সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন–সংলগ্ন মালঞ্চ নদের মাধবখালী খাল ও পশুরতলা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। পাঁচ-ছয় দিন ধরে ওই এলাকা থেকে তোলা বালু একটি কার্গো করে নিয়ে পাশের কদমতলা ফরেস্ট অফিসের পাশে নিয়ে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। এভাবে বালু তোলায় ওই এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন শুরু হবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, উপকূল রক্ষা বাঁধের সংস্কারকাজের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারকে সরবরাহের জন্য স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান অবৈধভাবে ওই বালু তুলছেন। তবে হাবিবুর রহমান ওই স্থান থেকে বালু তোলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ভাঙনকবলিত উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কারের জন্য তারই পাশের নদী থেকে বালু উত্তোলনের ঘটনার আপত্তি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাঁরা বলছেন, বাঁধ মেরামতের জন্য ভাঙনপ্রবণ এলাকা থেকে বালু তোলায় ওই এলাকা নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া পরিবেশসংকটাপন্ন সুন্দরবন এলাকা থেকে বালু তোলায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বাড়ছে। শুধু অধিক মুনাফার লোভে নির্দিষ্ট বালুমহালের বদলে ভাঙনকবলিত অংশ থেকে বালু তোলা হচ্ছে।
ভাঙনকবলিত উপকূল রক্ষা বাঁধের পূর্ব কালীনগর এলাকার বাসিন্দা সচ্চিদানন্দ নাথ সরকার বলেন, মালঞ্চ নদের তীরবর্তী বাঁধ প্রায় প্রতিবছরই ভাঙছে। এমন ভাঙনপ্রবণ এলাকার বাঁধ সংস্কারকাজে একই নদ থেকে বালু তোলায় ভাঙন আরও বাড়বে।
একই এলাকার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক স্বপন কুমার মণ্ডল ও চিংড়িঘেরের মালিক পশুপতি মণ্ডল বলেন, তাঁদের বাধা না মেনে নদ থেকে অবাধে বালু তোলা অব্যাহত রাখায় তাঁরা নদভাঙনের আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেছেন। স্থানীয় কদমতলা বন বিভাগ থেকে আপত্তি জানানোর পর ২০০-৩০০ গজ দূরে গিয়ে আবারও বালু উত্তোলনের কাজ চালু রেখেছে।
বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত এমবি নুরানী নামের কার্গোচালক মিলন হোসেন বলেন, কার্গোমালিক হাবিবুর রহমানের নির্দেশে তিনি সুন্দরবনের পাশের দুই স্থান থেকে বালু তুলছেন। কার কাছ থেকে বালু তোলার অনুমতি নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি মালিকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগের বিষয়ে বালু ব্যবসায়ী ও কার্গোমালিক হাবিবুর রহমান বলেন, বাঁধের জরুরি কাজের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জাকারিয়া হোসেন ও স্থানীয় মুন্সিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান অসীম কুমার মৃধা কার্গোটি ভাড়ায় নিয়েছেন। তাঁরা কোথা থেকে বালু তুলছেন, তা তাঁর জানার কথা নয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জাকারিয়া হোসেন জানান, মেসার্স অলি এন্টারপ্রাইজ কদমতলা এলাকায় ১২৫ মিটার ভাঙনকবলিত অংশে জিও টিউব স্থাপনের কাজ করছে। ঠিকাদার কার মাধ্যমে কোথা থেকে বালু সংগ্রহ করছেন, সে বিষয়ে তিনি জানেন না। তবে ভাঙনকবলিত অংশের পাশের এলাকা থেকে বালু সংগ্রহ করা হলে ভাঙনের ঝুঁকি থেকে যায়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অসীম কুমার মৃধা বলেন, বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেখার কথা। তিনি শুনেছেন তাঁরা বালু তোলার জন্য বালু ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমানসহ দুজনকে অনুমতি দিয়েছেন। বালু তোলার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল জানান, দেশে বালু উত্তোলনের নির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে যেকোনো এলাকার জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সাগরপারের সুন্দরবনের আয়তন ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। তার ওপর যত্রতত্র বোরিং করে সুন্দরবনের আশপাশ থেকে বালু তোলার বিষয়টি রীতিমতো আত্মঘাতী হওয়ার মতো ঘটনা।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তার হোসেন জানান, বালুমহাল ছাড়া সুন্দরবনসংলগ্ন মালঞ্চ নদের মাধবখালী খাল ও পশুরতলা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার বিষয়টি তিনি গতকাল বুধবার সকালে জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।