ছয় পংক্তির কবিতার সমাহার ‘‘আকাশ হতে আসে আলো’’ -এম জাকির হোসাইন

এনামুল খাঁন আধুনিক সময়ের একজন সত্যান্বেষী, অধম্য প্রতিবাদী ও উদীয়মান তরুন কবি। তরুন প্রজন্মের কোমল মনে সঞ্জিবনী শক্তির মতো উদ্দিপনার ঝর্ণাধারা বইয়ে দিয়েছে কবির ইসলামি রসবোধে ভরপুর মোটিভেশনাল কবিতার বই “আকাশ হতে আসে আলো’’। কবি ও কর্মকর্তার দ্বা›িদ্বক অবস্থানে থেকে তিনি আঁধারের মাঝে ইসলামিক মূল্যবোধের আলো ছড়িয়ে দিয়ে জয় গান গেয়েছেন কবিতার। তাই তো পাঠক মহলে ইতোমধ্যে সাড়া জুগিয়েছে এ কবিতার বই। “আকাশ হতে আসে আলো’’ বইটিতে ০৬ লাইনের মোট ২৩৭ টি কবিতা রয়েছে। সাত ফর্মার বইটি প্রকাশ করেছে এ.জেড.এম তৌহিদের মম প্রকাশ এবং প্রচ্ছদ করেছেন খালেকুজ্জামান এল্জি। বইয়ের প্রতিটি কবিতায় রয়েছে আলাদাভাবে এক একটি শিক্ষনীয় বিষয়। যেমন মাতৃভক্ত কবি তার “মায়ের চরণ” কবিতায় বলেন,
মায়ের শীতল হাতের ছোঁয়ায় শান্তি এবং উন্নতি,
মা যদি হন বেজার তবে দুই জগতে ঢের ক্ষতি।
এছাড়া বইটি মায়ের নামে উৎসর্গ করে লিখেছেন;
মায়ের দোয়ার পরশ পাথর হাতটি যদি মাথায় রয়,
দুনিয়াতে কে আছে যে ঠেকিয়ে দিবে তার বিজয়?

এসব পংক্তি হতে আমরা যেমন কবির মাতৃভক্তির বিষয়ে নিশ্চিত হই, একই ভাবে পাঠক মাতৃভক্তিতে উৎসাহিত হন।

বইয়ের প্রথম কবিতায় তিনি ¯্রষ্টার নিকট প্রার্থনা জানিয়ে লিখেছেন,
এমন লেখা লেখাও যেন মরার পরেও পূণ্য পাই,
সত্য কথা মধুর করে বলার মতো শক্তি চাই।

এছাড়া বইটির প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি লিখেছেন,
খ্যাতি চাইনা, পদ চাইনা, নাই পদক-পদবীর হাহাকার,
আমার লেখা ও কাজে যেন হয় মানুষের কিছু উপকার।

“কারণ মানুষ উপকৃত্ব হলে মহান ¯্রষ্টা আল্লাহ রব্বুল আলামিন খুশি হবেন। আল্লাহ খুশি হলে তিঁনিই আমাকে উত্তম পুরষ্কার দিবেন ইনশাআল্লাহ।” -এ থেকে বুঝা যায় পাঠক যেন বইটি পাঠ করে কল্যাণ লাভ করে, ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ হয় সে উদ্দেশ্যেই তার লিখনি চালিয়েছেন।
‘‘আকাশ হতে আসে আলো’’ একটি মোটিভেশনাল কাব্যগ্রন্থ। প্রত্যেক মানুষের জীবনে দুঃখ-দুর্দশা, জ¦ালা-যন্ত্রনা, আঘাত আসবেই। কিন্ত তাতে হতাশ হলে বা থেমে থাকলে চলবেনা, তাকে এগিয়ে যেতে হবে দুর্বার গতিতে। এবিষয়টি তিনি তাঁর ‘‘আঘাত’’ কবিতায় সুন্দরভাবে বলেছেন,

আঘাত যতই আসে আসুক শক্ত করে ধরব হাল,
ঝড়ের মাঝে উড়িয়ে দেব জীবন নায়ের রঙিন পাল।
আঘাত যদি কখনও তোর এই জীবনে না-ই আসে,
বুঝবিনে তুই দুর্দিনে তোর কারা ছিল চার পাশে।
আঘাতে যে ঘুরে দাড়ায় সেইতো আসল বীর জোয়ান,
আঘাতে যে ভেঙে পড়ে সে-ই কাপুরুষ, সে-ই নাদান।

শোষন বঞ্চনা থামাতে পারেনা কবিকে, তাই কবিতায় তিনি পাঠককে উদ্বুদ্ধ করে লিখেছেন-

ভয় নাহি যার মৃত্যুকে তার কিসের বলো পিছুটান,
যতবারই বঞ্চিত হই গাইবো ততই বিজয় গান।
বঞ্চনা তো মনের মাঝে সৃষ্টি সুখের বীজ বোনে,
চোখের পানি পড়লে তাতে মহীরুহ হয় মনে।
কিংবা ‘‘ঝড়’’ কবিতায় তিনি বলেন,
যাদের জীবন যত বড় লড়াইটাও তার সমান,
লড়তে যেজন পারেনা তার ক্যামনে বলো বাড়বে মান!
কিংবা যখন বলেন;
ন্যায়ের পথে থেকেও যারা এই জগতে কষ্ট পাও,
তারাই পাবে সুখের ভুবন, হতাশ হয়ে ক্যান বা যাও!
অন্যের ক্ষতি না করার প্রত্যয় নিয়ে পাঠককে উদ্বুদ্ধ করতে তিনি কবিতার ভাষায় কি চমৎকারভবে উচ্চারণ করেন,

এ জগতে আমার দ্বারা কারও কোন ক্ষতি না হোক,
একটু হলেও স্বস্তিতে থাক চারিপাশের সকল লোক।

এই রঙ্গের দুনিয়ায় মানুষ ক্ষণিকের মেহমান মাত্র। মহান আল্লাহ পাকের বন্দেগীর জায়গা এ পৃথিবী। শুভ অশুভ দুই ধারার মাঝে ছেড়ে দিয়ে মানুষকে পরিক্ষা করেণ তিনি। কিন্তু ক্ষণিকের মায়ামোহে পড়ে মানুষ ভুলে যায় মহান প্রতিপালককে যার কাছে প্রত্যেকটি মানুষ দিয়ে এসেছে তাঁর হুকুম পালনের প্রতিশ্রæতির ফিংগার প্রিন্ট। তাদের ক্বলবে যেনো জং ধরেছে। ফলে মহান রবের হুকুমের কাজগুলো থেকে দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে তারা। এমন এক সঙ্কটকালে উপনীত হয়ে কবির কলম থেকে বেরিয়ে এসেছে অমোঘ বানী-
মনে আমার জং ধরেছে যিকিরে তাই সুখ না পাই,
জীবন জুড়ে অন্ধ রব যদি খোদার নূর না পাই।
দুনিয়াবি মোহ-মায়া মনের উপর ফেলছে ছাপ,
সস্তা কিছু বস্তু পেতে প্রতিদিনই বাড়ছে পাপ ।
মায়াময় এ ধরায় মানুষ যখন বিপথগামী হয়ে মরিচা ধরিয়েছে অন্তরে, হাতড়ে বেড়াচ্ছে হতাশার আঁধারে আর অপ্রাপ্তির আত্মদহনে দিন দিন নিজেকে অদৃষ্টের উপর ছেড়ে দিয়ে জীবনের অশ্চিয়তায় ঝুঁকে পড়েছে, তখন বিপদগ্রস্ত মানুষদের উত্তরণের সহজ সমাধান দেখিয়েছেন তার কবিতার মাঝে। আত্মবিশ্বাসের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে কবি আহ্বান করে বলেন,
আল্লাহ পাকের রজ্জু ধর, পাক করে নাও দেহ-মন,
নইলে জীবন বৃথাই যাবে, কাঁদবে রুহ সারাক্ষণ ।

মানুষরূপী এই দ্বিপদী প্রাণী স্বার্থ হাসিলের জন্য বাহিরে লেবাসে ঢেকে ভেতরে পালন করে আসছে কাম-ক্রোধ-লোভ-লালসার কুচকুচে কালো দৈত্য। এ পশুটি যখন মনের গহীনে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখন তা নিজের জন্যও যেমন ধ্বংসের কারণ হয়, তেমনি সমাজও আক্রান্ত হয় অস্থিরতার বীজে। এক্ষেত্রে মানবীয় দিকগুলো উপেক্ষিত হয় বার বার। তাই তো কবি পাঠককে শুনিয়েছেন অপ্রিয় সত্যের উচ্চারণ-
আকৃতিতে মানুষ শুধু, মনের ভেতর পশুত্ব,
বাইরে দেখাই স্বাধীনচেতা ভেতর জুড়ে দাসত্ব।
কাম-লালসা দাস করে দেয়, অহংকারে অন্ধ,
কেউ জানেনা কার ভেতরে কাছে কত মন্দ ।
অযোগ্য ব্যক্তি কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলে তা যেমন দেশ, সমাজ ও তার আশপাশের লোকের জন্য কল্যাণকর হয় না, তেমনি তার নিজের জন্যও হয় বুমেরাং, হয়ে উঠে হাস্যরসের পাত্র, নষ্ট করে ফেলে তাঁর নিজের আমল। কবির ভাষায়-

অযোগ্য লোক চেয়ার পেলে লাভ হবে না আর কারও,
নিজে যেমন ভাঁড় সাজে, তার সবকিছু হয় ছারখারও।

প্রতিটি কবিতা অত্যন্ত সহজ, সরল, প্রাঞ্জল ভাষায় চমৎকার ছন্দে লেখা যা আমাদের কল্যাণকর কাজে উদ্বুদ্ধ করে, ভালো চিন্তা করতে শেখায় এবং পরিছন্ন বোধের জন্ম দেয়। তাই এই কবিতার বইটি প্রত্যেক বাঙ্গালীর ঘরে সংগ্রহে রাখার মতো একটি বই। এমনকি এই বইয়ের কবিতাগুলো ঘরে ঘরে টাঙ্গিয়ে রাখার মতো মূল্যবান লেখা। তার একটি উদাহরণ দেখুন,

ঘরে আমার দাও হে আল্লাহ, রহমত-বরকত,
শান্তি দিও সারাক্ষণই, আর দিও শান ও শওকত।
বদ-জ¦ীন আর বদ-ইনসানের আটকে দিও পথ,
ইবলিশের চোখ অন্ধ করুক তোমার রহমত।
ঘরের সবার অন্তরে দাও তোমার নূরের জ্যোতি,
তোমার কোনো সৃষ্টি দ্বারা হয়না যেনো ক্ষতি। (আমিন)

পরিবারই হলো শিশুর প্রথম শিক্ষা অর্জনের স্থান। যে পরিবারে বাবা-মা যতোবেশি আদর্শবান, মানবিক গুণসম্পন্ন হবে তাদের সন্তানও অনুরূপ আদর্শে বেড়ে ওঠবে। অপরদিকে, পরিবারে ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক শিক্ষা যদি থাকে উপেক্ষিত, তখনই প্রজন্ম উচ্ছন্নে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেকাংশে। পরিবার ও বিদ্যালয়ে অপরিহার্য নৈতিক শিক্ষার অভাবে যে লোমহর্ষক ঘটনার উদাহরণ দেখতে পাই, তা অত্যন্ত সযতনে তুলে ধরেছেন সচেতন কবি তার নিচের কবিতায়।

নৈতিকতার শিক্ষা যদি না-ই দিলে,
যাদের আল্লাহ-ভীতি নীতিজ্ঞান নাই দীলে:
তারা নেশা করে ঐশী হয়ে বাবা-মাকে করবে খুন,
ধর্ষণ এবং ব্যভিচারে অন্তরেতে ধরবে ঘুন।

“আকাশ হতে আসে আলো” ইসলামি তথ্যবহুল এ কবিতাটি অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে কবি ব্যবহার করেছেন তার কাব্যগ্রন্থের নামকরণে। মহান রব্বুল আল-আমীন মানুষের হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে নবী-রসুল প্রেরণ করেছেন পৃথিবীতে। তুর পাহাড়ে মুছা নবী,বেহেলহেমের ঈসা নবী কিংবা হেরাগুহায় আখেরী নবীর মাধ্যমে যে আসমানী-বানী মানুষের কাছে এসেছে তার মূল বার্তা একই-এক ¯্রষ্টার উপর বিশ^াস, দুনিয়াতে সৎকর্মের মাধ্যমে শান্তি স্থাপন এবং আখেরাতে কল্যান লাভ। কিন্ত কিছু কিছু মানুষের অন্তরাত্মা এতোটা আঁধারময় থাকে যে তাদের অন্তরে এ আলোটুকু যেনো পৌঁছে না। এই আঁধার থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে কবি সত্যকে উপস্থাপন করেন ঠিক এভাবেই-
অন্ধকারে ডুবে যায় পৃথিবী, পরে আকাশ হতে আসে আলো,
সূর্যের পিছনে সূর্য আছে, একই কেন্দ্র হতে নামে সব ভালো।
কখনো তুর পাহাড়, কখনো বেথেলহেম কিংবা হেরা গুহায় নামে,
সব আলোর একই বর্ণ একই রশ্মি তবু মানুষ ঢুকে অন্ধকার খামে।
বোধের দরজায় তালা মেরে অন্ধকারে দেয়ালে মাথা ঠুকে যারা,
এত আলো আসে তবু এতটুকু আলোকিত হয়নি আজও তারা।

পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবেই পরকালের বিচার সম্পর্কে বহুস্থানে উল্লেখ রয়েছে, যেমন, “আকাশ রাজ্য ও পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে সবই আল্লাহর। তোমরা তোমাদের মনের কথা প্রকাশ করো আর নাই করো আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের নিকট হইতে সে সম্পর্কে হিসাব গ্রহণ করিবেন। অতঃপর যাহাকে ইচ্ছা মাফ করিবেন, আর যাহাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন; ইহা তাহার এখতিয়ার, তিনি সর্বশক্তিমান (সূরা আল বাকারা, আয়াত-২৮৪)।” কবি পবিত্র কুরআনের এ সত্যবাণীকে ব্যতিক্রমী ব্যঞ্জনায় কবিতার মাঝে টেনে এনে একটি অকাট্য যুক্তি দাঁড় করিয়ে বলেছেন-
আল-কোরআনের কোনো বাণীর কেউ পারেনি ধরতে ভুল,
লিখতে এমন একটি আয়াত পারেনি এই সৃষ্টিকুল ।
সেই কোরআনই বলছে, আছে মরার পরে শাস্তি আর,
ভালো কাজের বিনিময়ে অনেক ভালো পুরস্কার ।
বিচার যদি না-ই হতো, দ্বন্দ্ব-বিভেদ থাকত না,
এই জগতের ভালো-মন্দ ¯্রষ্টা তবে রাখত না।

মহৎ মানুষগুলো বেঁচে থাকে তাঁদের আলোকিত কাজের মাঝে। প্রজন্মের জন্য কিছু করতে পারার সক্ষমতা সকলের থাকে না। ইসলামি মূল্যবোধে উজ্জ্বীবিত কবি এনামুল খাঁন সেই সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে গেলেন শাশ্বত এক কাব্যগ্রন্থ “ আকাশ হতে আসে আলো”। এই আলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ছড়িয়ে পড়বে গৃহ থেকে বিশ্বময়। যুগের পর যুগ তাকে অমর করে রাখবে এ শব্দসন্তান। ‘সাদাকাতুন জারিয়াহ’ হয়ে এ কাব্যগ্রন্থই নীরবে পূণ্য লাভের সয়ংক্রিয় সঞ্চয় বাড়াতে থাকুক তাঁর জীবদ্দশায় এমনকি তিরোধান লাভের পরও। বইটি ঘরে বসে যে কেউ দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে নিন্মোক্ত ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে সংগ্রহ করতে পারবেন।

মম প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা
পুরাতন জমিদার বাড়ী, সদর, সাতক্ষীরা, মোবাইলঃ ০১৭১৮০৭৬৮২৯
কালার বাড়ি, কোটালিপাড়া, গোপালগঞ্জ, মোবাইলঃ ০১৮২৫৬৩৩৯৭০
অন-লাইন:WWW. rokomari.com

WWW.fb.com/groups/enamulkhan/?ref=share

(আকাশ হতে আসে আলো পাঠক ফোরাম গ্রæপ)

বইয়ের ধার্যকৃত মূল্য ২৫০/- তবে উপরোক্ত মোবাইল নম্বরে সরাসরি যোগাযোগ করে ৪০% ছাড়ে যে কেউ সংগ্রহ করতে পারবেন অফসেট কাগজে ছাপানো ঝকঝকে বই ‘‘আকাশ হতে আসে আলো’’।

এম জাকির হোসাইন, প্রভাষক (ইংরেজি), কবি ও কথাসাহিত্যিক।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।