয় উৎপাদন। অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে সড়ক-সেতু; বিদ্যুৎ তো অচিন্ত্যনীয়। এগুলো কি অস্বীকার করার কোনো বিষয়? আমাদের শাসনামলে দেশে ক্ষুধা কি কিছুটা কমে নাই? দারিদ্র্য কি কিছুটা কমে নাই? এটা স্বীকার করায় অন্যায় কোথায়?’
তিনি উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ দরকার উল্লেখ করে বলেন, ‘গত ১৪ বছর দৃঢ় নেতৃত্বের ফলে ধারাবাহিকভাবে কাজ করার সুযোগ শেখ হাসিনা পেয়েছেন। আমরা তার সঙ্গে কাজ করেছি। এজন্য আমরা অনেকগুলো সমস্যার সমাধান করেছি।’