৩০ বছরে নির্মাণ হয়নি আশাশুনির ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ

আশাশুনি: দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে বাঁধ না থাকলেও নির্মাণ হয়নি আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট এলাকার ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ। খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি আটকানো হচ্ছে মৎস্য ঘেরের সরু রিং বাঁধ দিয়ে। স্থানীয়রা জানান, আশাশুনি উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দুরে দয়ারঘাট গ্রামের নিমাই মন্ডলের বাড়ি থেকে বলাবাড়িয়া গ্রামের সুনীল মন্ডলের বাড়ি পর্যন্ত ৬৫০ মিটার খোলপেটুয়া নদীর কোন বেড়িবাঁধ নেই। সেখানে রিংবাঁধের উপর ভর করে রয়েছে স্রোতস্বিনী খোলপেটুয়া নদী। ১৯৯৫ সালে বলাবাড়িয়া ও দয়ারঘাট গ্রামের মাঝামাঝি ৬ ব্যান্ড স্লুইচ গেট সংলগ্ন এলাকায় স্রোতস্বিনী খোলপেটুয়া নদীর বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে উপজেলা সদর, পার্শ্ববর্তী শ্রীউলা ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে বসতবাড়ীসহ শত শত মৎস্য ঘের ভেসে যায়। সে সময় জোয়ার ভাটার কারণে স্লুইচগেট সংলগ্ন এলাকায় গভীর খালের সৃষ্টি হয়। এরপর এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি ঘুরে রিং বাঁধের মাধ্যমে জোয়ারের পানি আটকে দেওয়া হয়। এর প্রায় ১০ বছর পর ২০০৫ সালে মূল বাঁধ থেকে সরে চুক্তির ভিত্তিতে ক্লোজার চাপান দিয়ে ঐ ২ হাজার বিঘা জমিতে মৎস্য চাষ শুরু করেন খুলনার জনৈক ব্যবসায়ী আব্দুল হাই বাহার। তৎকালীন তার মৎস্য ঘেরের বাঁধটিই অদ্যবধি পর্যন্ত ওয়াপদা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরপর সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠার আগে আবারো ২০২০ সালে আম্পানে উক্ত এলাকায় রিং বাধের ৪টি পয়েন্টে ভেঙ্গে ও সেই নিচু রিংবাঁধ ছাপিয়ে জোয়ারের পানিতে বসতবাড়ীসহ শতাধিক মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়। এক মাস ধরে বলাবাড়িয়া থেকে আশাশুনি সদরে যাতায়াত দুরহ হয়ে পড়ে। সেই সময় কোন রেড়ীবাঁধ না থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল, রোগী, নারী-শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের যাতায়াতে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এর পরেও অধ্যবধি পর্যন্ত সেখানে কোন বেড়ীবাঁধ নির্মাণ হয়নি। স্কুল শিক্ষক বিকাশ মন্ডল বলেন, এখানে ৬৫০ মিটার মৎস্য ঘেরের বাঁধের রাস্তা স্থানীয় জনগনের ব্যক্তিগত জমির উপর দিয়ে হওয়ায় ১৯৯৫ সাল থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত বলাবাড়িয়া গ্রামে যাতায়তের জন্য কোন সরকারি রাস্তা নির্মান করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আশাশুনি সদর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দুরের গ্রাম বলাবাড়িয়ায় যাতায়াতের কোন সরকারি রাস্তা বা ইটের সোলিংও নেই এটা দুঃখজনক। স্থানীয় সাংবাদিক সমীর রায় বলেন, বর্ষা মৌসুমে কাদাপানিতে এ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। অথচ আমাদের গ্রামসহ আশেপাশে যত গ্রাম আছে সব গ্রামেই চিংড়ী চাষ হয়ে থাকে। কোটি কোটি টাকার চিংড়ী রপ্তানি হয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে চললেও এ এলাকার মানুষের ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হয়নি। তিনি আরও জানান, ভালো রাস্তা না থাকার কারণে এ গ্রামে তিন চাকার ভ্যান এমনকি এ্যাম্বুলেন্সও ঢুকতে পারেনা। এ গ্রামের যাদের মোটরসাইকেল আছে বর্ষা মৌসমে সেগুলোকে পার্শ্ববর্তী কোন আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসতে হয়। এ এলাকার ছেলে মেয়েরা বর্ষার কাদাপানিতে ভিজেপড়ে তাদের লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই তারা বছরের পর বছর পার করে যাচ্ছেন। আশাশুনি সদর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম হোসেনুজ্জামান বলেন, জমি জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন বেড়ীবাঁধ নির্মান সম্ভব হয়নি। এলাকাবাসীর প্রাণের দাবির কারণে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক স্যারের তৎপরতায় গত কিছুদিন আগে জাইকা দয়ারঘাট-বলাবাড়িয়া এলাকায় নির্দিষ্ট সীমানায় ৫৫০ মিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধের মাপজরিপ সম্পূর্ন করেছেন। এটি আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে টেন্ডার হবে বলে আশা করছি। এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান বলেন, দয়ারঘাট থেকে বলাবাড়িয়া বেড়িবাঁধের বিষয়টা ইতিমধ্যে জেনেছি। সরেজমিনে গিয়ে বিস্তারিত জানাবেন বলে এই কর্মকর্তা জানান

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।