গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয় দাবি করায় রংপুরের পীরগঞ্জে সেই গর্ভধারিনী ও তার পেটে থাকা নবজাতককে হত্যা করা হয়েছে। আখ ক্ষেতের ভেতরে নিয়ে পেটে পারা দেয়া হলে গর্ভধারিনী মারা যান। এসময় তার পেটে থাকা নবজাতক ভূমিষ্ট হয়। তিন দিন পর স্থানীয়রা দুইজনের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। ক্লু’লেস এই হত্যার রহস্য উদঘাটন করে র্যাব। একই সঙ্গে ঘটনার হোতা মাসুদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, সোমবার দিবাগত রাতে গাজীপুর থেকে ঘটনার মূলহোতা মাসুদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টসে পরিচয় হয় ভুক্তভোগী নারী ও মাসুদ মিয়ার সঙ্গে। বিয়ের আশ্বাসে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী গর্ভধারিনী মা তার গর্ভে থাকা সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে রংপুরের পীরগঞ্জে মাসুদ মিয়ার বাসায় গেলে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, গত ১৫ জুলাই রংপুরের পীরগঞ্জ থানাধীন খালাশপীর এলাকায় আখ ক্ষেতের ভেতর থেকে অজ্ঞাতনামা মহিলা ও সদ্যপ্রসূত কন্যা শিশুর লাশ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ওই ঘটনায় পীরগঞ্জ থানার পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও লাশ গুমের মামলা করেন। যার নম্বর নং-২৬। নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার রাতে গাজীপুরের গাছা থানাধীন তারগাছ এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাব ওই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ও প্রধান আসামি মাসুদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার ও সংশ্লিষ্টার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ১০ বছর ধরে আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টসের ফ্যাক্টরিতে অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন মাসুদ। ২০২২ সালের ফ্রেরুয়ারি মাসে ওই গার্মেন্টসে ভিকটিম শান্তনা চাকরিতে যোগদান করে। একই কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে ভিকটিমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। মাসুদের তথ্য মতে ভিকটিম শান্তনা বিবাহিতা ছিলেন। তবে স্বামী তাকে তালাক দেন। এরপরই সূত্র ধরে মাসুদ ও ভিকটিমের প্রেমের সর্ম্পক গভীর হওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে আশুলিয়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। এক পর্যায়ে ভিকটিম অন্তঃসত্তা হন। ভিকটিম শান্তনা স্বামী মাসুদকে প্রতিনিয়ত বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তাদের মাঝে ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে মাসুদ তার বাড়িতে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে ভিকটিম শান্তনা’কে ঢাকায় রেখে কিছু দিনের জন্য তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে চলে যায়। তবে মাসুদের পূর্বের বিবাহের বিষয়টি সম্পর্কে ভিকটিম শান্তনা জানতেন না।
কমান্ডার মঈন বলেন, ১২ জুলাই ভিকটিম শান্তনা মাসুদের সন্ধানে তার গ্রামের বাড়ি রংপুরে যায়। সেখানে গিয়ে ভিকটিম শান্তনা জানতে পারে মাসুদ বিবাহিত ও তার পুত্র সন্তান আছে। সেখানে ভিকটিম শান্তনা তার গর্ভজাত সন্তানের স্বীকৃতি এবং তাকে বিয়ে করার জন্য মাসুদকে চাপ দেন। তখন মাসুদের প্রথম স্ত্রী ফরিদা তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এক পর্যায়ে মাসুদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ভিকটিম শান্তনাকে বিয়ে ও কাবিনের প্রতিশ্রুতি দেন। পরে ঢাকায় গিয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে পূর্বের ন্যায় বসবাস শুরু করবে বলে আশ্বস্ত করেন। পরবর্তীতে ১৩ জুলাই মাসুদের খালা ভিকটিম শান্তনাকে রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে মাসুদ ভিকটিম শান্তনার সঙ্গে মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে গাড়ি থেকে নেমে তার বাড়িতে ফেরত আসার জন্য বলেন।
কমান্ডার মঈন বলেন, ভিকটিম শান্তনা গাড়ি থেকে নেমে বাসস্ট্যান্ড থেকে মাসুদের বাড়িতে যাওয়ার পথিমধ্যে খালাশপীর নামক স্থানে একটি বড় আখ ক্ষেতের নিকট এলে মাসুদ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য আখ ক্ষেতে যান ও কৌশলে ভিকটিম শান্তনাকেও আখ খেতে নিয়ে যান। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিম শান্তনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার পেছন থেকে ওড়না দিয়ে গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং গলায় ও পেটে পা দিয়ে আঘাত করে। ফলে ভিকটিম শান্তনার গর্ভজাত সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় এবং উভয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।