আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরাঃ সাতক্ষীরায় ঘেরের আইলে সবজি চাষে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে চাষিরা। এক দিকে যেমন দিনকে দিন সবজির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে মাছের ঘেরে সবজির চাষাবাদ বাড়ছে। চাষিরা বলছে ঘেরের আইলে সবজি চাষ লাভজনক। তাই ঘেরের আইলে বিষমুক্ত উপায়ে সবজির চাষ এখন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ধান ও মাছের পাশাপাশি ঘেরে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে অধিক লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। তাই পুরুষের পাশা পাশি মহিলারাও এ পেশায় ঝুঁকে পড়েছে। বিগত কয়েকবছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে উঠা মাছের ঘেরের বেড়িতে (বাঁধে) সবজি চাষে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মৎস্য ঘেরগুলোতে যতদূর চোখ যায় সবুজের হাতছানি। ঘেরের আইলে ও ঘেরের আইলের উপরে নির্মিত সারি সারি মাচায় ঝুলছে বর্ষাকালীন সবজি করলা, লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়শ, পুঁইশাক ও কলাগাছ, বরবটি, চিচিংগা, ধুন্দল আর শসা। মৗসুমী ধান ও মাছ চাষ করে একসময় যাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটত, লাভজনক সমন্বিত সবজি চাষে এখন তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। ‘অল্প পুঁজিতে অনেক লাভের ফলে উৎসাহিত হয়ে এখন সমন্বিত এই চাষের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে এ অঞ্চলের সবজি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষির চরম বিপর্যয়ের মুখে বিশ্বের দরবারে গৌরবোজ্জ্বল এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে এখানকার চাষিরা। শত বিপত্তির মুখেও চাষিরা তিল তিল করে গড়ে তুলেছে কৃষি নির্ভর অর্থনীতি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে অক্লান্ত পরিশ্রম আর জলাবদ্ধতা ও লবণক্ষতার সাথে লড়াই করে এখানকার চাষিদের উৎপাদিত সবজি বিশ্বের দরবারের তৃতীয় স্থান করে নিয়েছে। কৃষকদের অবদানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে উত্থান ঘটেছে, তা আজ চোখ বড় করে দেখছে বিশ্ববাসী। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চীন ও ভারতকে টপকিয়ে গেছে বাংলাদেশ। দেশে বর্তমানে ৬০ ধরনের যে সবজি উৎপাদিত হচ্ছে, তার সিংশহ ভাগ উৎপাদিত হচ্ছে এ অঞ্চল থেকে । ঘেরের আইলে নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর সবজি এখন সকলের নজর কাড়ছে। পানির উপরে সবুজের আড়ালে দোল খাচ্ছে কৃষকের সপ্ন। মাঠের পর মাঠ মৎস্য ঘের যেন সবুজে ঢাকা পড়েছে। ঘেরের পানিতে গলদা , বাগদা আর পানির উপরে করলা, শশা, লাউ, কুমড়াসহ হরেক রকমের সবজি কৃষকের মন ছুয়ে যাচ্ছে বিশ্বের দরবারে। সারা বছর চাষের উপযোগী হাইব্রিডড বা উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বীজ সবজি চাষে এনেছে সাফল্য ও বৈচিত্র্য। জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃৃষকরা দীর্ঘদিন খাদ্য সংকটে ভুগে এখন নিজেরাই নিজেদের পুষ্টি ও খাদ্য তৈরি করছে। কৃষকরা এক ফসলি জমিতে এখন বহু ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করেছে। বর্তমান দেশে ও বিদেশে সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকরা দামও যেমন বেশি পাচ্ছে তেমনি কর্মসংস্থানের উৎস সৃষ্টি হচ্ছে।
কৃষি খামারবাড়ি সূত্র মতে চলতি মৌসুমে শুধু ঘেরের আইলে ৯০০ হেক্টর জমিতে শাক সবজি চাষ করা হয়েছে। সবজি চাষে জেলাতে চলছে এক মহা কর্মযোগ্য । দেখতেও নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর এক প্রকৃতি। জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃৃষকরা দীর্ঘদিন খাদ্য সংকটে ভুগে এখন নিজেরাই নিজেদের পুষ্টি ও খাদ্য তৈরি করছে। বিশেষত তালা উপজেলার মিঠাবাড়ী পাচপাড়া, সরুলিয়া, ধানদিয়া, নগরঘাটা, তৈলকুপি, যুগিপুকুরিয়া, মাগুরা, মাদরা, কৈ খালি, শুকতিয়া,খলিষখালি, দুধলাই, পাকশিয়া, মঙ্গলানন্দকাটী, টিকারামপুর, বাগমারা, বালিয়াদাহ, খেশরা, হরিহরনগর, গাছা, মুড়াগাছাসহ একাধিক এলাকার পতিত জমিতে এখন সবজি আর মাছের বিপ্লব। কৃষকরা এক ফসলি জমিতে এখন বহু ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করেছে। আরও জানা যায়, বর্তমান দেশে ও বিদেশে সবজির ব্যাপক চাহিদা হওয়ায় কৃষকরা দামও যেমন বেশি পাচ্ছে তেমনি কর্মসংস্থানের উৎস সৃষ্টি হচ্ছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মৎস্য ঘেরে শোভা পাচ্ছে লাউ, ঢেড়স, করলা, মিষ্টি কুমড়া, ছোট করলা, ঝিঙে, বরবটি, শিম, কুমড়া, পুইশাক, পেঁপে, শসা, খিরাইসহ বিভিন্ন। আইলে বিশেষ পদ্ধতিতে বাঁশ ও নেট দিয়ে ঝুলন্ত মাচা তৈরি করা হয়। তারপর বিষমুক্ত সবজির আবাদ করে বাড়ন্ত গাছ মাচার ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে জায়গা কম লাগে ও অল্প পরিচর্যায় ভালো ফসল পাওয়া যায়। স্থানীয় কৃষকরা বলেন, দেশে ও বিদেশে বর্তমানে সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকায় গত কয়েক বছরে মাছের ঘেরের আইলে সবজি চাষে ভাগ্যের পরিবর্তন এসেছে তাদের জীবনে। বিশেষ করে মাছের ঘেরে মাচা পদ্ধতিতে সবুজ সবজির চাষ কৃষিতে নব দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে চাষিরা। জানা যায়, মাছের ঘেরের আইলে বিশেষ পদ্ধতিতে বাঁশ ও জাল দিয়ে ঝুলন্ত মাচা তৈরি করা হয়। তারপর বিষমুক্ত সবজির আবাদ করে বাড়ন্ত গাছ মাচার ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে জায়গা কম লাগে ও অল্প পরিচর্যায় ভালো ফসল পাওয়া যায়। সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ি বিলে শতশত বিঘা জমির মাছের ঘেরে মাচা পদ্ধতিতে লাউ, কুমড়া ও করলার চাষাবাদ করা হয়েছে। মাচায় ঝুলছে হাজার হাজার করলা, শতশত লাউ ও কুমড়া। একই সাথে ঘেরের পাড়ে লাগানো হয়েছে পুঁইশাক, ঢেঁড়স ও কলা গাছ।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি খামার বাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরায় যে পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়, তার উল্লেখ যোগ্য শতাংশ আসে ঘেরের আইলে অথবা ঘেরের মাচা থেকে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় চলে যায়। এছাড়া লাভজনক হওয়ায় মাচা পদ্ধতিতে চাষাবাদ দিন দিন বাড়ছে। জেলাতে সবজি চাষে চাষীদের আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। সবজি চাষে বিভিন্ন করণীয় সম্পর্কে তাদের সচেতন করা হচ্ছে।
Check Also
সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …