জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে চরমোনাই পীর, ওলামাদের বিরুদ্ধে কঠিন ষড়যন্ত্র চলছে

দেশে ওলামাদের বিরুদ্ধে কঠিন ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শতকরা ৯২ জনের মতো মুসলিম বসবাস করে। এ দেশে বিগত দিনে ডাকাত পর্যন্ত ওলামাদের সম্মান করতেন। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে এখন ওলামাদের জেলে ঢুকাতে, আক্রমণ করতে, কটূক্তি করতে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত দ্বিধা করে না। এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়ে গেছে।

শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ’ আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ওলামা মাশায়েখ আইম্মাদেরকে উদ্দেশ্য করে চরমোনাই পীর বলেন, আপনারা যখন অসংখ্য ওলামা আজ রাজধানীতে একত্র হয়েছেন, তখন বাতিলদের ভয়ে কলিজা থরথর করে কাঁপছে। ওলামারা একত্র হলে বাতিলরা দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। ওদের কলিজার ভেতরে ভয়ের আগুন ধরিয়ে দিতে হবে। বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করতে হবে।

যদি আমরা ওলামারা একত্র হতে পারি, তাহলে বাতিল যতই শক্তিশালী হোক, দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, তামাম দুনিয়ার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখবো, স্পেনে যেখানে সাড়ে ৭০০ বছর পর্যন্ত মুসলিমরা রাজত্ব করেছিল। সেখানে এখন মুসলিম তালাশ করে বের করাও কঠিন। আমরা দেখি জুমার দিন মসজিদে মুসল্লির অভাব নেই। কিন্তু ওরা গোপনে গাছের নিচে থেকে শেকড় কাটছে। এক পর্যায়ে যখন কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে, গাছটি আস্তে ফেলে দিবে। এজন্য হক্কানী ওলামাদের একত্র হতে হবে। তিনি বলেন, আমরা ইসলামের পক্ষে, দেশের পক্ষে, মানবতার কল্যাণের জন্য পরামর্শভিত্তিক উদ্যোগ যদি গ্রহণ করতে পারি, তাহলে বিজয় আমরা অর্জন করতে পারবো।
ভয় নেই, চিন্তা নেই, যদি আমরা মোমিনের চরিত্র অর্জন করতে পারি। সম্মেলনে শায়খ জাকারিয়া (রহ:) ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, ওলামা মাশায়েখদের শক্তিশালী একটি সংগঠন থাকা দরকার। এই প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন হলো জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ। সমাজ নষ্ট হলে নবীওয়ালা সমস্ত কাজ ওলামাদেরকে করতে হবে। পরিপূর্ণ দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে বাধা আসলে তার মোকাবিলায় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সকল চক্রান্ত নস্যাৎ করার দায়িত্ব ওলামায়ে কেরামের। দেওনার পীর সাহেব অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। ভোট ও খাদ্যের সংকট নিয়ে সকলে চিন্তিত। সংকটের মূল কারণ কোরআন সুন্নাহ থেকে আমাদেরকে বের করে আনতে হবে। আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সম্পর্ক দূরত্বের কারণে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। নায়িকা- গায়িকারা যদি আইন প্রণয়ন করে তাহলে রাষ্ট্রের কল্যাণ হবে না। ড. আ ফ ম খালেদ হোসেন বলেন, আমাদের রিজার্ভ সাড়ে চার মাস চলবে তার পরে কি বাংলাদেশ অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে? এই মুহূর্তে আমাদের চোখ কান খোলা রেখে চলতে হবে। সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে আমরা হাতপাখাকে নির্বাচিত করতে ঘাম ঝরাবো। আর যদি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের চক্রান্ত হয় তবে ময়দানে নেমে তাজা রক্ত দিয়ে শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। খ্যাতিমান আলেম মুফতি ইয়াহইয়া মাহমুদ বলেন, যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখি পচা, দুর্নীতি ও আবর্জনা। এখন দেশের মানুষ যাবে কোথায়? সাধারণ মানুষকে আলেমদের সঙ্গে সংযুক্ত করছে চরমোনাই পীর সাহেবদ্বয়।

 

আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, জামিল মাদ্রাসা বগুড়ার মোহাদ্দিস মাওলানা আবদুল হক আজাদ, খুলনা দারুল উলূম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মোশতাক আহমদ, বরিশাল মাহমুদিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা ফরিদ উদ্দীন আল মোবারক, মাওলানা ড. বেলাল নূর আজিজী, মুফতি আবদুর রাজ্জাক কাসেমী, বাহাদুরের সাহেবজাদা হাফেজ হানজালা, মুফতি হেমায়েতুল্লাহ কাসেমী, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, মুফতি শামসুদ্দোহা আশরাফী। জাতীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিসহ ১৫ দফা দাবি জানিয়েছে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ। এ ছাড়া সম্মেলনে জাতীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিসহ ১৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবি আদায়ে আগামী তিন মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ। এরমধ্যে ১লা অক্টোবর থেকে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত দেশের প্রতিটি জেলা ও মহানগরে ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন ও সিরাতুন্নবী মাহফিল। ১লা নভেম্বর থেকে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত থানা উপজেলায় ইমাম, মুয়াজ্জিন ও ওলামা সম্মেলন। ডিসেম্বরে মাসব্যাপী সারা দেশে তাফসীরুল কোরআন মাহফিল ও গণকোরআন শিক্ষা কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে।

 

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।