সুলতান শাহাজান, শ্যামনগর: একদিকে নিম্নচাপ, অন্যদিকে শ্রাবণের ভরা পূর্ণিমা। এর জেরে গত তিন-চার দিন ধরে উত্তাল নদ-নদী। উপকূলের নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ার ছাড়া ৩/৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা।
এরই মধ্যে জোয়ারের চাপে উপকূলের বিভিন্ন স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি ও নদীতে উত্তাল ঢেউয়ের কারণে দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার সোরা গ্রামের হাসান মালীর বাড়ি সংলগ্ন বেড়িবাঁধ সহ কয়েকটি স্পটে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়া অংশ এখনই মেরামত করা না হলে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিডর, আইলার ও আম্পানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বস্বান্ত হওয়া এ অঞ্চলের মানুষ এখনো পরিপূর্ণভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এরমধ্যে আবারো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘরসহ বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত লবণপানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে তারা। এখনই ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে এ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন আবারো তছনছ হয়ে যাবে।
স্থানীয়রা বলছেন, নদীতে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ দুর্বল হয়ে গেছে। এ ছাড়া আইন অমান্য করে বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন না করে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার কাছের অংশ থেকে অনেকে বালু তুলছে। এ কারণে নদীতে সামান্য পানি বাড়লে এসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিচ্ছে।
দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জি.এম মাসুদুল আলম বলেন, পূর্ণিমার জোয়ারে খোলপেটুয়া নদী এবং কপোতাক্ষ নদে পানি বৃদ্ধির ফলে গত তিন-চার দিন ধরে উত্তাল নদ-নদী। উপকূলের নদীতে স্বাভাবিক জোয়ার ছাড়া ৩/৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ৯ নং সোরা গ্রামের হাসান মালির বাড়ি সংলগ্ন ও গাবুরার দৃষ্টিনন্দন এলাকায় ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে নদ-নদীর তীরবর্তী মানুষেরা ভয়ের মধ্যে রয়েছেন।
শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদুল হক বলেন, পূর্ণিমার জোয়ার ও নিম্নচাপের প্রভাবে নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় গাবুরার দুটি পয়েন্টে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছিল। সেখানে জিওব্যাগ পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে কাজ করছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের ওপর নজরদারি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আবহাওয়া অফিসের বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, দেশের উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। খুলনা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ-বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় স্থল নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম- উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।