গার্মেন্টে ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান ও শ্রমিক নিহতের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ

সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও জোট। ১২ হাজার ৫০০ টাকার বদলে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছেন তারা। আন্দোলনে তিন শ্রমিক নিহত হওয়ার দাবি করে বিচার চেয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এসব সংগঠন ও জোটের নেতারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। তোপখানা সড়কের কদম ফোয়ারা অংশ থেকে পুরানা পল্টন মোড় ঘুরে যায় বিক্ষোভ মিছিলটি।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে পল্টন মোড়ের দিক থেকে প্রথমে মিছিল নিয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে আসে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট। পরে সংগঠনটি প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করে।

সমাবেশে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের নেতারা বলেন, শ্রমিকেরা ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা প্রত্যাখ্যান করেছেন। অবিলম্বে সর্বনিম্ন মজুরি ২৩ হাজার টাকা ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়। এতে শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি খালেকুজ্জামান লিপন ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বেলা ১১টার দিকে পুরানা পল্টন থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আসে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশন নামের একটি সংগঠন। তারাও ১২ হাজার ৫০০ টাকার ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে। এ সমাবেশে সংগঠনের নেতা তোফাজ্জল হোসেনের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত।

অন্যদিকে শ্রমিক ফেডারেশনের দাবি শ্রমিকদের মজুরি ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা বলেন, শ্রমিকেরা ন্যায্যভাবে যখন মজুরির জন্য আন্দোলন করছেন, তখন সরকার মালিকদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের ওপর গুলি চালাচ্ছে।

ফেডারেশনের নেতারা আন্দোলনে নিহত তিন শ্রমিকের কথা উল্লেখ করে বিচার চান। নিহত তিনজন হলেন—শ্রমিক আঞ্জুয়ারা, রাসেল ও ইমরান।

বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রেস ক্লাব সংলগ্ন ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে সমাবেশের জন্য দাঁড়ান ১১টি শ্রমিক সংগঠনের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের নেতারা। আগের দুটি সংগঠন সমাবেশ শেষ করলে তারা প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে সমাবেশ শুরু করেন।

আন্দোলনে নিহত তিন শ্রমিকের কথা উল্লেখ করে তারা বিচার দাবি করেন। এ ছাড়া সবশেষ নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান, ১৩/১–এর ধারা বন্ধ করে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ এবং অবিলম্বে মজুরি পুনর্বিবেচনা করে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে জোটের সমন্বয়ক তাসলিমা আক্তার বলেন, সরকার যে মজুরি ঘোষণা করেছে, তা আমাদের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে না। আমরা যে মজুরি দাবি করেছি, সেই মজুরির ধারেকাছেও সেই প্রস্তাবনা নেই। সরকার ও মজুরি বোর্ড বলছে ৫৬ ভাগ মজুরি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ধরলে ৩৯ ভাগ হয়। এর থেকেও কমে আসে মুদ্রাস্ফীতি হিসাব করলে।

পেঁয়াজ ও আলুর দাম যে জায়গায় পৌঁছেছে, ১২ হাজার ৫০০ টাকায় শ্রমিকদের পক্ষে কোনোভাবেই বেঁচে থাকা সম্ভব নয় বলে জানান তাসলিমা আক্তার। তাই এই ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা তারা প্রত্যাখ্যান করেন। মজুরি পুনর্বিবেচনা করে শ্রমিকদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

সমাবেশে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ, শ্রমিক নেতা সাদেকুর রহমান, মাসুদ রেজা, শবনম হাফিজ, বিপ্লব ভট্টাচার্য ও তফাজ্জল হোসেন প্রমুখ।

সমাবেশ চলাকালে গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের জোটভুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ধাপে ধাপে পল্টনের দিক থেকে মিছিল নিয়ে প্রেস ক্লাবে এসে সমাবেশে যুক্ত হন। এসব সংগঠনের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলন, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি।

সমাবেশ চলাকালে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী ও শ্রমিকদের ভিড়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে যান চলাচল সীমিত হয়ে যায়। পরে পুলিশ সদস্যরা সমাবেশকারী ব্যক্তিদের ফুটপাতের দিকে সরিয়ে যান চলাচলের জন্য রাস্তা করে দেন।

Please follow and like us:

Check Also

সাতক্ষীরাসহ দেশের ৪২ জেলায় বইছে মৃদু তাপপ্রবাহ

দেশের ৪২ জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা আরও বিস্তৃত হতে পারে বলে জানিয়েছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।