আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরাঃ উপকূলীয় অঞ্চলের ১৫টি জেলায় জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পূর্ণিমার জোয়ারে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। একদিকে নিম্নচাপ, অন্যদিকে শ্রাণের ভরা পূর্ণিমা। এর জেরে গত চার-পাঁচ দিন ধরে উত্তাল নদ-নদী। উপকূলের নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ার ছাড়া ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরাসহ উপকুলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা। পূর্ণিমা ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লবিত হচ্ছে। এদিকে, লঘুচাপের প্রভাাবে উপকূলীয় এলাকার জরাজীর্ণ ৫শ কিলোমিটার বেঁড়িবাধ যে কোন মুহূর্তে ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে। স্থানীয়রা বলছেন, নদীতে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ দুর্বল হয়ে গেছে। এ ছাড়া আইন অমান্য করে বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন না করে ভাঙন কবলিত এলাকার কাছের অংশ থেকে অনেকে বালু তুলছে। এ কারণে নদীতে সামান্য পানি বাড়লে এসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিচ্ছে।
সূত্রমতে, ষাটের দশকে দেশের ১৩ জেলায় ৫ হাজার ৮১০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকার ১৩৯টি পোল্ডার (বেড়িবাঁধ) নির্মাণ করা হয়েছিলো। শুনতে আশ্চর্য শোনালেও সত্যিটা হলো, স্বাধীনতার ৫০ বছরে উপকূল সুরক্ষায় নতুন একটি পোল্ডারও তৈরী করতে পারেনি বাংলাদেশ। পাকিস্তান আমলে তৈরী বেড়িবাঁধ সংস্কার আর পুনঃনির্মাণেই কেটে গেছে ৫০টি বছর! অর্ধশত বছরেরও আগে নির্মিত এসব বাঁধ এখন আর সামাল দিতে পারছে না সামুদ্রিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কা। ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল রেখার প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকা এখনো অরক্ষিত। পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ ও ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়সহ একের পর এক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে দেশের বাঁধের বেশিরভাগ অংশ নাজুক হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র সুপার সাইক্লোন সিডরে উপকূলীয় ৩০ জেলার ২ হাজার ৩৪১ কিলোমিটার বাঁধ বিধ্বস্থ হয়। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিলীন হয় ৩৯১ কিলোমিটার। ১ হাজার ৯৫০ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়া ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার ৩৮টি পোল্ডারের ১৬৫১ কিলোমিটার বেঁড়িবাধের মধ্যে ৬৮৪ কিলোমিটার বিধ্বস্থ হয়।
এর আগে ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে বিধস্ত হয় উপকূল। সে সময় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শেষ হয়নি এখনও। এ অবস্থায় যেকোনও সময় ঘূর্ণিঝড় হলে উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন উপকূলবাসী। মূলত সেই সময়ে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় উপকূলীয় এলাকা রাতের মধ্যেই বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছিল। আর এখনো সেই অরক্ষিত অবস্থা কাটেনি। বেড়িবাঁধ নির্মাণকারী পানি উন্নয়ন বোর্ড পুরো উপকূল রক্ষায় টেকসই কোনো প্রকল্প এখনো বাস্তবায়ন করেনি। বর্ষা আসলে কেবল জোড়াতালি দিয়েই সময়টা পার করে। ফলে সরকারি বরাদ্দের কোনো সুফল মেলে না। এলাকাবাসীরও কোনো উপকার হয় না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বর্তৃপক্ষ বলছে, ঘূর্ণীঝড় পরবর্তী উপকূল এখন পুরোপুরি সুরক্ষিত হয়নি। তবে সেই ঘূর্ণিঝড়ের পর এখন উপকূলের বেড়িবাঁধের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। মাতারবাড়ীতে টেকসই অর্থাৎ একশ’ বছর মেয়াদি বেড়িবাঁধ নির্মাণে জাপানি সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আর কুতুবদিয়া দ্বীপের বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকারি অর্থায়নে করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি অংশে বিদেশি অর্থায়নে বড় প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জি.এম মাসুদুল আলম বলেন, পূর্ণিমার জোয়ারে খোলপেটুয়া নদী এবং কপোতাক্ষ নদে পানি বৃদ্ধিরর ফলে গত চার-পাঁচ দিন ধরে উত্তাল নদ-নদী। উপকূলের নদীতে স্বাভাবিক জোয়র ছাড়া ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদুল হক বলেন, পূর্ণিমার জোয়ার ও নিম্নচাপের প্রভাবে নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ার বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের ওপর নজরদারি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
Check Also
আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …