বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেষা দক্ষিণ পশ্চিমের অনুন্নত জেলা সাতক্ষীরা। ইসলামী আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত সাতক্ষীরা এক অনন্য সংগ্রামী পীঠস্থান। জেলাবাসির ভাগ্য উন্নয়নে দুনীর্তিমুক্ত প্রশাসন গড়া লক্ষ্যে যে কজনের নাম সকলের কাছে সমাদৃত তার মধ্যে ইসলামী নেতৃত্বের অধিকারী, বীরপুরুষ, সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত মেধাবী, জ্ঞান-সাধক, সমাজ সংস্কারক, জনহিতৈষী, জাতীয় সংসদের নির্বাচিত স্বনামধন্য জাতীয় সংসদ সদস্য, হাফেজে কুরআন, সৎ ও নিষ্ঠাবান দায়িত্বশীল প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল খালেক অন্যতম। তিনি ছিলেন সাতক্ষীরার যুগসন্ধিক্ষণের কালজয়ী নেতৃত্ব। আধুনিক সাতক্ষীরার উন্নয়নের ধারাবাহিকতার সফল নায়ক প্রিন্সিপ্যাল আব্দুল খালেক ।
প্রিন্সিপ্যাল আব্দুল খালেকের সাথে এক সাথে কাজ করেছে সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা, উপহার উপঢোকন ছাড়ায় প্রিন্সিপ্যাল আব্দুল খালেক নিরর্লস ভাবে কাজ করেছে গেছেন। তিনি বিদ্যুৎহীন সাতক্ষীরা বাসিকে আলোকিত করেছেন। সাতক্ষীরার বেনের পোতা ৩১ কেভি বিদ্যুতের গ্রিড স্টেশন নির্মাণ করেছেন। লাবসা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সদর হাসপাতালের সম্প্রসারিত চিকিৎসা ভবন, জেলা কারাগারের আধুনিকায়ন, ছয়আনি বাবুর বাড়ি, সরকারি এতিমখানা ও সাতক্ষীরার শিল্পকলা একাডেমী ভবন নির্মাণ, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ও সরকারি মহিলা কলেজ হোস্টেল নির্মাণ, সাতক্ষীরা সদর থানা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, নতুন শিক্ষা অফিস ভবন নির্মাণ, সাতক্ষীরা আধুনিক বাস টার্মিনাল স্থাপন, সাতক্ষীরা ঐতিহ্যবাহী প্রাণসায়র খাল পুনর্খনন ও দৃষ্টিনন্দিত সৌন্দর্যবর্ধন, প্রায় ৮৭ কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তা বিনির্মাণ, নদীভাঙন রোধে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, প্রায় ২৫টির মতো হাইস্কুল মাদরাসা ও কলেজ ভবন নির্মাণ, প্রায় ২০টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ, ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ, প্রায় দেড় শতাধিক মসজিদ মাদরাসা ও মন্দিরের উন্নয়ন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮০টির অধিক কম্পিউটার সেট প্রদান, গরিব ও দুস্থদের আবাসন সুবিধার প্রায় সাড়ে এগারোশত বান্ডিল ঢেউটিন বিতরণ, পাঁচটি আধুনিক বাজার উন্নয়ন। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পাঁচটি স্লুইসগেট নির্মাণ, যোগাযোগ পানি সরবরাহে একাধিক সংযোগ কালভার্ট নির্মাণ ও সংস্কার ইত্যাদি তারই কৃত উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য দিক।
স্থানীয়রা জানান, প্রিন্সিপ্যাল আব্দুল খালেক এলাকার সামাজিক সুবিচার কায়েমে ন্যায়বিচারিক কার্যকরী দৃষ্টান্ত স্থাপনে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-স্বল্পশিক্ষিত, ক্ষমতাশালী বিত্তবান নারী-পুরুষ, সকলের মাঝে ইনসাফ কায়েমে তিনি ছিলেন বদ্ধপরিকর। মিজানের মানদন্ডে তিনি ছিলেন কাজীউল কুজ্জাতের ভূমিকায়। পেশাজীবী চাকরির প্রাপ্যতায় একবার এক নিকটতম আত্মীয় সুপারিশ চাইলে তিনি স্পষ্ট বলেছিলেন, বাবা মেধায় টিকলে তোমাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না, কিন্তু আমার সুপারিশে চাকরি নিলে প্রতিপক্ষ অধিকতর মেধাবীও যোগ্যরা যদিও আমার অনাত্মীয় সে যদি বঞ্চিত হয়- তাহলে আমাকে আল্লাহর কাছে কাল কিয়ামতে জবাবদিহি করতে হবে।
সাতক্ষীরা জামায়ায়াতের সাবেক আমীর বর্তমানে খুলনা অঞ্চল পরিচালক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, প্রিন্সিপ্যাল আব্দুল খালেক ছিলেন একজন যোগ্য সংগঠক। দীর্ঘদিন তিনি সাতক্ষীরা জামায়াতের নায়েবে আমীর এবং পরবর্তীতে সফল জেলা আমীরের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে তার তৎকালীন সাথীদের নিয়ে সাতক্ষীরার ৭টি উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে জামায়াতের সংগঠনকে একটি শক্তিশালী মজবুত ভিত্তির ওপরে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার নিজস্ব এলাকার পাড়ায় পাড়ায় গ্রামে গ্রামে জামায়াতের শপথকৃত সদস্য-কর্মী তৈরিতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের একজন যোগ্য সংগঠক, একজন ধর্মপ্রাণ আধ্যাত্মিক প্রাণপুরুষ, একজন সফল সংস্কারক, একজন নিবেদিতপ্রাণ সমাজ নেতা, একজন অনন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, একজন মেধাবী হাফেজে কুরআন, সর্বোপরি তিনি ছিলেন সাতক্ষীরার যুগসন্ধিক্ষণের কালজয়ী নেতৃত্ব।
প্রিন্সিপ্যাল আব্দুল খালেকের বড় জামাই বর্তমান চেয়াপরম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল গফফর বলেন, ১৯৪৪ সালের ১ আগস্ট সাতক্ষীরার বৈকারী ইউনিয়নের খলিলনগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা চান মন্ডল ও মাতা দিলজান বিবির সুযোগ্য সন্তান ছিলেন তিনি। মরহুম পিতা-মাতা তাদের আদরের সন্তানকে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার মানসে শিশু বয়সেই ধর্মীয় শিক্ষার ওপর অনুরাগী হয়ে মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে মাদরাসা বোর্ড থেকে তিনি কামিলে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে কৃতিত্বের সাক্ষর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তিনি নিজেকে আধুনিক শিক্ষায় উপযুক্ত করে গড়ে তোলার মানসে ১৯৬৯ সালে সাতক্ষীরা কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। কারাবন্দি অবস্থায় জীবনের সময়কে যথাযথ কাজে লাগিয়ে তিনি মহাগ্রন্থ আল কুরআনের হেফজ সম্পন্ন করে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। জনসাধারণ তাকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রিয় জন্মস্থান বৈকারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিলেন ১৯৮২ সালে, ১৯৯০ সালে সাতক্ষীরার সচেতন জনগণ আবার তাকেই নির্বাচিত করেছিলেন সদর উপজেলা পরিষদের সার্থক উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে। আবার ২০০১ সালে সাতক্ষীরা-২ সংসদীয় আসনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে জনগণ তাকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিজয়ী করেছিলেন জাতীয় সংসদের সুযোগ্য সংসদ সদস্য হিসেবে। একাধারে একই ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে বিজয়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের বিজয়ী চেয়ারম্যান, আবার জাতীয় সংসদের নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে। এ যেন যোগ্য জনপ্রতিনিধির সার্থক দৃষ্টান্ত, বিরল বিজয়, অনবদ্য ইতিহাস।
গত ইংরেজি ২০ জুলাই ২০২৩, ১ মহররম ১৪৪৫ হিজরী, ৫ শ্রাবণ ১৪৩০ বাংলা সন রোজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নির্জন কক্ষে, সরকারের বিচারিক আদালতের একটি অনিষ্পত্তি এবং অকার্যকরী রায়ের বেষ্টনীতে, শৃঙ্খলিত অবস্থায় সতর্ক প্রহরায়, কঠিন নজরদারিতে, স্বজনহারা বেদনার আহাজারিতে মহান আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিয়েছেন। আল্লাহ পাক তাকে রহমতের চাদরে আবৃত করে জান্নাতের সুশীতল ছায়াঘেরা, পুষ্পিত বাগিচার মর্যাদাশীল মেহমান হিসেবে কবুল করুন।