সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনের প্রায় আড়াই বছর পর মেয়র পদ নিয়ে করা একটি নির্বাচনী মামলার রায়ে পরাজিত প্রার্থী ফারুক আহমদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত এবং নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আরিফুজ্জামান গতকাল বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করেন। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ও দুর্নীতি দমন ট্রাইব্যুনাল সিলেটের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আলী মর্তুজা কিবরিয়া।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনে ২ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমদকে পরাজিত ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আবদুল আহাদের বৈধ ভোট ঘোষণা করা হয় ২ হাজার ৮৩টি এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ফারুক আহমদের বৈধ ভোট ঘোষণা করা হয় ২ হাজার ৮১টি। পরে দুই ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল নারকেলগাছ প্রতীকের প্রার্থী আবদুল আহাদকে।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ওই বছরই সিলেট যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালত ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন পরাজিত প্রার্থী ফারুক আহমদ। মামলায় পাঁচটি ভোটকেন্দ্রের ফলাফল পুনর্গণনার আবেদন করেন তিনি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, উভয় পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে কয়েক দফায় আদালতে ভোট পুনরায় গণনা করা হয়। বাদী ও বিবাদী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পুনরায় ভোট গণনায় ফারুক আহমদ ৪ ভোট বেশি পান। এরপর বৃহস্পতিবার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গতকাল সন্ধ্যায় রায় ঘোষণা করেন বিচারক। এতে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ফারুক আহমদ জগ প্রতীকে বৈধ ভোট ২ হাজার ৭১টি এবং আবদুল আহাদের বৈধ ভোট ২ হাজার ৬৭টি বলে প্রকাশ করা হয়।
আদালতের রায়ে মেয়র নির্বাচিত ফারুক আহমদের আইনজীবী আলী মর্তুজা কিবরিয়া প্রথম আলোকে, প্রায় আড়াই বছর আগের ওই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট পুনরায় গণনার দাবিতে মামলা করেন প্রার্থী ফারুক আহমদ। বহুল আলোচিত এ মামলার রায় দীর্ঘ সময় পর প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে ন্যায়বিচার পেয়েছেন বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
ফারুক আহমদ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আদালত যে মানুষের শেষ ভরসা, সেটিই প্রমাণ হয়েছে। ভোট পুনর্গণনার রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমি আইনি লড়াই করেছিলাম।’
এ বিষয়ে জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল আহাদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের রায় তিনি এখনো পাননি। রোববার আদালতের রায়ের নকল তুলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁর আইনজীবী শামসুল হক জানান, রায় প্রকাশের বিষয়ে তিনি অবগত নন। আবদুল আহাদের বিরুদ্ধে রায় গেলে তাঁর সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন। প্রয়োজন হলে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দুই ভোটের ব্যবধানে আবদুল আহাদকে বিজয়ী ঘোষণা করার পর কারচুপির অভিযোগ তোলেন মেয়র প্রার্থী ফারুক আহমেদ। পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫টি কেন্দ্র জকিগঞ্জ সরকারি কলেজ কেন্দ্র, মধু দত্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়, আইডিয়াল কেজি স্কুল কেছরী, মাইজকান্দি মাদ্রাসা কেন্দ্র ও জকিগঞ্জ গার্লস হাইস্কুল কেন্দ্রের ভোট পুনরায় গণনার জন্য ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ফারুক আহমদ। এ ছাড়া উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও করেন। তবে উচ্চ আদালতের আদেশের আগেই গেজেট প্রকাশ হয়ে যায়। পরে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন তিনি।