বাস মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ
সড়কে ব্যরিকেড দিয়ে ইজিবাইক-মহেন্দ্র থেকে যাত্রী নামিয়ে নেওয়া হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: জেলার প্রতিটা সড়ক-মহাসড়কে চলমান বাস, মহেন্দ্র ও ইজিবাইক থেকে মাসিক ৩৬ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মিনিবাস, মহেন্দ্র ও ইজিবাইক মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আদায়কৃত বিপুল পরিমান টাকা কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সব ধরণের পরিবহন সেক্টর বাস মালিক সমিতির লাগামহীন চাঁদাবাজির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে । সাতক্ষীরা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির নিয়োজিত লোকজনই এসব টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সুত্রে প্রকাশ, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর বাস মিনিবাস মালিক সমিতির নির্বাচনে অধ্যক্ষ আবু আহমেদ-গোলাম মোরশেদ পরিষদ নির্বাচিত হয়। নতুন কমিটি ক্ষমতায় আসার পরে তাদের নিয়োজিত লোকজন বিভিন্ন রুটে বাস প্রতি দিনে ৬০০ টাকা, মাইক্রোবাস সমিতি থেকে মাসিক ১ লক্ষ ৩০ হাজার, মাহিন্দ্র থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের রাস্তায় চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে নিরূপায় হয়ে বাস মালিক সমিতিকে চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। সাতক্ষীরা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির অধীনে ২৮৭ টি বাস রয়েছে। এর মধ্যে ১৮৫ টি বাস নিয়মিত বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। এসব গাড়ী থেকে দৈনিক ৬০০ টাকা হারে চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। সাতক্ষীরার পরিবহন থেকে ট্রিপ প্রতি ৪০০ টাকা, বিনেরপোতা এলাকা থেকে ৩০০ টাকা এবং যশোর রোডে গাড়ি প্রতি ২৫০ টাকা চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সাতক্ষীরা থেকে প্রতাপনগর গামী মাহিন্দ্র, সঙ্গীতা মোড় টু কুলিয়া রুটের মাহিন্দ্র, নিউমার্কেট টু ঘোনা রুটের মাহিন্দ্র সমিতিগুলো থেকে মাসিক ২৫ হাজার টাকা, খুলনা রোড থেকে পাটকেলঘাটা রুটে মাহিন্দ্র সমিতি থেকে মাসিক ৫৫ হাজার টাকা, সাতক্ষীরা থেকে কলারোয়া রুটে মাহিন্দ্র সমিতি থেকে মাসিক ৫০ হাজার টাকা হারে চাঁদা উত্তোলন করছে বাস মালিক সমিতি। এছাড়াও সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর গামী মাইক্রো সমিতি থেকে মাসিক ৭০ হাজার, পোস্ট অফিস মোড় থেকে খুলনা গামী মাইক্রো থেকে মাসিক ৬০ হাজার টাকা হারে চাঁদা তুলছে মালিক সমিতি।
সুত্রে প্রকাশ, মাধবকাটির বিল্লাল যশোর রোডে, কামালনগরের শাহীন মেডিকেল কলেজ এলাকায়, রসুলপুরের কামাল বিনেরপোতা এলাকায় মালিক সমিতির হয়ে চাঁদা উত্তোলন করে। চাঁদা আদায়ের প্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেন বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম কালু।
গত ৭ আগস্ট ঝাউডাঙ্গার ফজলুর রহমান সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোড মোড় এলাকায় ইজিবাইক থেকে চাঁদা উত্তোলনের সময় সাধারণ শ্রমিকদের হাতে আটক হন। পরে বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম কালুর নেতৃত্বে মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ফজলুর রহমানকে মালিক সমিতির স্টার্টার দাবী করে তাকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে যায়। ফজলুর রহমান কর্তৃক প্রকাশ্যে চাঁদা উত্তোলনের ঘটনা জানাজানি হলে বাস মালিক সমিতির একের পর এক চাঁদাবাজির ঘটনা সামনে আসতে থাকে। বাস মালিক সমিতির চাঁদাবাজি ও শ্রমিক হয়রানীর প্রতিবাদে গত ৮ আগস্ট জাতীয় শ্রমিক লীগ সাতক্ষীরা শহরে বিক্ষোভ মিছিলও বের করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাস মালিক সাতনদীকে জানান, “রাস্তায় গাড়ি বের করলেই মালিক সমিতিকে ৬০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে। চাঁদা না দিলে গাড়ি চলতে দেয় না বিধায় বাধ্য হয়ে মালিক সমিতিকে চাঁদা দিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে।”
সাতক্ষীরা টু কুলিয়া ও সাতক্ষীরা টু ঘোনা রুটের একাধিক মহেন্দ্র চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, “তারা তাদের সমিতির মাধ্যমে বাস মালিক সমিতিকে মাসিক নির্দিষ্ট অংকের চাঁদা দিচ্ছেন। চাঁদা না দিলে তো গাড়ি চলতে দেওয়া হয়ই না উপরন্তু চাঁদা দেওয়ার পরেও অনেক সময় তাদের গাড়িগুলো রাস্তায় চলতে মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বাধা সৃষ্টি করছে। শহরে প্রবেশের সাতক্ষীরা টু আশাশুনি রুটের ধুলিহর এলাকায়, খুলনা রোড মোড়, সাতক্ষীরা টু খুলনা রুটের বিনেরপোতা এলাকায়, সাতক্ষীরা টু যশোর রুটের মাধবকাটি এলাকায়, সাতক্ষীরা টু কালিগঞ্জ সড়কের বাকাল মেপিকেল কলেজ এলাকায় মালিক সমিতির ভাড়াটে লোকজন লাঠি নিয়ে সড়ক অপরোধ করে ইজিবাইক-মহেন্দ্র থেকে যাত্রীদের নামিয়ে নিচ্ছেন। যাত্রী নামাতে আপত্তি করলে ইজিবাইক মহেন্দ্র চালকদের উপর চড়াও হন মালিক সমিতির লোকজন। তাছাড়া মাছ পথে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ায় ভোগান্তি পেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। পরবর্তী বাস না আসা পর্যন্ত তারা গন্তব্যে যেতে পারেন না।
সব মিলিয়ে মালিক সমিতির এমন লাগামহীন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ বাস মালিক, পরিবহন শ্রমিক, ইজিবাইক-মহেন্দ্র চালক সহ সাধারণ মানুষ। বাস মালিক সমিতির চাঁদাবাজি ও সড়কে হয়রানী বন্ধের জন্য সড়ক বিভাগ সহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।