বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, গুলি-আক্রমণ উপেক্ষা করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আর কালবিলম্ব নয়, এখনই সবাইকে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামতে হবে। বর্তমান দানবীয় সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে তাদের বিদায় করতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিএনপি একা নয়, সারা বিশ্ব সঙ্গে আছে।
শুক্রবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে সরকার পদত্যাগের এক দফা এবং মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানসহ নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে এ সমাবেশ হয়।
দুপুর ১টা থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হন। ২টার আগেই কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিনকে কারাদণ্ড প্রদানের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতেন। বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের মিটিংয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। তাদের কারাদণ্ড দিয়েছে। এ সরকার এত ভীত সন্ত্রস্ত্র যে, তাদের দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে। আজকে সারা বিশ্ব সরকারের নিন্দা জানিয়েছে এবং বলেছে- অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন রেজুলেশন করেছে, অবিলম্বে এ মামলা বাতিল করে তাদের মুক্ত করা হোক এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হোক। মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হোক।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপের সুরে বলেছেন, ‘এত ভালো ভালো নির্বাচন করি আর দেশে-বিদেশে প্রশ্ন করে নির্বাচন ভালো হয় না’। এটাই হচ্ছে এই বছরের শ্রেষ্ঠ কৌতুক। শেখ হাসিনা ভালো নির্বাচন করে, আওয়ামী লীগ ভালো নির্বাচন করে- এ কথা ঘোড়াও বিশ্বাস করে না। ওরা শুনলে হাসে তাই না; এই হচ্ছে অবস্থা।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে দাবি করে তিনি বলেন, নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নীরব মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে। ভারতে টাইমস অব ইন্ডিয়া একটা নিবন্ধ ছাপিয়েছে- বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন লাইফ সাপোর্টে। তারপরও তাদের (সরকার) বোধোদয় হয় না। চলে যায় বিদেশে, চলে যায় সেলফি তোলার জন্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, শুধুমাত্র সরকার নয়, এই প্রশাসনের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। কারণ প্রশাসনের সব স্তরে আওয়ামী লীগ খুঁটি গেড়ে বসেছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের লোকেরাই প্রশাসনে রয়েছে। সুতরাং তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেব না। আর এ কারণেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানতে হবে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকার শুধু গণতন্ত্র হত্যাই করেনি, মানুষের সব মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। এর জবাব একদিন সরকারকে দিতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সরকার হামলা-নির্যাতন, গুম-খুন করে সাময়িক কিছু সময়ের জন্য তার আয়ু বাড়াতে পারে, তবে তাদের যেতে হবে। সময় শেষ, ডেট এক্সপায়ার্ড হয়ে গেছে। তাদের বিদায় নিতেই হবে।
মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, উলামা দলের শাহ নেসারুল হক, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।