চলামান রাজনৈতিক সংকট দেশকে ভয়াবহ সংঘাতের দিতে নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, সরকার একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটছে। ভয়াবহ সংঘাতের মুখে নিপতিত দেশ। রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। জাতীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। আজ বিকালে রাজধানীর মিরপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত ‘নগর সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো না। আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্দলীয় জাতীয় সরকারের অধীনে করতে হবে। অতীতে এই সরকারের অধীনে দেশের যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার কোনোটিই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি।
সুতরাং এই সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব না।
তাই বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন চরমোনাই পীর। তিনি বলেন, আগামী ৭ই (অক্টোবর) শনিবার ঢাকায় বিশাল সমাবেশ, ১৩ই অক্টোবর বাদ জুমা দৈনিক বাংলার মোড়ে শ্রমিক সমাবেশ এবং ২০শে অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্র ও যুব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ বলেন, প্রশাসনের লোকেরা জনগণের কর্মচারী। আপনারা জনগণের অধিকার নষ্ট করবেন না। সংবিধান স্বীকৃত সভা-সমাবেশ করতে বাধা দেবেন না। সব ধরনের প্রশাসনিক হয়রানি বন্ধ করুন, তবেই জনগণ আপনাদের ভালোবাসবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম জনগণের নাগালে রাখার দাবি জানান তিনি।
এ সময় সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির প্রবর্তন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অবহেলা ও চরম অব্যবস্থাপনা নিরসন, দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীরা। নেতারা ভারতের সমালোচনা করে বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল সম্রাটদের মুসলিম শাসন আমলে কখনো হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেনি। অথচ বর্তমান ভারতে বিজেপি’র শাসন আমলে হাজার হাজার মুসলমানের উপর হামলা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের সমালোচনা করে নেতাকর্মীরা বলেন, ৬ জন বিচারপতি নিয়ে একটি বোর্ড গঠিত হয়েছিল। সেখানে তিনজন বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছিল আর তিনজন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছেন।
তখন যদি বিচারপতি খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে মত দিতো তাহলে আজকে এই অদ্ভুত পরিস্থিতি দেখতে হতো না। অতীতে যত নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন কিছুটা গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নেতারা বলেন, দেশে সংঘাত সৃষ্টি করতে যদি না চান তাহলে একটি জাতীয় সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত যে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব না। ১৪ এবং ১৮ সালের মতো নির্বাচন করার চেষ্টা করলে এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত নগর সমাবেশে হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন আব্দুল হক আজাদ, আমিনুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান, প্রফেসর আব্দুল সবুর প্রমুখ। এদিকে নগর সমাবেশকে কেন্দ্র করে আজ জুমার নামাজ শেষে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন দলটির হাজারো নেতাকর্মী।