পাল্টে যাচ্ছে সাতক্ষীরার মানচিত্র

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা: বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা নির্ধারণী নদী ইছামতীতে ভাঙ্গন চলছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ অংশের কয়েক হাজার বিঘা জমি বিলীন হয়ে গেছে। অন্যদিকে ভারতীয় অংশে জেগে ওঠা চরে গড়ে উঠেছে হোটেল-পার্কসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রবল জোয়ারের তোড়ে ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধের প্রায় ১৫০ মিটার এলাকাজুড়ে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সাতক্ষীরার সীমান্তনদী ইছামতীর ভাঙনের কারণে বাংলাদেশের দিকে বাঁক সরে আসছে। পাল্টে যাচ্ছে দেবহাটা উপজেলার মানচিত্র। বাংলাদেশের দেবহাটা উপজেলার বিপরীতে ভারতের টাকী এলাকায় ইছামতী নদীর তীরে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ওই এলাকার ভাঙন রোধে গাছ লাগানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার দক্ষিণ সীমান্তদিয়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদী। সদর উপজেলার হাড়দ্দহা থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুর এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার পানিতর এলাকা থেকে হিঙ্গলগঞ্জ পর্যন্তবাংলাদেশ ও ভারতকে বিভক্ত করেছে ইছামতী নদী। দীর্ঘদিন ধরে নদীর বাংলাদেশ অংশের ছয়টি স্থানে ভাঙছে। ইতিমধ্যে দেবহাটা উপজেলার দেবহাটা, খানজিয়া, রাজনগর, ভাতশালা ও কোমরপুর গ্রামের কয়েক হাজার বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব গ্রামের বিপরীতে ভারতের অংশে চর জেগে উঠছে।নদীভাঙনে ইছামতীর তীরবর্তী দেবহাটা এলাকার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি, কবরস্থানসহ জমিজমা হারাচ্ছেন। এর মধ্যে ইছামতী নদীর বাংলাদেশ অংশ থেকে বালু উত্তোলন করছে একটি মহল। এতে ভাঙন দ্রæত বাড়ছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। এ ঘটনায় উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে তাঁরা একটি অভিযোগ দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইয়ানুর রহমান বলেছেন, তিনি মাত্র দুই মাস হলো এসেছেন। দেবহাটার কয়েকটি এলাকায় ভাঙন রয়েছে। ভাঙন রোধে গাছ লাগানোসহ টেকসই বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তিনি জানাবেন। তিনি বলেন, একটি মহল নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ভাঙন বেশি হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসক বরাবর এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের বিষয়টি তিনি তদন্তকরছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দেবহাটা উপজেলার খানজিয়া, রাজনগর, ভাতশালা ও কোমরপুর গ্রামের নদীতীরবর্তী এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। বিপরীতে নদীর ভারতীয় অংশে ইটভাটা, হোটেল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এ ছাড়া ইছামতী নদীর বাংলাদেশ অংশে দেবহাটা ও টাউন শ্রীপুর এলাকায় বালু তুলতেও দেখা যায়। দেবহাটার সুশীলগাতি গ্রামের কৃষক গোলাম বারী বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে ইছামতী নদীতে ভাঙন চলছে। দেবহাটার ভাতশালা থেকে কালীগঞ্জের খারহাট পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এলাকার ৮ থেকে ১০ জায়গায় ভাঙন অব্যাহত আছে। বিপরীতে ভারতের অংশে চর জেগে উঠছে।

ভাঙন রোধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নদীর পাশে শতাধিক ইটভাটা তৈরি করেছে। পাশাপাশি নদীর পাড় ঢালাই করে সুরক্ষা করা হয়েছে। নদী দিনকে দিন বাংলাদেশের দিকে সরে আসছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কালীগঞ্জের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে নদী থেকে বালু তোলায় ভাঙন ত্বরান্বিত হচ্ছে। সুশীলগাতি এলাকার জাহরুল বলেন, খানজিয়া, রাজনগর, ভাতশালা ও কোমরপুর এলাকায় মূলত ভাঙছে। রাজনগর মৌজার অধিকাংশ জমি নদীতে চলে গেছে। ভারতের অংশে রাজনগর নামে গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে। ভাতশালা গ্রামের আবদুল হাই (৬৮) বলে, নদীভাঙনে দেবহাটা উপজেলার মানচিত্র সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ভাঙতে ভাঙতে নদী বাংলাদেশের দিকে সরে আসছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান বলেন, নদীভাঙনে দেবহাটার শিবনগর মৌজার পাশে রাজনগর মৌজা এখন আর নেই। এভাবে চলতে থাকলে ১০ বছরের মধ্যে দেবহাটা উপজেলার বড় অংশ হারিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেই মূলত ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধটি ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। আট-নয় মাস আগে প্রথম পর্যায়ে ভাঙন শুরু হলে তাদের বিষয়টি জানানো হয়। পরবর্তী সময়ে আরো একাধিকবার ভাঙন মেরামতের জন্য তাগিদ দিলেও এখন পর্যন্তকোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে বেড়িবাঁধের ভাঙন ও ফাটল মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিভাগ-১) সাতক্ষীরা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন, কালীগঞ্জের খারহাট থেকে বসন্তপুর ও দেবহাটার টাউন শ্রীপুর থেকে ভাতশালা পর্যন্তছয়-সাত কিলোমিটার এলাকায় ইছামতী নদীতে ভাঙন চলছে। আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী নদীর মাঝ বরাবর সীমানা নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসেবে নদী বাংলাদেশের দিকে সরে আসছে। কী পরিমাণ ভূখন্ড বা জমি বাংলাদেশ হারিয়েছে জানতে চাইলে মো. সালাউদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্তের পর মাপ-জরিপ না করলে বলা যাবে না। তিনি বলেন, স্থায়ী বাঁধ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়। সীমান্তনদী তীর সংরক্ষণ নামে দেশের অন্য জায়গায় একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপ এখানে জরুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে ভাঙন রোধ করা যাবে।

Check Also

সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।