সম্পাদক পরিষদের চিঠির জবাবে যা বললেন পিটার হাস

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগের বিষয়ে সাম্প্রতিক মন্তব্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে একটি চিঠি দিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। সেই চিঠির জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করার জন্য তার সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

সাংবাদিকদের অধিকার ও সংবাদমাধ্যমের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের বিষয়েও একই ধরনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। পিটার হাস বলেন, ‘এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ যেকোনো সরকারের সমালোচনামূলক মতামত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা আমাদের নীতির যেকোনো উপাদানে জনসাধারণের প্রতিফলনকে স্বাগত জানাই’।

সম্প্রতি দেশের একটি চ্যানেলে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের মন্তব্য ‘মিডিয়াও মার্কিন ভিসানীতির আওতায় আসতে পারে’ বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনামের চিঠির জবাবে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।

শনিবার সম্পাদক পরিষদ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব জানানো হয়। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম এতে স্বাক্ষর করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রচারিত সেই সাক্ষাতকারে পিটার হাস বলেছিলেন, আমরা ভিসানীতিটি ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে প্রয়োগ করছি। এটি সরকার, বিরোধী দল, আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ, মিডিয়ায় থাকা যে কারো বিরুদ্ধেই হতে পারে।  এই বছরের ২৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করে এবং ২২ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হয় যে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

২৭ সেপ্টেম্বর পিটার হাসের কাছে ই-মেইলে পাঠানো চিঠিতে মাহফুজ আনাম বলেন, মিডিয়ার ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে উল্লিখিত মন্তব্য নিয়ে তার মনে ও সম্পাদক পরিষদের সদস্যদের মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে বলেই তিনি লিখছেন। সত্যি বলতে, এই মন্তব্যটি আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে এবং তাই এর ব্যাখ্যার জন্য অনুরোধ করা হলো।

তিনি বলেন, মার্কিন সরকার ও রাষ্ট্রদূত ব্যক্তিগতভাবে সব সময় মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের বিষয়ে বলে এসেছেন, কিন্তু এই মন্তব্য তাদের বিরক্ত করেছে।

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের অ্যাকশন ছাড়া অন্য কিছুর ওপর ভিত্তি করে নয়’ উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম বলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞায় মিডিয়ার ‘অ্যাকশনের’ ক্ষেত্রে সাংবাদিক যা লিখছেন বা সম্প্রচার করছেন তার ওপর ভিত্তি করে হবে কিনা।

তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন ‘যদি তাই হয়, তাহলে এটা কি ‘বাকস্বাধীনতা’ ও ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতার’ আওতায় আসে না? মিডিয়ার ক্ষেত্রে এটি কীভাবে ব্যবহার করা হবে? কী কারণ বিবেচনা করা হচ্ছে?’ তিনি তার চিঠিতে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

মাহফুজ আনাম আরও বলেন, মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী সর্বদা তার ব্যক্তিগতভাবে এবং বাংলাদেশের মিডিয়ার জন্য অনুপ্রেরণা এবং অনুকরণের উৎস হিসেবে কাজ করেছে। সেক্ষেত্রে মিডিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হলে ভিসানীতি বাস্তবায়নে প্রথম সংশোধনীর মানগুলো কীভাবে প্রতিফলিত হবে।

জবাবে পিটার হাস লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। যারা এর বিরুদ্ধে কথা বলবে এবং যারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করতে চায় তাদের জন্য মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ করবে। তিনি স্টেট সেক্রেটারি অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে উল্লেখ করে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব প্রত্যেকের- ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং মিডিয়ার।

হাস বলেন, ‘সবাই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিকে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালন করার অনুমতি দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেনের বিবৃতিটি স্পষ্ট যে, নীতিটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে বিশ্বাস করা যেকোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। ’

পিটার হাস যোগ করে বলেন, এর মধ্যে যে কেউ মিডিয়াকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা নেয় তারাও অন্তর্ভুক্ত।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।