বির্পয়ের মুখের দেশের অর্থনীতি

॥ উসমান সরকার॥
বিপর্যস্ত ও ভুল পথে নিয়ে যাওয়া অর্থনীতির সমস্যা সমাধানে বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি অবলম্বন করেই সুফল পেয়েছে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কা। দেশীয় ও বিদেশি অর্থনীতিবিদরা বাংলাদেশ সরকারকেও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতিগুলো মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু সরকারের মন্ত্রীরা সমস্যা সমাধানের চেয়ে একে অপরকে দোষারোপেই সময় পার করছেন। এতে নিত্যপণ্যের বাজার চলে গেছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে মূলধনী যন্ত্রপাতি আনছেন না বিনিয়োগকারীরা, অর্থপাচার বৃদ্ধি পাওয়ায় রেমিট্যান্সের বড় অংশ চলে যাচ্ছে হুন্ডিতে, কমছে রিজার্ভ। এর প্রভাবে খেলাপি ঋণ ও তা আদায়ে ব্যাংকে বাড়ছে মামলার সংখ্যা। সব মিলিয়ে ভালো নেই অর্থনীতির কোনো সূচকই। মূল্যস্ফীতির খড়গে কোনোমতে বেঁচে থাকতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। দরিদ্র শ্রেণি আরো দরিদ্র হয়ে পড়ছে।
সমস্যা সমাধান না হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে নিত্যনতুন সংকট যোগ হচ্ছে। খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি, টাকার মান কমতে থাকায় আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় ঘাটতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, রিজার্ভ কমে যাওয়ায় শিল্পকারখানা ও গৃহসামগ্রীর কাজে জ্বালানির সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া, জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির হার আরও কমে যাওয়ার মতো পুরনো সমস্যার মধ্যে নিপতিত রয়েছে বাংলাদেশ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বৈদেশিক ঋণপ্রাপ্তি কমে যাওয়া এবং আগের ঋণ পরিশোধের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সমস্যা সমাধানে লোকদেখানো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, যা কোনো ভূমিকা রাখছে না অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে। সমস্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় বাংলাদেশের সক্ষমতাও কমে যাচ্ছে দিন দিন।
আন্তর্জাতিক ও দেশীয় অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ না মেনে চলায় দেশের অর্থনীতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে দিন দিন। এর সঙ্গে গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকার অনিশ্চয়তা অর্থনীতিকে আরো নাজুক করে ফেলেছে। এমন সময়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া না হওয়া নিয়ে বিতর্ক সামনে চলে এসেছে। তাতে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা আরো খারাপ হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতি বুঝতে পারলেও বাস্তব সমাধানের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না সরকারের তরফ থেকে।
শুধু কথার ফুলঝড়িতেই সময় পার করছেন তারা। জনগণকে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বলে আসছেন, সমস্যা কেটে যাবে দুই-তিন মাসের মধ্যে। কিন্তু সংকট আরো জেঁকে বসায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে দিন দিন।
দেশের অর্থনীতির এ সংকট সমাধান করতে পরামর্শ দিয়ে গত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। চারটি সংকট চিহ্নিত করে দিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বলেছিল, এসব সমস্যা সমাধান করতে না পারলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট আরো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তথ্যানুযায়ী, ওই সময়ে সংস্থাটি জানিয়েছিল, এগুলো হচ্ছে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি, টাকার মান কমতে থাকায় আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় ঘাটতি দেখা দেবে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেলে শিল্পকারখানা ও গৃহসামগ্রীর কাজে জ্বালানির সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে উৎপাদন যেমন ব্যাহত হবে, তেমনি খরচও বাড়বে। এসব কারণ সমাধান করতে না পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এতে দেশের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির হার আরও কমে যাবে।
ওই প্রতিবেদনে অর্থনীতি চলতি বছরে আরও কঠিন মন্দার মুখোমুখি হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশেও প্রবৃদ্ধির হার আগের চেয়ে দেড় শতাংশ কমবে। এমন ধারণা দিয়ে বিশ্বব্যাংক বলছে, গত বছরের জুনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হওয়ার যে আভাস দিয়েছিল, তা আরো কমে এ অর্থবছরে ৫ দশমকি ২ শতাংশ হবে। যদিও সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সম্প্রতি তা ১ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করেছে।
সমস্যা স্বীকার করলেও তা সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বাজারে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের থাকলেও তারা নীরব রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিন্ডিকেটকে দায়ী করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। উল্টো ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে গিয়ে ডিমের মতো নিজস্ব কৃষিপণ্যটিও আমদানি করার সুযোগ খুলে দিয়েছে। এতে ভারতীয় ও দেশীয় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা।
সমস্যা সমাধান না হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে নিত্যনতুন সংকট যোগ হচ্ছে। পুরনো সমস্যার সঙ্গে যোগ হয়েছে বৈদেশিক ঋণপ্রাপ্তি কমে যাওয়া এবং আগের ঋণ পরিশোধের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা, সামনের দিনগুলোয় বাংলাদেশকে আরও কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে সরকার দেশি-বিদেশি নানা চাপের মুখে রয়েছে। এর মধ্যে অর্থনীতির সংকট সরকারের জন্য আরও মারাত্মক চ্যালেঞ্জ বয়ে আনতে পারে।
অর্থনীতির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে দুই বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গেছে। প্রতি মাসে প্রায় এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নেমে এসেছে ২১ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। তারও কয়েকদিন আগে এ রিজার্ভ নেমে এসেছিল ২১ দশমিক ৪৮ বিলিয়নে। দুই বছর আগে যেখানে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে আড়াই মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোও কষ্টকর হবে। এ সমস্যা চলতে থাকায় প্রথমবারের মতো দেশের ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট (আর্থিক হিসাব) ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে।
এ সংকটের মধ্যে পুরনো আমদানি দায় হিসেবে এক বিলিয়ন ডলারের ডেফার্ড এলসির (বিলম্বিত ঋণপত্র) দায় পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। এর সঙ্গে বাড়তি চাপ হচ্ছে, সরকারি-বেসরকারি বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ, যা নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে অর্থনীতিতে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার ও সরকারি গ্যারান্টিতে পাওয়া বিদেশি ঋণের মধ্যে ৩১৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হবে, যার মধ্যে ২৪৩ কোটি ডলার আসল ও সুদ বাবদ ৭৬ কোটি ডলার। অবশিষ্ট প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধ করতে হবে বেসরকারি খাতকে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ শোধ করতে হবে ১৬২ কোটি ডলার।
এতে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। ব্যাংকের পাশাপাশি খোলাবাজারেও ডলারের সংকট আরো জটিল আকার ধারণ করেছে। এক্সচেঞ্জগুলোয় অভিযান চালানোয় তারা বিদেশি মুদ্রার লেনদেন প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। এতে খোলাবাজারের পরিবর্তে ডলার এখন কেনাবেচা হচ্ছে কালোবাজারে। সাধারণ মানুষ চিকিৎসাসহ জরুরি প্রয়োজনে বিদেশ যাওয়া সীমিত করে ফেলেছেন। চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে পারছেন না।
অর্থনৈতিক এমন সংকট কাটাতে সবচেয়ে দ্রুত সমাধান হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও বিদেশি ঋণ। কিন্তু সরকারের জনসমর্থন না থাকা, অগণতান্তিক ও মানবাধিকারের লঙ্ঘনের মতো অপরাধ এবং অর্থপাচারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি ঋণও পাচ্ছে না বাংলাদেশ। অথচ অতীতে চাহিদামতোই পাওয়া যেত বিদেশি মুদ্রায় ঋণ। এতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকেও তুলনামূলক কম ঋণ পাচ্ছে সরকার। শুধু বিদেশি ঋণই নয়, টাকায় ধার করাও সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। তারল্য সংকটে থাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারকে ধার দিতে না পারায় নতুন টাকা ছাপিয়ে ঋণ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক; অর্থাৎ ডলার সংকটের কারণে টাকার ক্রমাগত অবমূল্যায়ন, টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেওয়া ও আমদানি বিধিনিষেধ আরোপ করায় রেকর্ড মূল্যস্ফীতির মুখে পড়েছে দেশ।
একদিকে বিপুল ঋণ পরিশোধের চাপ; অন্যদিকে ডলার সংকট। পর্যাপ্ত রিজার্ভ না থাকলে জরুরি খাদ্যপণ্য, জ্বালানি তেল, এলএনজি কিংবা কয়লার মতো গুরুত্বপূর্ণ আমদানির জন্য অর্থ সরবরাহ বা বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হতে পারে সরকার। এমন আভাস আগেই দিয়ে রেখেছিল বিশ্বব্যাংক। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন এলসির দায় পরিশোধের সময় বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে এমন পরিস্থিতিতে চাইলেও যেকোনো ঋণ পরিশোধের সময় বাড়াতে ঋণদাতারা রাজি হয় না। এর আগে বেসরকারি পর্যায়ের স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো হলেও এখন অনেক আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান মেয়াদ বাড়াতে রাজি হচ্ছে না।
এদিকে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নে বিদেশি বিনিয়োগকারী বিশেষ করে পুঁজিবাজারের বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের লোকসানের ঝুঁকির মুখে থাকেন। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিজের দেশে ফিরিয়ে নেন। এটিকে ক্যাপিটাল ফ্লাইট বলা হয়। ক্যাপিটাল ফ্লাইট হলো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, মুদ্রার অবমূল্যায়ন বা পুঁজি নিয়ন্ত্রণ আরোপের মতো ঘটনার কারণে একটি দেশ থেকে আর্থিক সম্পদ এবং মূলধনের একটি বড় আকারের বহির্গমন।
বাংলাদেশে টাকার অবমূল্যায়নের শঙ্কায় ২০১৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে পুঁজিবাজার থেকে বিদেশিরা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। এর পরিমাণ এক বছরে কিছুটা কমেছে। কারণ হলো পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করায় মৌল ভিত্তির প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশিরা চাইলেও শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। তবে পুঁজিবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ আটকানো গেলেও বিদ্যমান পরিস্থিতি নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে।
ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশে ব্যবসা করা অনেক বিদেশি কোম্পানি তাদের মুনাফা বিদেশে অবস্থিত মূল কোম্পানিতে পাঠাতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর অনুমোদন দিচ্ছে না। এটিও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টের ক্ষেত্রে বাধা। দেশের সার্বিক অর্থনীতি মূল্যায়ন করে বিশ^ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত বছরের প্রথম দিকে আমরা যেভাবে সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি, এবার আমাদের সেই সক্ষমতা নেই। একই সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক অবস্থাও অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে। এতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনো সমস্যার মূলে হাত না দিয়ে আমরা লোকদেখানোর জন্য দু-একটা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমরা এখনো বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। ডলার বাজারে বিভিন্নভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে। দাম নির্ধারণ করে সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এটা ব্যবসায়ীদের কালোবাজারিতে উসকে দেবে।’ ড. জাহিদ মনে করেন, মূল্য নির্ধারণ না করে সরকারের উচিত ছিল যারা কালোবাজারিতে যুক্ত, তাদের আইনের আওতায় আনা। এখন খুচরা ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রিতে তাদের লাভ না দেখলে বেচাকেনা বন্ধ করে দিতে পারেন। এতে সমস্যা আরও জটিল হতে পারে।
অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি; বিশেষ করে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হচ্ছে সুদের হার বাড়ানো, যেটির সফলতা বিশ্বের অধিকাংশ দেশ পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো সেই পথে হাঁটেনি। আইএমএফের চাপে পড়ে সুদহার বাজার ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার নামে যে পদ্ধতিটি চালু করেছে, তার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে সুদহার কার্যত তেমন একটা বাড়েনি। ফলে মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখছে না।
বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিতে পারছে না। আর টাকার সরবরাহ বাড়ায় মূল্যস্ফীতিও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সর্বশেষ গত আগস্টে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ শতাংশে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, যা গত এক দশকে সর্বোচ্চ। দেশের রিজার্ভ যদি আরও কমে যায়, তাহলে সামনের দিনগুলোয় গাণিতিক হারে বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতি, যেমনটা ঘটেছে শ্রীলঙ্কার বেলায়। এখন সকারের নিয়ন্ত্রণ ও সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে অর্থনৈতিক সংকট সমাধান। এজন্য প্রয়োজন সরকারের উদ্যোগে সব রাজনৈতিক দল ও মতের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। তা না হলে সমস্যার গর্তে পড়ে যাবে সরকার।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।