দেবহাটায় পানিফল জনপ্রিয় হয়ে চাষীদের ভাগ্য খুললো

প্রতিনিধি দেবহাটা সাতক্ষীরা :

পানিফল সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এর ইংরেজি নাম ওয়াটার চেসনাট এবং বৈজ্ঞানিক নাম ট্রাপা বিসপিনোসা। পানিফলের আদিনিবাস ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা হলেও এটি প্রথম দেখা যায় উত্তর আমেরিকায়।
পানিফল বা পানি সিংড়ার চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে। কম খরচে এই ফল চাষ করে বেশি দামে বিক্রি করতে পারার সুযোগ থাকায় এই ফল চাষের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা। প্রতিবছর যে পরিমাণ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তার চেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের হিসাবে দেখা যায়, গতবছর পানিফল চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৮ থেকে ২০ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ২০ থেকে ২২ হেক্টর জমিতে। বিগত বছরের তুলনায় জেলার সব উপজেলার পাশাপাশি দেবহাটা উপজেলার সখিপুর, গাজিরহাট, কামটা, কোঁড়া, দেবহাটা, পারুলিয়া, কুলিয়া, বহেরাসহ বিভিন্ন এলাকায় চাষ করা হয়েছে। এ চাষ ফসল চাষের জমি, ডোবা, খানা, মৎস্য ঘেরে সুবিধাজনক। সামান্য লবণাক্ত ও মিষ্টি পানিতে চাষ করার সুযোগ থাকায় দিনে দিনে চাষের পরিধি বেড়ে চলেছে। তাছাড়া পানিফলের গাছ দেখতে কচুড়িপানার মত পানির উপরে ভেসে থাকে, পাতার গোড়া থেকে শিকড়ের মত ডগা বের হয়ে বংশ বিস্তার করে এবং তা থেকে ফল ধারণ করে। পানিফল চাষে খুব বেশি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না, সার ও কীটনাশকের পরিমাণ কম লাগে।
উপজেলার পানিফল চাষি মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, অল্প জমিতে পানিফল চাষ করছি। ভালো ফলন হলে আগামিতে আরও বেশি জমিতে এ চাষ করবো।চাষিরা আরও বলেন, পানিফল মৌসুমি ও অঞ্চলভিত্তিক হওয়ায় আমরা সঠিক মূল্য ও বাজার তৈরি করতে পারিনি। আমরা মনে করি, এটি দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মৌসুমি ফল বাণিজ্যিক হিসাবে ব্যাপক চাষের পাশপাশি মার্কেট তৈরি হবে।
পানিফল ব্যবসায়ী অহিদুজ্জামান জানান, চাষের মৌসুম আসার আগে তিনি ১৫ জন চাষিদের মাঝে অর্থ বিনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে ফলন আসার পরে বাজার দর অনুযায়ী উৎপাদিত ফসল ক্রয় করেন। এভাবে ৭ থেকে ৮ বছর তিনি পানিফল ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। প্রতিদিন তিনি ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, চিটাগাং, সিলেট, রাজশাহী, বেনাপোল, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ফল রপ্তানি করেন। বর্তমান জেলার বাইরের বাজারে ৭০০- ৮০০ টাকা মণ দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। তাছাড়া স্থানীয় বাজারে বর্তমানে খুবই কম দরে পানিফল পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, পানিফল চাষ এখনও কৃষি ফসলের আওতায় ধরা হয়নি। তবে মৌসুমি ফল হিসাবে গণ্য হচ্ছে। একদিকে কম খরচ অন্যদিকে অল্প পরিশ্রমে বেশ লাভবান হওয়ায় চহিদা বেড়েছে পানিফল চাষিদের’।বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় পানিফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। পানিফল একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। জলাশয় ও বিল-ঝিলে এ ফলটি জন্মে। এর শেকড় থাকে পানির নিচে মাটিতে এবং পাতা পানির উপর ভাসতে থাকে। এক একটি গাছ প্রায় পাঁচ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানিফলের আরেক নাম ‘সিংড়া’।
এ ফল চাষ শুরু হয় ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। পানিফল কচি অবস্থায় লাল, পরে সবুজ এবং পরিপক্ক হলে কালো রং ধারণ করে। ফলটির পুরু নরম খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিন্ডাকার বা ত্রিভুজাকৃতির নরম সাদা শাঁস। কাঁচা ফলের নরম শাঁস খেতে বেশ সুস্বাদু। প্রতি ১০০ গ্রাম পানিফলে ৮৪.৯ গ্রাম পানি, ০.৯ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ২.৫ গ্রাম আমিষ, ০.৯ গ্রাম চর্বি, ১১.৭ গ্রাম শরকরা, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৮ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.১১ মিলি গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ ও ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
দেবহাটা উপজেলা ছাড়াও সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া, কালিগঞ্জ, আশাশুনি, সদরের আংশিক ও শ্যামনগর উপজেলায় জলাবদ্ধ এলাকার চাষিরা পানিফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। ফলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ ফলের চাষ। সেই সঙ্গে বাড়ছে ফলটির জনপ্রিয়তা।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।