তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকায় আজ শনিবার মহাসমাবেশ করবে জামায়াতে ইসলামী। মহাসমাবেশের সংবাদ সংগ্রহের জন্য গতকাল শুক্রবার রাতে দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মহাসমাবেশ সফল করতে ব্যাপক সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। এই কর্মসূচি ‘নির্বিঘ্ন’ ও ‘শান্তিপূর্ণ’ করতে কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবকও ঠিক করা হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী বলেছে, তারা ঘোষিত কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে করবে। তবে পুলিশ জামায়াতকে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার কথা জানায়নি। দুই দিন ধরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, জামায়াতকে ঢাকায় সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু গতকাল রাত সাড়ে আটটার পর থেকে এ বিষয়ে কেউ আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা মহাসমাবেশের মৌখিক অনুমতি পেয়েছেন। এ বিষয়ে গত রাতে দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করার ব্যাপারে মন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন। মন্ত্রী তাঁদের ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। তবে ডিএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মৌখিক অনুমতি দেওয়ার কথা স্বীকার করেননি। তাঁরা এ বিষয়ে উদ্ধৃত হয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
আজ ২৮ অক্টোবর বিএনপি রাজধানীর নয়াপল্টনে, আওয়ামী লীগ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে এবং জামায়াতে ইসলামী শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের কর্মসূচি দেয়। গতকাল রাতে ডিএমপি আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে নিজ নিজ জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। কিন্তু জামায়াতের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে জামায়াত জানিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, দলের আমিরসহ নেতা-কর্মী এবং আলেমদের মুক্তি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এই মহাসমাবেশ কর্মসূচি দেওয়া হয়। যদিও ২৮ অক্টোবর জামায়াতের মহাসমাবেশ ডাকার আরেকটি উপলক্ষ আছে। সেটি হলো, ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা। জামায়াতের দাবি, সেদিন ‘লগি-বইঠার’ হামলায় তাদের ১৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন এবং সহস্রাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে জামায়াত প্রতিবছর ২৮ অক্টোবর স্মরণসভা করে। এবার দলটি ওই দিনে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।
সর্বশেষ গত ১০ জুন পুলিশের মৌখিক অনুমতি পেয়ে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সমাবেশ করেছিল জামায়াত। এরপর তাদের আর কোথাও সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েও অনুমতি না পাওয়ায় তা করতে পারেনি দলটি। তবে পুলিশের অনুমতি ছাড়া সম্প্রতি জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে তারা।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই মহাসমাবেশ করব। আশা করি, প্রশাসন বা সরকার সমাবেশে কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি করবে না। এটাই জাতির প্রত্যাশা। কারণ, এটা আমাদের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার।’
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ বানিয়ে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। শাপলা চত্বর বা এর আশপাশের এলাকায় এই সমাবেশ করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে এর সবকিছুই নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর। এ জন্য তারা সকালে কিছুটা সময় পরিস্থিতি দেখবে, এরপর রাস্তায় নামবে।https://www.prothomalo.com/