নির্বাচন সামনে রেখে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবাধিকার পরিস্থিতির দ্রুত অবনতির কারণে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে জবাবদিহি চাইতে বলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল শনিবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে এমন বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
আগামীকাল জেনেভায় জাতিসংঘে মানবাধিকার সংস্থার চতুর্থ সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনা (ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউ-ইউপিআর) শুরু হবে। বাংলাদেশকে জবাবদিহির আওতায় আনতে এ পর্যালোচনাকে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোকে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে, বলেছে অ্যামনেস্টি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক উপ–আঞ্চলিক পরিচালক লিভিয়া স্যাকার্দি বলেন, ‘চতুর্থ ইউপিআর এমন সময়ে হচ্ছে, যখন নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে মানবাধিকার, প্রতিষ্ঠান, বিরোধী নেতা, স্বাধীন গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ বাধার মুখে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে ইউপিআর পর্যালোচনার সুযোগ কাজে লাগিয়ে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলো বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি যাচাই, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের জন্য দেশটির সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে পারবে।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ ইউনাইটেড ন্যাশনস হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) ইউপিআর প্রতি চার বছরে একবার জাতিসংঘের সব সদস্যদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার সুযোগ করে দেয়।
অ্যামনেস্টি বলছে, ২০১৮ সালের মে মাসে হওয়া সর্বশেষ ইউপিআরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে যেসব সুপারিশ করা হয়, বাংলাদেশ সরকার তা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে দেশটিতে ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন আইনের সংস্কার এবং অনেক আইন ব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেছে।
অ্যামনেস্টি আরও বলেছে, নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এ আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কঠোর বিধিগুলো রাখা হয়েছে। অ্যামনেস্টি বলেছে, বাংলাদেশ সরকারকে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে হবে। একই সঙ্গে এই আইনের লক্ষ্যবস্তু যেন মানবাধিকারকর্মী, সরকারের সমালোচক ও ভিন্নমতাবলম্বী না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, আগামী জানুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মতো মানবাধিকার চর্চার জন্য যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
বিবৃতিতে লিভিয়া স্যাকার্দি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থবহ আলোচনায় যুক্ত হতে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অতীতে তারা যেসব সুপারিশ করেছে, তার কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা যাচাই ও দেশটিতে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোকে নতুন করে আরও সুস্পষ্ট সুপারিশ করার আহ্বানও জানাচ্ছি আমরা।’