নলতা হাইস্কুলের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ৪০ জনের নামসহ ৪শ জনের নামে মামলা

কালিগঞ্জ: কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের প্রহারে নবম শ্রেণীর ছাত্র রাজপ্রতাপ দাসের মৃত্যুর পর লাশ নিয়ে মিছিল করে বিদ্যালয়ে তান্ডব চালিয়ে শ্রেণিকক্ষ ভাঙচুর, শিক্ষকদের কক্ষ, আসবাবপত্র ও মটর সাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নলতা ইউনিয়নের ইন্দ্রনগর গ্রামের মৃত এলাহী বক্স পাড়ের ছেলে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য আব্দুর জব্বার বাদি হয়ে শনিবার এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৪০ জন হামলাকারী ও অজ্ঞাতনামা ৪০০ জনকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। এদিকে মামলা দায়ের হওয়ার ছয় দিনেও কোন আসামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার না করায় শিক্ষক মন্ডলী, শিক্ষার্থ ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা যায়, নলতা আহছানিয়া মিশনের পিছনে জৈনিক এক ব্যক্তির মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে তার সহপাঠীকে নিয়ে নবম শ্রেণীর চার ছাত্র বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের তিনতলায় কেককাটার পাশপাশি টিকটক ভিডিও করছিল। বিষয়টি জানতে পেরে শিক্ষক অবকাশ কুমার খাঁ ও শিক্ষক মনিরুল ইসলাম রাজপ্রতাপ দাশসহ নবম শ্রেণীর চার ছাত্রকে ডেকে প্রধান শিক্ষকের কাছে ডেকে আনে। এ সময় রাজপ্রতাপকে তার জ্যাঠামহাশয় দেবীরঞ্জন দাশের হাতে তুলে দেওয়াসহ অন্যদের তাদের অভিভাবকের হাতে তুলে দেয় হয়। বাড়িতে যেয়ে অসুস্থতা বোধ করায় দুপুর দ্টুার দিকে নলতা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে এলে রাজপ্রতাপকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ডা. বাপ্পি। দুপুর আড়াইটার দিকে এজাহারে উল্লেখিত তিন আসামীর নেতৃত্বে লাশ নিয়ে সশস্ত্র মিছিল করে গালিগালাজ করতে থাকে এবং শিক্ষকদের চরম অপমান করতে থাকে।এ সময় তারা জোরপূর্বক অফিসকক্ষে ঢুকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অবকাশ খাঁকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে। সময় এক আসামী শিক্ষক অবকাশ খাঁকে জামার কলার ধরে অফিস থেকে মারতে মারতে বের করে আনেন এবং আসামীরা লাথি মারতে মারতে মারতে বিদ্যালয়ের ভবনের প্রধান ফটকে নিয়ে আসে। পরে হামলাকারীরা অফিস কক্ষে ঢুকে আসবাবপত্র, কম্পিউটার, সিসি ক্যামেরা, ল্যাপটড, টেলিভিশন ও ডিজিটাল স্মার্ট বোর্ডসহ ১২ লাখ টাকার জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এ ছাড়া ১০টি শ্রেণীকক্ষের জানালার থাই গ্লাস, ফ্যান. দরজা, ডিজিটাল স্মার্ট বোর্ড ও এসি ভাঙচুর করিয়া ৩০ লক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এছাড়া আসামীরা শিক্ষকদের ব্যবহৃত আটটি মটর সাইকেল ভাঙচুর করে। এ ছাড়া আসামীরা গ্যাস লাইটার দিয়ে শিক্ষক মনিরুল ইসলাম ও শিক্ষক পরিতোষ চক্রবর্তীর দুটি মটর সাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় আসামীরা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রেখে হত্যার চেষ্টা চালায়। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক এবাদ আলী জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র রাজপ্রতাপ দাস শিক্ষকদের প্রহারে মারা গেছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় তার লাশ নিয়ে মিছিল করে প্রধান শিক্ষকসহ ১১জন শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখে হামলাকারিরা। পুলিশের উপস্থিতিতে চালানো ভাঙচুর ও মটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ অবরুদ্ধ শিক্ষকদের পুলিশ ভ্যানে করে সদর থানায় নিয়ে আসে। পরে মৃতের বাবার দায়েরকৃত মামলায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোনায়েম, সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল মুহিত, সহকারি শিক্ষক অবকাশ কুমার খাঁ ও সিদ্ধার্থ রায় চৌধুরীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৭ জুলাই বিকেলে জেলে পাঠানো হয়। ১৯ জুলাই চার শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন, একই দিন নাবালক সাক্ষীদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের আবেদন করা হয়। ১৬৪ ধারার জবানবন্দি গ্রহণের আবেদন খারিজ হওয়ায় তাদেরকে আদালতে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করে আদালত। ১৬ তারিখের ঘটনায় আহত দাবি করে সাক্ষী জুবায়ের ১৮ জুলাই ও অপর এক সাক্ষী মুশফিকুরকে ১৯ জুলাই কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। ২৪ জুলাই চার শিক্ষককে জেল গেটে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন রহমান বুধবার তাদেরনকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তবে কয়েকজন অভিভাবক সদস্যের অভিযোগ, প্রথম এজাহারটিতে ৩৪ জনের নামসহ অজ্ঞাত ২০০ জনের নাম ছিল। পরবর্তীতে দুই বার ওই এজাহার পরিবর্তিত হওয়ায় ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ি বাঘা বাঘা হামলাকারীরা মামলার বাইরে থেকে গেছেন। তাদেরকে সম্পুরক এজাহারের মাধ্যমে মামলায় আসামী শ্রেণীভুক্ত জোর দাবি জানান।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।