সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ২২ লাখ মানুষের বাস। কৃষির সঙ্গে যুক্ত ৫ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৬টি পরিবার। ২০০৮ সালে কৃষির সঙ্গে যুক্ত ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৮টি পরিবার
সাতক্ষীরায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে ফসলি জমি। অথ্যাধিক জনসংখ্যার চাপে প্রতিনিয়ত বসতবাড়ি নির্মাণ, ইটভাটা, মৎস্য ঘের, কাঁকড়া খামার ও বিভিন্ন অপরিকল্পিত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে কৃষি জমিতে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার কৃষি জমিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। এটিও কৃষি জমি কমার অন্যতম একটি কারণ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০০১ সালে জেলায় চাষযোগ্য কৃষি জমি ছিল এক লাখ ৭৩ হাজার ৬০৪ হেক্টর; ২০১০-১১ সালে সেটি দাঁড়ায় এক লাখ ৭০ হাজার ৪১৯ হেক্টরে। ২০২২-২৩ সালে কৃষি জমির পরিমাণ আরও কমে দাঁড়ায় এক লাখ ৬৫ হাজার ২৪৫ হেক্টরে। অর্থাৎ দুই দশকে জেলায় প্রায় সাড়ে আট হাজার কৃষি জমি কমেছে।
জেলা পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য বলছে, সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ২২ লাখ মানুষের বাস। কৃষির সঙ্গে যুক্ত ৫ লাখ ১৪ হাজার ৩৬৬টি পরিবার। ২০০৮ সালে কৃষির সঙ্গে যুক্ত ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ১৭৮টি পরিবার। কৃষি জমির পরিমাণ কমলেও কৃষির সঙ্গে যুক্ত পরিবার বেড়েছে। জেলায় ভূমিহীন বা প্রান্তিক কৃষক বেড়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে আশঙ্কাজনক হারে কৃষি জমি কমছে। কৃষি জমি বাঁচাতে তেমন কোনো পদক্ষেপ না থাকাও অন্যতম একটি কারণ।
জানা গেছে, কৃষি জমি বাঁচাতে “কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন” নামে একটি প্রস্তাবিত আইন ৭ বছর ধরে ঝুলে রয়েছে। সম্প্রতি আইনটির প্রাথমিক খসড়া (বিল) সবার মতামতের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আইনটিতে দেশের সব ধরনের জমির শ্রেণি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এতে কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, আবাসন, নদী, সেচ, নিষ্কাশন, পুকুর, জলমহাল, মৎস্য এলাকা চিহ্নিত করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, “আবাসন ও শিল্পোন্নয়নের কারণে জেলায় কৃষি জমির পাশাপাশি জলাশায়ও কমে যাচ্ছে। পুকুরগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তবে আমরা শিল্প কারখানার ক্ষেত্রে ছাত্রপত্র দিলেও জোরালোভাবে দেখছি সেটা কৃষি জমি কিনা। যেখানে দুই ফসল হয় সেখানে কোনোভাবেই শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ছাড়পত্র দিচ্ছি না।”
সাতক্ষীরা জলবাযু পরিষদের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী বলেন, “গত কয়েক বছরে জেলার অনেক কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে গেছে। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অসাধু ইটভাটা মালিকের তৎপরতা, অবকাঠামো নির্মাণ, কৃষিতে উৎপাদন কমে যাওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধি- প্রভৃতি কারণে কৃষি জমি কমে যাচ্ছে।”
ইটভাটা বা কৃষি জমিকে অকৃষি খাতে ব্যবহার করার অভিযোগ থাকলেও জেলা প্রশাসন বলছে, তারা এ বিষয়ে তৎপর। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিষ্ণুপদ পাল বলেন, “কৃষি জমিতে ইটভাটা, পুকুর খনন বা মাছের ঘের তৈরির খবর জানা মাত্রই আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি।”