সাতক্ষীরায় পাটের ন্যার্যমূল্য না পাওয়ার শঙ্কা: ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পুরিবেশ

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরাঃ পাটজাত পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে ২০২৫ সাল নাগাদ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে পুরিবেশ। সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি বলছে, ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রে মাছের চেয়ে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে যাবে। চলতি শতকে মানুষ যে পরিমাণ প্লাস্টিক উৎপাদন ও ভোগের মধ্যদিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিরাট রেকর্ড। তাই যথাসম্ভব দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার বিবণন ও বিক্রয়ের মাত্রা কমিয়ে পাটজাত পণ্যেও ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে পরিবেশ। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে বিশাল জলরাশি ও জীববৈচিত্র্য। বিশেজ্ঞরা জানান, মানসম্মত পাট উৎপাদন, পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ, পাটকলের আধুনিকায়ন, পাটপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ- এই পাঁচটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। এছাড়া পাট নিয়ে উৎসাহ ও জনসচেতনতা বাড়ানো, সোনালি ব্যাগ উৎপাদনের কার্যক্রম চালু করতে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া দরকার।
তাছাড়া পরিবেশ বিজ্ঞানী ও বিভিন্ন গবেষকরা বলছেন, একজন কৃষক এক হেক্টর জমিতে পাটচাষ করলে তা মোট ১০০ দিনে ১৫ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রকৃতি থেকে শোষণ করে, আর ১১ টন অক্সিজেন প্রাকৃতিকে দেয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৮ লাখ ১৭ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমিতে পাটচাষ হয়েছে, যাকে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে পাটের ফলনে স্মরণকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদরা। পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা পাটের পাতা থেকে চা উদ্ভাবনের কথা শুনিয়েছেন সম্প্রতি। এটি পাটকে অর্থকরি ফসল হিসেবে পরিচিত করার আর একটি নতুন পদক্ষেপ বলেও ধরা হচ্ছে। পাটশাকের মেমন ভেষজ গুণ, তার সবটুকুই এই পাটের চায়ে পাবেন চা- প্রেমীরা। আর সে কারণেই এই চা খুব দ্রুতই জনপ্রিয়তা পাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানী ও উদ্যোক্তারা।
কিন্তু বিশ্বব্যাপী সবুজ পণ্য ব্যবহারের যে প্রবণতা বাড়ছে তাতে পাটের সেই সোনালি দিন ফেরার সম্ভবনা দেখছে পরিবেশবিদরা। তারা বলছে, পাট দিয়ে বাহারি ডিজাইনের ভীষণ নান্দনিক জুতা তৈরি হচ্ছে। এছাড়া পাট দিয়ে ঢেউটিন থেকে চেয়ার, সবকিছু বানানোর কাজও চলছে। বর্তমানে আমরা প্রতি টন কাঁচা পাট রপ্তানি করে ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার পাই। কিন্তু মিলগুলো আধুনিকায়ন করার পর সেখানে পাটের শাড়ি, সোফার কভার ইত্যাদি পণ্য তৈরি করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে প্রতি টন পাট থেকে ১০ হাজার ডলারের পণ্য উৎপাদন করা যাবে।
সূত্রমতে, সোনালি আঁশ খ্যাত বাংলাদেশের পাট বিশ্বসেরা। এ পাটের চাহিদা, গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে বিশ্বব্যাপী। পাট উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় এবং কাঁচা পাট রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম। এখন পাট কাটার মৌসুম শুরুহয়েছে। কৃষকরা আ”গ্রহ ভরে পাট কেটে জাগ দেয়া থেকে শুরুকরে শুকিয়ে বাজারজাত করা পর্যন্তবিশেষ যতœ নিয়ে রাখবে এই পাটের। তাই বাজারে যদি বিশেষ চাহিদা ও ন্যায্য মূল্য তারা না পায় তাহলে হয়তো ধীরে ধীরে এ ফসল চাষ করা থেকে বেরিয়ে আসবে কৃষকরা। যার ফলে কমবে অক্সিজেন, উৎপাদনে ন্যুয়ে পড়বে অর্থনীতি। এক সময় পাট ও পাটজাত দ্রব্যই ছিল বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস ছিল। স্বাধীনতার পর প্রথম বছর বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের শতকরা ৮৪ ভাগেরও বেশি অর্জিত হয়েছিল পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে। কিন্তু বর্তমানে তা তলানিতে।
‘সোনালী আঁশ বলে খ্যাত’ পাটের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পানির অভাবে পাটজাগ দেওয়া, বিভিন্ন সময়ে দরপতন, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পাটচাষিরা। বর্ষার ভরা মৌসুমেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়াসহ পানি খাল-বিলে না ওঠায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে শ্যালো মেশিন ও মোটর দিয়ে ডোবা-নালায় পানি তুলে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে তাদের বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক খরচের চেয়ে বেশি খরচ হওয়াসহ পাটের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। আর পাটের শুভ্রবর্ণ বদলে কালো রং ধারণ করছে। এর পরও উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকাগুলোতে ফসল উৎপাদন যেখানে অন্তরায় সেখানে পাট চাষ রীতিমতো অবাক করে দিয়েছে চাষিরা। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলছে পাটের জাত ১৪ দশমিক ৮ ডিএস (ডেসি সিমেন) পার মিটার পর্যন্তলবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। উপকূলের বিশাল লবণাক্ত জমিকে পাট চাষের আওতায় আনতে পারলে কৃষি ক্ষেত্রে বড় ধরণের পরিবর্তন আসবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দিন জানান, পাট একটি লাভজনক ফসল। তাছাড়া জেলার মাটি ও আবহাওয়ার কারণে ভালো উৎপাদনও সম্ভব। কিন্তু পাট রফতানি চাহিদা যদি ভালো না হয় তাহলে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবেন না। তার পরও লোকসান হওয়ার মতো ফসল এটি না। কিন্তু এবার চাষীদের খরচ একটু বেশি হয়েছে। তার কারণ হলো সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় তারা বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে পাট পচায়। এতে করে শ্রমিক বা পরিবহন খরচ বাড়তি লেগেছে।
পাট বিশেজ্ঞরা মনে করেন, পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত ও গবেষণার জন্য কর্তৃপক্ষ পয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে বাংলাদেশের পাট শিল্প আরও বহুগুণ এগিয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করবে। পূরণ হবে কৃষকের আশা ও প্রত্যাশা।

Check Also

আশাশুনিতে কর্মী সম্মেলনে আওয়ামী লীগকে জামায়াত নেতার কঠোর হুঁশিয়ারি বার্তা

স্টাফ রিপোর্টার:আশাশুনিতে ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর নিজস্ব কার্যালয় আলামিন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।