ফাঁসি: মহিউদ্দিনের লাশ দেখে জ্ঞান হারালেন মা

ড. তাহের হত্যা মামলায় ৪ নম্বর আসামি মহিউদ্দিনের শতবর্ষী মা সেতারা বেগম ছেলেকে দেখেন না ১৭ বছর ধরে। ফাঁসির আদেশও জানতেন না তিনি। ফাঁসির রায়ের খবরে আত্মীয়স্বজন সংবাদকর্মীরা বাড়িতে গেলেও জানতেন না কী কারণে মানুষ তার বাড়িতে ভিড় করছেন। ফাঁসি কার্যকরের রাতে বাড়িতে কী কারণে চেয়ার টেবিল আনা হচ্ছে তাও জানতেন না এই বৃদ্ধা মা। শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন শতবর্ষী মা সেতারা বেগম। যার জন্য তার সামনে দিয়ে হাজারও কথা হলেও তিনি বুঝতেন না কী কথা হচ্ছে। শুধু জিজ্ঞাসা করলে সবাই এড়িয়ে যেতেন আর হাত ইশারা দিয়ে বলা হতো কিছু না।

শুক্রবার ভোর ৬টায় যখন অ্যাম্বুলেন্স হাজির তার বাড়িতে তখন আর বুঝতে বাকি রইল না। তার আদরের ধন মহিউদ্দিনের লাশ দেখেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন সেতারা বেগম। জ্ঞান ফিরলেই তার মানিকের মুখ দেখতে ছুটে যান। জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। তখন স্বজনরা কোলে করে সরিয়ে নেন। এভাবে বারবার মূর্ছা যান। হুঁশ এলেই বারবার ছুটে যান ছেলের দিকে।

এদিকে গ্রামের মানুষ, মহিউদ্দিনের ছোটবেলার সহপাঠী, শিক্ষক, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই লাশ এক নজর দেখতে দলে দলে ছুটে আসেন তার বাড়িতে। মহিউদ্দিনের পারিবারিক মিয়াবাড়ি জামে মসজিদের সামনে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

মহিউদ্দিনের জানাজায় বিভিন্ন গ্রাম থেকে অংশ নেন ৭০০-৮০০ মুসল্লি। শুক্রবার বেলা ১১টায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন মিয়াবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা রফিকুল ইসলাম। বিষয়টি নিশ্চিত করেন তুজারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. অলিউর রহমান।

এ ঘটনায় মহিউদ্দিনের ছোটবেলার শিক্ষক সুধীর চন্দ্র মণ্ডল বলেন, আমরা মহিউদ্দিনকে সূর্য মিয়া বলে ডাকতাম। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত আমি ওকে পড়িয়েছি। ওর মতো মেধাবী ভদ্র ছেলে আমাদের এলাকায় নাই। ছোটবেলায় রাজশাহী চলে যাওয়ায় ভালো-মন্দের খবর জানি না।

এদিকে তুজারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসলাম খাঁ বলেন, আমার জন্মের আগেই ড. মহিউদ্দিন ওরফে সূর্য মিয়া রাজশাহী চলে গেছেন। মুরব্বিদের কাছ থেকে শুনেছি উনি অত্যন্ত মেধাবী ও ভালো মানুষ ছিলেন। তবে ওনার ভাই আমার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং উনারা আওয়ামী পরিবারের লোক। এর বেশি আর কিছু জানা নাই।

মহিউদ্দিনের ছোট ভাই আরজু মিয়া বলেন, আমার ভাই ড. মহিউদ্দিনকে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। পানি হওয়ার কারণে বাবার কবরের পাশে দাফন করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে ড. মহিউদ্দিনের চাচাতো ভাই ছিকু মিয়া বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাজশাহী জেলা কারাগারে মহিউদ্দিনের সঙ্গে পরিবারের লোকজনসহ শেষ দেখা করি। মহিউদ্দিন বলেছিল- ‘আমাকে বাবার কবরের পাশে দাফন করিও।’
পানি হওয়ার কারণে সেখানে আমরা দাফন করতে পারি নাই। মহিউদ্দিনের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে অসুস্থ থাকার কারণে বাবার দাফন-কাফনে জান্দি গ্রামে আসতে পারেন নাই।

ড. তাহের হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার রাতে মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর হয়।  রাজশাহী জেলা কারাগারের পক্ষ থেকে তার লাশ ফরিদপুরের ভাঙ্গার জান্দি গ্রামে পৌঁছে দেয়। লাশ বাড়ি পৌঁছলে মহিউদ্দিনের বৃদ্ধা মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।